নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ঋণগ্রহীতাদের তথ্য সরবরাহ করা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য একটি রুটিন দায়িত্ব। নিয়মিতভাবে ব্যাংকগুলো এ তথ্য সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ভুল তথ্য সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ করেছেন খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাই। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মনে করি। যেসব ব্যাংক এমন অসাধু উপায়ের আশ্রয় নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করি।
‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ঋণগ্রহীতার তথ্যে বিভ্রাট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এন্টারপ্রাইজ ডেটা ওয়্যারহাউস (ইডিডব্লিউ) সফটওয়্যারে বিভিন্ন তথ্য জমা দেয় ঋণ বিতরণকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনেক গ্রহীতার বিষয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে এমন অভিযোগ করেছেন খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এখন এ তথ্যে সঠিকতা যাচাইয়ে কেন্দ্র্রীয় ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে বলে প্রতিবেদন মারফত জানা যাচ্ছে।
সঠিকতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে কতগুলো ঋণের সঠিকতা যাচাই করতে পারবে? দেশে বর্তমানে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ কোটি টাকার ওপরে। এত বিপুল পরিমাণ ঋণের গ্রাহক সংখ্যাও লাখ লাখ। তাদের সবার ঋণসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে কতটা সম্ভব, তা ভাববার অবকাশ রয়েছে বৈকি। তাছাড়া এভাবে ভুল তথ্য সরবরাহ করা হলে দেশে মোট বিতরণকৃত ঋণ ও খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। ব্যাংকের হাতে যদি তথ্য ম্যানুপুলেট করার এমন সুযোগ থাকে, তাহলে তারা একজন খেলাপি গ্রাহককেও নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে দেখানোর সুযোগ পাবে। এতে করে স্বজনপ্রীতির সুযোগ তৈরি হবে বৈকি।
এ ধরনের তথ্য বিভ্রাট ও তথ্যের দ্বৈততা পরিহারকল্পে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারের সঙ্গে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের সার্ভার সংযুক্ত করা উচিত বলে মনে করি। তাতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকের তথ্যের গরমিল পরিহার করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহের সুযোগও রহিত হবে।
প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রমের দুর্বলতা থাকার কোনো সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করি না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত ঋণ বিতরণ বিষয়ে সঠিক তথ্য সংরক্ষণ ও গ্রাহকের প্রকৃত তথ্য যাতে ব্যাংক থেকে তারা পেতে পারে, সে বিষয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সব ধরনের উদ্যোগ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।