করোনা সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে টানা উত্থানে রয়েছে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি। ‘লকডাউনে’ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পুঁজিবাজারের লেনদেনে বেশি মনোযোগী হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা, যার প্রতিফলন দেখা গেছে শেয়ার কেনাবেচায়। গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ।
এদিকে টানা ঊর্ধ্বগতির ধারাবাহিকতায় গতকালও ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ৭১ পয়েন্ট। এ নিয়ে ‘লকডাউনের’ গত ছয় কার্যদিবসে সূচকটি বেড়েছে ২৫৭ পয়েন্ট। এ সময়ে বাজার মূলধন ফিরেছে ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাজার পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।
মার্জিন ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে অস্থিরতা তৈরি হয় পুঁজিবাজারে। এ সময়ের পর থেকে বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমে যাওয়ার পাশাপাশি শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণও কমতে শুরু করে। ফলে ডিএসইতে কেনাবেচার পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হাজার কোটি টাকারও নিচে নেমে যায়। পরবর্তীতে মর্জিন ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ কার্যকরের নির্দেশনা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হলেও বাজারে অস্থিরতা রয়েই যায়।
বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সাইড লাইনে ফিরে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাসে ডিএসইর লেনদেন ৫০০ কোটি টাকায় নেমে আসে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি ও ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ফলে মার্চে লেনদেনের পাশাপাশি সূচকেও নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। পরবর্তীতে ‘লকডাউনকে’ কেন্দ্র করে বাজার বন্ধের আশঙ্কায় বাজার পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নেয়। এমন পরিস্থিতিতে মার্জিন ঋণ বিতরণের হার বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এসইসি। ‘লকডাউনের’ মধ্যে পুঁজিবাজার খোলা থাকায় লেনদেন ও সূচকে উন্নতি দেখা দেয়। গত ছয় কার্যদিবসের প্রতিদিনই ধীরে ধীরে লেনদেন বাড়তে থাকে। এ সময় ডিএসইর লেনদেন ৪৫৬ কোটি টাকা থেকে গত সোমবার প্রায় ৭০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। আর গতকাল বাজারের উল্লম্ফনে লেনদেনের অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
গতকাল ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট, যা আগের দিনের চেয়ে ৮৬ শতাংশ বেশি। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি ডিএসইতে ১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা কেনাবেচা হয়েছিল। গতকালের লেনদেনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে ব্লক মার্কেট থেকে। গতকাল ব্লক মার্কেটে ২৭ কোম্পানির ৪০২ কোটি ৭১ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ কেনাবেচা হয়েছে, যার মধ্যে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন ও গ্রামীণফোনে ৩৭৫ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া ৩৫৫টি সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৪টির, কমেছে ৯৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩টির। টানা উত্থানে কিছু বিনিয়োগকারী মূলধনী মুনাফা তুলে নিলেও গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই বাজারে ঊর্ধ্বগতি বজায় ছিল। বড় মূলধনী বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে গতকাল ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে ৫৪২১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। গতকাল সূচক বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে ইউনাইটেড পাওয়ার, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জহোলসিম, ব্র্যাক ব্যাংক, পাওয়ার গ্রিড প্রমুখ।
গতকাল সাধারণ বীমা ছাড়া ডিএসইতে অন্য সব খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সিমেন্ট, এনবিএফআই ও বিবিধ খাতের। গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও লেনদেনে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে সাধারণ বীমা খাত। গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৮ শতাংশ এসেছে এই খাত থেকে। এর বাইরে বিবিধ খাত থেকে ১৮ শতাংশ ও এনবিএফআই খাতের ১০ শতাংশ লেনদেন ছিল উল্লেখযোগ্য। গত কয়েক মাসের ধারাবাহিকতায় গতকালও লেনদেনের নেতৃত্বে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। গতকাল ডিএসইতে এই কোম্পানির শেয়ারে লেনদেন হয়েছে ১৪৮ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। লেনদেনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল একই গ্রুপের কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা। এছাড়া লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, রবি, বিডি ফাইন্যান্স, বিএটি বাংলাদেশ, লাফার্জহোলসিম ও এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স ছিল লেনদেনের পরবর্তী অবস্থানে।