সম্প্রতি দেশের এমন পরিস্থিতিতেও পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো। এ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন বাড়ছে সূচক। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বাড়ছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটদর। কিন্তু এর উল্টো অবস্থানে রয়েছে কিছুদিন আগে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া কোম্পানির শেয়ার। প্রায় প্রতিদিনই কমতে দেখা যাচ্ছে এসব কোম্পানির শেয়ারদর। প্রতিনিয়ত দর হ্রাসের তালিকায় স্থান পাচ্ছে এসব কোম্পানি।
গত সপ্তাহেও এমন পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সপ্তাহ শেষে শেয়ারদর হ্রাসের তালিকায় ছিল ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া ৮০ শতাংশ কোম্পানির নাম। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, রিং সাইন টেক্সটাইল, এমএল ডায়িং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, সায়হাম কটন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ভিএফএস থ্রেড ডায়িং।
সুত্র মতে, সপ্তাহ শেষে খুলনা পাওয়ার কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ৯ দশমকি ২৬ শতাংশ। এছাড়া রিং সাইন টেক্সটাইলের ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, এমএল ডায়িংয়ের ৯ দশমিক ১১ শতাংশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, সায়হাম কটনের ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ ও ভিএফএস থ্রেড ডায়িংয়ের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ দর কমতে দেখা গেছে।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নের কথা বলে গত ৭ এপ্রিল ৬৬টি কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পরদিন থেকে যা কার্যকর হয়। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার প্রথমদিন বড় ধাক্কা খায় পুঁজিবাজার, যা এখনও সামাল দিতে পারেনি।
পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা নাজুক হওয়ার কারণে গত বছর ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়া হয়। এরপর থেকে ১১০ কোম্পানি সিকিউরিটিজ ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। এর মধ্যে সম্প্রতি ৬৬টি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে সম্ভবত দুই ধাপে ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা তুলে নেয়া হবে বলে জানা যায়। তবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে।
ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে পিপলস লিজিং, আরএন স্পিনিং, বিডি সার্ভিসেস, আইএফআইএল ইসলামী মিউচুয়াল ফান্ড, জাহিন স্পিনিং, রিং শাইন টেক্সটাইল, অলিম্পিক, বিডিএইস ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, নূরানী ডায়িং। এ তালিকায় আরও রয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল, এসইএমএল গ্রোথ ফান্ড, ইভিন্স টেক্সটাইল, প্যাসিফিক ডেনিম, মেট্রো স্পিনিং, কাট্টলী টেক্সটাইল। তালিকায় রয়েছে ফার কেমিক্যাল, দেশবন্ধু পলিমার, ইয়াকিন পলিমার, সাফকো স্পিনিং, ওয়েস্টার্ন মেরিন, সেন্ট্রাল ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, সিমটেক্স ও হামিদ ফেব্রিকস। তালিকায় আরও রয়েছে প্রাইম টেক্সটাইল, সায়হাম কটন, বাংলাদেশ ব্লিডিং সিস্টেম, গোল্ডেন হারভেস্ট, এএফসি এগ্রো, খুলনা প্রিন্টিং, সিলভা ফার্মা, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, কপারটেক, শাশা ডেনিম, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, এস্কোয়্যার নিট, ভিএফএস থ্রেড, আরগন ডেনিম, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, এডভেন্ট ফার্মা, আরএসআরএম স্টিল, কুইন্স সাউথ টেক্সটাইল ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
এ তালিকায় আরও রয়েছে ওয়াইমেক্স, রূপালী ব্যাংক, সায়হাম টেক্সটাইল, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, নাভানা সিএনজি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি, ইউনিক হোটেল, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, উসমানিয়া গ্যাস, খুলনা পাওয়ার, নাহি অ্যালমুনিয়াম, দুলামিয়া কটন, সিনোবাংলা, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ও এমএল ডায়িং।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সূচক সাড়ে ছয় হাজার পয়েন্ট ছোঁয়ার আগে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ধারাবাহিক পতনের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। সূচক পাঁচ হাজার ১০০-এর নিচে নেমে যায়। যে কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফ্লোর প্রাইস তোলা সম্ভব হয়নি। তবে এ পতন দীর্ঘ হবে না বলে মনে করে বিএসইসি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ফ্লোর প্রাইসে থাকা বেশিরভাগ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা তুলনামূলক দুর্বল। সেই বিবেচনায় বিনিয়োগকারীরা হয়তো শেয়ার বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারদরও নিম্নমুখী রয়েছে।