বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে মতভেদের জেরে গত সপ্তাহের আগে কয়েক সপ্তাহ শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতনে ছিল। বিএসইসির নানা উদ্যোগে গত সপ্তাহে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশা জাগছে। যার ফলশ্রুতিতে বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন ফিরেছে চার হাজার কোটি টাকার উপরে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনা সংকট কাটিয়ে চলতি বছর কয়েকবার বড় ধরনের পতনের মুখে পড়ে শেয়ারবাজার। তবে আগস্টের পর বাজারে তুলনামূলক উত্থান হয়েছে। কিন্তু নভেম্বরে এসে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে মতভেদের কারণে বাজার ফের পতনের মুখে পড়ে। টানা পতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীদের মতিঝিলের সড়কে মানববন্ধনের মতো নেতিবাচক কর্মসূচিও পালন করতে দেখা যায়।
এরপর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সীমা, এক্সপোজার লিমিট, বন্ডে বিনিয়োগ ইত্যাদি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসি। কিন্তু বৈঠকে ইতিবাচক কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বৈঠকে বসে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। সেই বৈঠকেও দৃশ্যমান কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এরফলে বাজারে গতিহীনতা দেখা দেয়।।
এদিকে গত ১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। সাক্ষাৎশেষে তিনি জানান, শেয়ারবাজারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। কোন বাধার কারণে শেয়ারবাজার তার নিজস্ব গতিতে যেতে পারছে না, সে বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। এসব খবরে আশা জেগেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে করোনা পরিস্থিতিতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে প্রধান করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পুনর্গঠনের পর থেকে শেয়ারবাজারে পরিবর্তন শুরু হলেও চলতি বছরের শেষদিকে এসে বড় ধাক্কা খায়।
প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়। ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগসীমার বাইরে গিয়ে আলাদা তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়। এতে বাজার চাঙ্গা হয়ে প্রথমবারের মতো ৭ হাজার পয়েন্টের সীমা অতিক্রম করে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপে শেয়ারবাজারে তারল্য কমে যায়। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমার মধ্যে রয়েছে কি না, সে বিষয়টিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। পাশাপাশি প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া, ব্যাংকগুলোকে বাজারমূল্যে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করে দেয়। যাতে কেনার শেয়ারের মূল্য বেড়ে গিয়ে নির্ধারিতসীমা অতিক্রম করলেই জরিমানার মুখে পড়তে হয় ব্যাংকগুলোকে।
এ ছাড়া ব্যাংকগুলো বন্ডের বিনিয়োগও বিনিয়োগসীমার মধ্যেই হিসাবে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছেও প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সব ঘটনায় বাজারে অযাচিত বিক্রির চাপ তৈরি হয়। আটকে যায় নতুন বিনিয়োগও।
এই অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পাশাপাশি বড় বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। ফলে শুরু হয় ধসের মতো পরিস্থিতি। এসব পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফের বৈঠকের পরিকল্পনাও নেয় বিএসইসি। এরফলে গত সপ্তাহের লেনদেনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বিদায়ী সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের লেনদেনে ডিএসইতে চার হাজার কোটি টাকার মূলধন বেড়েছে। সপ্তাহের প্রথম দিন ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৫২ হাজার ৮৪০ কোটি ৬২ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯১ টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৯০ কোটি ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯০ টাকা। সপ্তাহে ডিএসইতে পাঁচ হাজার ৩০৯ কোটি ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৭৯ টাকার লেনদেন হয়েছে।
আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩৯ কোটি ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪০ টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বাড়ে ২৬৯ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৩৯ টাকা।
সপ্তাহের পাঁচ দিনের লেনদেনে ডিএসইতে চারদিন সূচক বেড়েছে। পক্ষান্তরে কমেছে এক দিন। চার দিনে সূচক বেড়েছে ১৫৪ পয়েন্ট। এক দিনে কমেছে ৯৬ পয়েন্ট।