রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কোনোভাবেই খেলাপি ঋণ কমাতে পারছে না। বরং, কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বেড়েছে।
গত আগস্ট শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের মোট স্থিতি ছিল ৪৩ হাজার ৬২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর আগে জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪২ হাজার ২৬৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৩৫৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু অগ্রণী ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সরকারের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে বলা হয়েছে। সে হিসাবে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বর্তমানে ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বেশি।
এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মূলত অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ায় সার্বিকভাবে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এছাড়া, জনতা ও সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে, কিছুটা কমেছে রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের স্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সূত্র জানায়, গত আগস্ট শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৯৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। জুন শেষে তা ছিল ১০ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৭২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। জুন শেষে তা ছিল ১৩ হাজার ৬৯২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। জুন শেষে তা ছিল ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। জুন শেষে তা ছিল ৩ হাজার ৮৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯৬৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। জুন শেষে তা ছিল ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ১৫৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। এটি ব্যাংকগুলোর দুই মাসের লক্ষ্যমাত্রার ৫৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এপিএ’র আওতায় চলতি অর্থবছরে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে দুই মাসে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ আদায়ের হার ছিল ৭৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এপিএ’র আওতায় মোট খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো আদায় করেছে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি, বিডিবিএল নিজ লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ, জনতা ব্যাংক ৬৫ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক ৬৩ শতাংশ, রূপালী ব্যাংক ৪৮ শতাংশ এবং বেসিক ব্যাংক নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৮ শতাংশ খেলাপি ঋণ আদায় করেছিল।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এপিএ চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস অন্তর ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে আলোচনা হয়। চলতি অক্টোবর মাসেও এ বিষয়ে সভা করার কথা আছে। সেখানে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কেন এত বাড়ল, তা দেখা হবে।’