আজ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে। তবে এ পতনের দিনেও বীমার শেয়ারে ছিল ‘অস্বাভাবিক’জোয়ার। এখাতের কয়েকটি কোম্পানির দর আজও সন্দেহজনকভাবে বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আজ দিনের শুরু থেকেই উভয় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন চলে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রয়াদেশ বেশি ছিল, যে কারণে মাত্র ২৪ মিনিটে সূচকের পতন হয় ৬৫ পয়েন্ট। এরপর দিনের বাকি সময় লেনদেন হয়েছে সূচকের ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে।
আজ ডিএসইতে ২০ খাতের মধ্যে ৬ খাতে কোন শেয়ার দরই বাড়েনি। এরমধ্যে তিন খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতনে ছিল। এমন অবস্থার মধ্যেও বীমা খাতের শেয়ারে ‘অস্বাভাবিক’জোয়ার। এখাতে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির, কমেছে ১৫টির, আর অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারের। আজ ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানির মধ্যে ৭টিই ছিল বীমা খাতের শেয়ার।
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল দেশে সর্বাত্মক লডকাউন শুরু হলে নতুন করে বীমার দাপট শুরু হয়। গত বছরও করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বীমার শেয়ার দর ঢালাওভাবে বাড়ে। সেই সময়ে বীমার শেয়ার ৩ গুণ থেকে ৮ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তিন গুণের কম শেয়ার দর বেড়েছে- এমন কোম্পানি সে সময় ছিল না।
গত কয়েকদিনে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারদর দ্বিগুণ হয়েছে, বেশিরভাগ কোনোনির দর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এভাবে ঢালাও দাম বৃদ্ধির প্রবণতায় পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বিনিয়োগকারীদের সতর্কও করছেন। তবু পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটছে বীমার শেয়ার দর।
গত বছর থেকেই বীমা খাত নিয়ে নানা সংবাদ এই দর বৃদ্ধিতে প্ররোচনা যুগিয়েছে। বীমা খাতের জন্য এর আগে এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশ নির্ধারণ, পরিশোধিত মূল্যধনের বিপরীতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের নির্দেশনা বড় প্রভাব ফেলে খাতটির শেয়ার দরে। এসব কার্যক্রমের বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি, তারপরও বীমার দর আকাশচুম্বী হয়েছে।
সবশেষ সোমবার বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) পক্ষ থেকে জারি করা এক নির্দেশনা এই খাতের প্লেয়ারদের আরও শক্তি বাড়িয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বীমা কর্তৃপক্ষ স্বয়ং বীমা খাতের শেয়ার দর বৃদ্ধিতে অনুঘটকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী ১ অক্টোবরের পর থেকে কোনোভাবেই প্রিমিয়াম জমার বিপরীতে হাতে লেখা রশিদ দেয়া যাবে না। এতে বলা হয়েছে, বিমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে বিমাকারী ও বিমা পলিসি গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ডিজিটাল সুবিধা প্রদান, বিমাকারীর বিমা পলিসি গ্রাহকদের প্রিমিয়াম রশিদ প্রদান (ডাক, কুরিয়ার) বাবদ খরচ সাশ্রয়, এ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি রোধ, বিমা পলিসি গ্রাহকগণের টাকা আত্মসাৎ বন্ধ, গ্রাহক হয়রানি রোখ এবং গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে বিমাখাতের ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো ১ জুন থেকে প্রিমিয়াম রশিদ হিসেবে কাগজে ছাপা রশিদের পাশাপাশি ইউনিফাইড ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম (ইউএমআর) এর মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ই-রিসিপ্ট প্রদান করতে হবে।
এ খবরকে পুঁজি করে আজ পুঁজিবাজারে বড় পতন হলেও বীমা খাতের শেয়ারে ছিল ‘অস্বাভাবিক’জোয়ার। এখাতের বেশিরভাগ কোম্পানির দর আজ বেড়েছে। অগ্রণী, ফিনিক্স ইন্সুরেন্সের মতো কয়েকটি শেয়ারের দর টানা বাড়ছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিমা খাত নিয়ে কারসাজি হচ্ছে এটা অনেক আগে থেকেই। কারণ, পুঁজিবাজারে অনেকগুলো খাত থাকলেও এ খাতের শেয়ারে কেন বিনিয়োগকারীদের এত আগ্রহ থাকবে? এটি শক্তভাবে মনিটরিং করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সবাই লাভবান হয় না। অনেকে লাভবান হন, আবার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্ত কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যদি কেউ ক্ষতির সম্মুখীন করে তাহলে সেটি অবশ্যই আইনে ব্যত্যয়। এক্ষেত্রে কারা বীমার শেয়ার কিনছে, কোনো কারসাজি আছে কি না সেটিও যাচাই করে দেখা খুবই জরুরি।’
প্রবীণ বিনিয়োগকারীর মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বীমার শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে-এটাতো দিনের আলোর মতে পরিস্কার। কিন্তু বিএসইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখে এটা ধরা পড়ে না। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর টানা বাড়লেও বিএসইসির তথাকথিত সার্ভিল্যান্সের র্যাডারে ধরা পড়ে না। তিনি বলেন, আসলে সরিষার মধ্যেই যদি ভুত থাকে, তাহলে সেই ভুত তাড়ানো দুস্কর।