শেয়ারবাজারে আসছে তালিকাভুক্ত ১৯ ব্যাংকের ১১৩ কোটি বোনাস শেয়ার। যা ব্যাংকগুলোর বার্ষিক সাধারন সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনক্রমে তাদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে পাঠানো হবে। এতে ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০ টাকার পরিশোধিত মূলধন বাড়বে।
তবে বাজেটে কমপক্ষে অর্ধেক নগদ লভ্যাংশ প্রদানের কড়াকাড়ি আরোপের আগে ব্যাংকগুলোর বোনাস শেয়ার দিত অনেক বেশি। ওইসময় অধিকাংশ ব্যাংক শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার দিত। যাতে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ অনেক কম হত। কিন্তু গত ২ বছর যাবত বোনাসের চেয়ে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ বেশি।
দেখা গেছে, ২০২০ সালের ব্যবসায় শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে ৩টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এছাড়া ১৬টি ব্যাংকের পর্ষদ নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ ২০২০ সালের ব্যবসায় ১৯টি ব্যাংকের বোনাস শেয়ার শেয়ারবাজারে যোগ হতে যাচ্ছে।
তবে এখনো ৪টি ব্যাংকের লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা করেনি এবং তারিখও নির্ধারন করেনি। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও রূপালি ব্যাংক।
তালিকাভুক্ত ১৯ ব্যাংকের পর্ষদ ২০২০ সালের ব্যবসায় ১১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৮টি বোনাস শেয়ার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০ টাকার পরিশোধিত মূলধন বাড়বে। তবে কয়েকটি ব্যাংক এরইমধ্যে বোনাস শেয়ার প্রদান করে দিয়েছে।
একইসময়ে লভ্যাংশ সভা করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২৩টির পর্ষদ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ২ হাজার ৩২৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ বোনাস শেয়ারের থেকে প্রায় দ্বিগুণ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে নগদ লভ্যাংশে কড়াকড়ি আরোপের আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ব্যবসায় ব্যাংকগুলো ২২০ কোটি ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৫টি বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। ওই বছরের ব্যবসায় শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছিল ১৬টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আর ৮টি ব্যাংকের পর্ষদ নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ব্যবসায় ২৪টি ব্যাংকের বোনাস শেয়ার শেয়ারবাজারে যোগ হয়েছিল।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বোনাস শেয়ার দেওয়ার বিষয়টি একটু অন্য রকম। অনেক ব্যাংককে ব্যাসেল-২ এর শর্ত পরিপালনে বোনাস শেয়ার দিতে হচ্ছে। তবে অনেক ব্যাংকের নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতাও নেই। একটা পর্যায়ে গিয়ে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। তারপরেও বোনাস শেয়ারের কারনে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছরই বোনাস শেয়ারের বড় চাপ বাজারে আসে।
এবার ব্যাংকগুলোর ঘোষিত বোনাস শেয়ারগুলোর বর্তমান (০৬ জুন) বাজার দর রয়েছে ২ হাজার ৯২৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এই শেয়ার শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়া হলেও তা সমন্বয় হয়ে প্রাপ্তি প্রায় শূন্য হয়ে যায়। কারন বোনাস শেয়ার রেকর্ড ডেটের দরের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। এতে বোনাস শেয়ার পাওয়ার আগের এবং সমন্বয় পরবর্তী বোনাস শেয়ারসহ দর একই হয়ে যায়।
যেমন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ৫% নগদের পাশাপাশি ৫% বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। যার রেকর্ড ডেট ছিল ৬ জুন এবং ওইদিন ব্যাংকটির শেয়ার দর ছিল ১২ টাকা। কিন্তু রেকর্ড ডেট এর পরের দিন শেয়ারটি ৫% বোনাস শেয়ার সমন্বয় করে ১১.৪০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ রেকর্ড ডেটের দিন ১টি শেয়ারের যে দর ছিল, তা পরের দিন ৫% বোনাস শেয়ার সমন্বয় করে কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, রেকর্ড ডেটের দিন ১টি শেয়ারের যে দর ছিল, পরের দিন বোনাস শেয়ারসহ ১.০৫টি শেয়ারের দর সমান হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, পরিচালকদের বোনাস শেয়ার নিয়ে খামখেয়ালিমূলক সিদ্ধান্তের কারনেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে নগদ লভ্যাংশে কড়াকড়ি আরোপের কারনে বোনাস শেয়ার কমে এসেছে।