ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত গুজব নিয়ন্ত্রণে ‘সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
একটি মহল কারসাজির লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে বাজার কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ায়। সেটি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে ব্যাপক ভাবে প্রচার করা হয়। গুজবের সত্যতা নিশ্চিত না হয়ে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দেন। ফলে গুজবে ও আতঙ্কে ঊর্ধমুখী পুঁজিবাজার এক ঘণ্টার ব্যবধানে ব্যাপক নিম্নমুখী অবস্থানে চলে আসে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ‘সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসি’র মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের (এমএসআইডি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে এ ‘সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ মনিটরিং সেলের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিএসইসি’র অভিজ্ঞ ও চৌকস কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। শিগগিরই এ সেলের কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এদিকে পুঁজিবাজারে গুজব নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। ইতোমধ্যে বিএসইসির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১টি গুজব সৃষ্টিকারী ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গুজব সৃষ্টিকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সকল আইডির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যে কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্য বা অন্য কোনো বিষয়ে পূর্বানুমান কিংবা বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ক্ষুন্ন করে এমন মন্তব্য বা পোস্ট প্রতিরোধে গুরুত্বারোপ করবে এ মনিটরিং সেল। এছাড়া পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যে কোনো ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গ বা কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সোস্যাল মিডিয়া বা অন্য কোনো মাধ্যমে বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসই’র নাম বা লোগো ব্যবহার করে কোন তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ করার বিষয়টি চিহ্নিত করতে এ সেল কাজ করবে।
এদিকে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব রটনাকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে বিএসইসি চলতি বছরের ২৪ মে বিএসইসি’র পরিচালক রাজিব আহমেদের নেতৃত্বে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে, ডিএসই ইনভেস্টরস ক্লাব, উই ওয়ান্ট টু বি গেইনার, দ্য থার্ড আই,পুঁজিবাজার- ডিএসই ইনভেস্টরস ক্লাব, পাবলিক বিজনেস ক্লাব, শেয়ার মার্কেট সুপারস্টার গ্রুপ, দ্য লয়াল ক্লাব, পুঁজিবাজারে আড্ডা, রাকিব প্রফিট অ্যান্ড জয়, পুঁজিবাজার জিন্দাবাদ, স্টক মার্কেট টুডে, বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জোট, রকস্টার ক্লাব, রয়্যাল কিং মানি মেকারস, বাদশা জোন ইত্যাদি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন শেয়ারের বাজার মূল্যকে কৃত্রিমভাবে প্রভাবিত করছে বলে তদন্তে উঠে আসে। এরই ধারাবহিকতায় ৩১টি গুজব সৃষ্টিকারী ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতেই ‘সোসাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ গঠন করা হচ্ছে। গুজবের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ সকলের ক্ষতি হয়। এর জন্য বিএসইসি আরো কঠোর হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আামি লক্ষ্য করেছি, আমার ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক পেজ থেকে বিভিন্ন শেয়ার কেনাবেচার তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের গুজব নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে বিএসইসি সচেষ্ট রয়েছে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা পুঁজিবাজারে গুজব নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেব। আমরা কিছু দিন আগেও এ ধরনের বিষয়কে কেন্দ্র করে বিটিআরসিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় ৩১টি গুজব সৃষ্টিকারী ফেসবুক আইডিকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’