পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি বিচ হ্যাচারি লিমিটেড ৫ বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর পুনরায় উৎপাদনে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে। গত সোমবার (২৮ জুন) ডিএসইর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোম্পানিটি উৎপাদনে ফেরার কথা জানায়।
সর্বশেষ ৩১ মার্চ’২১ সময়ের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির ক্যাশ ও ব্যাংকে জমা মিলে মোট টাকা রয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৩৯ টাকা। কোম্পানিটি উৎপাদন পুনরায় শুরু করার জন্য অন্য কোন সূত্র থেকে অর্থ প্রাপ্তি বা যোগানের কথা শেয়ারহোল্ডারদের জানায়নি। সামান্য এই অর্থ নিয়ে কী করে কোম্পানিটি পুনরায় ব্যবসা কার্যক্রম শুরু করলো- এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শেয়ারহোল্ডারসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। এর নেপথ্যে শেয়ার কারসাজির উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও সন্দেহ তাদের।
উৎপাদনে ফেরার ঘোষণার তিন দিন আগে গত ২২ জুন থেকে হঠাৎ দর বৃদ্ধিতে রকেট গতি পায় কোম্পানিটির শেয়ার। মাত্র ৬ দিনে ৩১ শতাংশের বেশি দর বেড়ে ১৮ টাকার বেশি দরে উঠে যায়। তবে বুধবার (৩০ জুন) শেয়ারটির দর কিছুটা সংশোধন হয়ে স্থির হয়েছে ১৭ টাকা ২০ পয়সায়।
এক মাসের লেনদেন চিত্র
গত সোমবার (২৮ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির প্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে বলা হয়েছে, ওইদিন থেকেই কোম্পানিটি উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে।
কোম্পানিটির উৎপাদন পরিকল্পনা
কংক্রিট নির্মিত ছোট ১৫টি চৌবাচ্চায় তেলাপিয়া, কৈ, পাঙ্গাস এবং পাবদা মাছ চাষ করার মাধ্যমে এ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। বছরে মাত্র ১০৫ টন মাছ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।
কিন্তু এত অল্প পরিমাণ চাষের কৈ, পাবদা ও পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করে কোম্পানিটি কত টাকা মুনাফা করবে, আর পরিচালন খরচ শেষে নিট মুনাফা থাকবে কি-না, বা বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে পারবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কোম্পানিটির অবস্থান
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের সময় সাগরতীরে অবস্থিত কোম্পানিটির স্থাপনার একটি অংশ অধিগ্রহণ করেছিল সরকার। এর পর ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার আগে কোম্পানিটির ব্যবসা ছিল চিংড়ির রেণু পোনা উৎপাদন।
বিচ হ্যাচারির কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ নূর ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে শুধু কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রমে ফেরার তথ্যটি নিশ্চিত করেন। এর বাইরে অন্য কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানিটিরে এক কর্মকর্তা জানান, কোম্পানিটির সিইও রাবীদ ইসলাম হঠাৎ করেই পুনরায় ব্যবসা কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেন। ব্যবসা শুরুর জন্য তিনিই অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
এরই মধ্যে মাত্র ৫৫ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার ১৫টি কংক্রিটের চৌবাচ্চায় তেলাপিয়া, পাঙ্গাস মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সর্বশেষ ডিভিডেন্ড চিত্র
আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানিটি ২০১৩ সালে বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড এবং ২০১৪ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে আর কোন ডিভিডেন্ড দেয়নি এবং আর্থিক প্রতিবেদন সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের কোন তথ্যও দেয়নি।
তবে চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ দুই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন জানিয়েছে কোম্পানিটি। সর্বশেষ প্রতিবেদন (৩১ মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসানে রয়েছে ২৫ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩২ পয়সা।
কোম্পানিটি বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে। লোকসানি কোম্পানি হিসাবে এর পিই রেশিও নেগেটিভ।