কোম্পানিটির শেয়ার দরের এই নিম্নগামী প্রবণতা শুরু ২৫ এপ্রিল থেকে। সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারদর ছিল ১৯৫ টাকা ৭০ পয়সা। সেটি কমে সোমবার দাঁড়িয়েছে ১৭১ টাকা ৭০ পয়সা। দাম কমলেও আগ্রহী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। মে মাসের শেষ দিন কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছে পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ৭১৯টি। অথচ গত ২৪ জানুয়ারি হাতবদল হয় এক কোটি ২৪ লাখের বেশি।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মায় আগ্রহ হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানির শেয়ারদর ক্রমেই কমছে। একই সঙ্গে কমছে লেনদেন।
শেয়ারদর কমতে থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা আগে বেশি দরে শেয়ার কিনেছেন, তারা লোকসানে আছেন। কেউ কেউ আরও লোকসান হওয়ার আগেই শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি ঘুরে যাবে, এমন আশায় কেউ আবার শেয়ার ধরে রেখেছেন।
কোম্পানিটির শেয়ারদরের এই নিম্নগামী প্রবণতা শুরু ২৫ এপ্রিল থেকে। সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারদর ছিল ১৯৫ টাকা ৭০ পয়সা। সেটি কমে সোমবার দাঁড়িয়েছে ১৭১ টাকা ৭০ পয়সা।
এই সময়ে আট কার্যদিবস দাম বেড়েছে। আর কমেছে ১৭ কার্যদিবস।
শুধু তাই নয়, সিরাম প্রতিশ্রুত টিকা দিতে না পারলে বেক্সিমকো ফার্মার প্রত্যাশিত আয় হবে না। এই অবস্থায় নতুন করে কোম্পানির শেয়ার কেনায় আগ্রহ হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
মে মাসের শেষ দিন কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছে পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ৭১৯টি। অথচ গত ২৪ জানুয়ারি হাতবদল হয় এক কোটি ২৪ লাখের বেশি।
১৭ ফেব্রুয়ারি হাতবদল হয় ৪১ লাখ ৯২ হাজার ৪৬টি। ২৬ এপ্রিল হাতবদল হয় ৩৫ লাখ ২০ হাজার ৮৪৪টি।
দাম বৃদ্ধি শুরু অক্টোবরের শেষ থেকে
বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যস্থতায় সিরাম থেকে সরকার করোনার টিকা আনার আলোচনা শুরুর পর গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে কোম্পানির শেয়ারদর টানা বাড়তে থাকে।
শুরু থেকেই জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি টিকাপ্রতি এক ডলার করে কমিশন পাবে। আর তিন কোটি টিকায় মুনাফা থাকবে তিন কোটি ডলার। অবশ্য সংরক্ষণ, টিকা সরবরাহ বাবদ কিছু খরচও তাদের করতে হয়েছে। পাশাপাশি সিরামের পরিবেশক হতে টাকাও দিতে হয়েছে।
সরকার, বেক্সিমকো ও সিরামের মধ্যে এই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয় ১৩ ডিসেম্বর। তবে শেয়ারদর বাড়তে শুরু করে ১৪ অক্টোবর থেকে। সেদিন শেয়ারপ্রতি মূল্য ছিল ১০৯ টাকা ৬০ পয়সা। আর চুক্তির দিন পর্যন্ত বেড়ে হয় ১৫০ টাকা।
চুক্তির পর দুই সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে শেয়ারমূল্য বাড়ে আরও প্রায় ৬০ টাকা। ৩ জানুয়ারি দাম ছিল ২০৯ টাকা। প্রথম টিকা আসার দিন ২৫ জানুয়ারি দাম দাঁড়ায় ২০০ টাকা ১০ পয়সা।
পুরোটা সময় প্রতিদিনের লেনদেনে বেক্সিমকো ফার্মা সর্বাধিক লেনদেন হওয়া তিনটি কোম্পানির একটি হিসেবেই থাকত।
তবে মার্চের শেষে করোনার টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হওয়ার পর থেকে এই শেয়ার হাতবদলও কমে যায়।
এর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান টিকার জন্য ভারতকে চাপ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক স্বপন সোমবারও বলেছেন, ভারতকে টাকা দেয়া হয়েছে। টিকা দিতেই হবে।
সিরাম টিকা দিতে পারছে না ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায়। তবে তারা বাংলাদেশের জন্য ৫০ লাখ টিকা প্রস্তুত রেখেছে।
ভারতে করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটিকে বিদেশে ডোজ রপ্তানিতে নিষেধ করা হয়েছে। আর সিরাম তার পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না কাঁচামালের অভাবে।
তারা কাঁচামাল পায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকার আবার কাঁচামাল রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে। যদিও প্রেসিডেন্টে জো বাইডেন আশ্বাস দিয়েছেন, রপ্তানি আবার চালু হবে।
এর মধ্যে সিরাম জানিয়েছে, তারা জুনের মধ্যে মাসে ১০ কোটির মতো টিকা উৎপাদন করতে পারবে। তবে সেপ্টেম্বরের আসে রপ্তানি হবে কি না, এ বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।
টিকা বেচে মুনাফা ৩৮ কোটি টাকা
২ এপ্রিল বেক্সিমকো ফার্মা তাদের চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক তথা জানুয়ারি-মার্চ মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ডিএসই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কোম্পানিটি সরকারকে ৫০ লাখ করোনার টিকা সরবরাহ করে ৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। তাতে প্রতি টিকায় মুনাফা হয়েছে ৭৬ টাকা ৭৪ পয়সা বা প্রায় ৭৭ টাকা।
বলা হয়েছে, কোম্পানিটি সরকারকে ৭০ লাখ টিকা সরবরাহ করলেও মুনাফায় যুক্ত হয়েছে ৫০ লাখ টিকার হিসাব। বাকি ২০ লাখ টিকা সরকারকে এপ্রিলে সরবরাহ করায় তা পরের প্রান্তিকে যুক্ত হবে।
সিরাম থেকে বেক্সিমকোর মধ্যস্থতায় প্রথমে টিকা আসার কথা ছিল তিন কোটি। পরে জানানো হয় আসবে তিন কোটি ৪০ লাখ।
৭০ লাখ টিকায় ৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা মুনাফা হওয়ায় বাকি দুই কোটি ৭০ লাখ টিকায় আরও প্রায় পৌনে ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা হতে পারত।