চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে বস্ত্র খাতের দাপটও অনেকটা ম্লান হয়েছে। ফলে বিমার পর যারা বস্ত্র খাতের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়েছিলেন, তারা এখন উদ্বেগে বিনিয়োগ ফিরে পাওয়া নিয়ে।
গত দুই মাসে বস্ত্র খাতের যে উত্থান দেখা গিয়েছিল, তার কিছুটা গতি হারিয়ে এখন উদ্বেগের জায়গায় যেতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় থেকে বিমার শেয়ারের যে দাপট ছিল, সেটি বস্ত্র খাতের দখলে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে বস্ত্র খাতের সেই দাপটও অনেকটা ম্লান।
ফলে বিমার পর যারা বস্ত্র খাতের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়েছিলেন, তারা এখন উদ্বেগে বিনিয়োগ ফিরে পাওয়া নিয়ে।
মঙ্গলবার দিন শেষে বস্ত্র খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ২০৯ কোটি টাকা। যেখানে গত ২৪ জুন লেনদেন হয়েছিল এই সময়ে সবচেয়ে ৪৩৯ কোটি টাকা।
বিপরীত অবস্থায় বিমা খাতের মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১৬৩ কোটি টাকা। আর ২৪ জুন এ খাতের লেনদেন ছিল ১৮৯ কোটি টাকা।
লেনদেন হওয়া ৫০টি বিমা কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ২৮টির। বেড়েছে ২০টির। দুটির দর পাল্টায়নি।
বিপরীত অবস্থায় বস্ত্র খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৩টির শেয়ার দর বেড়েছে। বাকি ৪৫টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।
বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর অর্থবছর শেষ হচ্ছে জুনে। দু-তিন মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এ খাতের কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। ফলে এ খাতের প্রতি মার্চের শেষ থেকেই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে। কিন্তু জুনের শেষে এসে এ খাতের হঠাৎ দরপতন নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার কথা ছিল সোমবার থেকে। পরে তা পিছিয়ে বৃহস্পতিবার করা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে লকডাউনের বিধিনিষেধের কারণে গণপরিবহন, শপিংমল বন্ধ রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের কঠোর শাটডাউনে যাচ্ছে সরকার।
এ সময় জনগণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যা বুধবার আরও স্পষ্ট করা হবে। তবে শাটডাউনে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে কি না, তা বুধবার জানা যাবে। এরই মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ সময়ে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু থাকলে পুঁজিবাজারের লেনদেনও চলবে।
লেনদেন সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, বিমা খাতের শেয়ার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, সমালোচনা হয়েছে। তারপরও অনেক বিনিয়োগকারী অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। তারা মুনাফা পেলে ভালো, তবে অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ না করে এখনও ফান্ডামেন্টাল যেসব কোম্পানির শেয়ার দর বাড়েনি, সেগুলোতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, বস্ত্র খাতের শেয়ার দরে উত্থান-পতন আছে। সেটি ভালো। তবে এ খাতেরও অনেক শেয়ারের ফান্ডামেন্টাল ভালো না। সেগুলোর প্রতিও সতর্ক থাকা উচিত।
বিমা বস্ত্রে পতনের ছাপ
গত কয়েক সপ্তাহে দর বৃদ্ধির তালিকায় স্থান করে নেয়া বস্ত্র খাতের বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার দর গত কয়েকদিন ধরে কমছে। দর পতন হওয়া শীর্ষ ১২টি কোম্পানির মধ্যে ৯টি ছিল বস্ত্র খাতের।
সোনাগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ার দর ২৮ জুন ছিল ২৮ টাকা। একদিনের ব্যবধানে বুধবার শেয়ার প্রতি ২ টাকা কমে হয়েছে ২৬ টাকা। মঙ্গলবার দর পতন হওয়া শীর্ষ দর কোম্পানির মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয় স্থানে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৭.১৪ শতাংশ।
ম্যাকশন স্পিনিংয়ের শেয়ার দর কমেছে ৬.২৭ শতাংশ। কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের শেয়ার দর কমেছে ৫.১৩ শতাংশ।
মতিন স্পিনিং মিলসের শেয়ার দর কমেছে ৪.৯৫ শতাংশ। এস্কোয়ার নিট কম্পোজিট লিমিটেডের শেয়ার গত ২৭ জুন ছিল ৪৩ টাকা ২০ পয়সা। মঙ্গলবার তা কমে হয়েছে ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৪.৮২ শতাংশ।
প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শেয়ার দর ২৭ জুন ছিল ২৩ টাকা ৭০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে হয়েছে ২১ টাকা ২০ পয়সা। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৪.৫০ শতাংশ।
মেট্টো স্পিনিংয়ের শেয়ার দর কমেছে ৩.৮৫ শতাংশ। সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিসের শেয়ার দর কমেছে ৩.৭৮ শতাংশ।
ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনং লিমিটেডে শেয়ার দর গত দুই দিনে কমেছে ১৯ টাকা ১০ পয়সা শেয়ার নেমে এসেছে ১৮ টাকা ২০ পয়সায়।
আলিফ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের শেয়ার দর বুধবার ছিল ৩৮ টাকা ১০ পয়সা। গত ২২ জুন শেয়ার প্রতি দর ছিল ৪৩ টাকা ৮০ পয়সা। এই সময়ের পর ক্রমাগত দর কমেছে কোম্পানিটির।
একই সঙ্গে বিমা খাতের শেয়ারের দরও কমেছে মঙ্গলবার। দিনের সবচেয়ে বেশি দর পতন হওয়া কোম্পানির তালিকায় ছিল বিমা খাতের প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৯.৫৩ শতাংশ। এ ছাড়া, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৫.৭৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার দরও কমেছে মঙ্গলবার। এদিন কোম্পানিটির ৩.৭২ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩.৬০ শতাংশ। মেঘনা লাইফ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে সাড়ে তিন শতাংশ পর্যন্ত।