বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হলেও একটি চক্র এটাকেই বড় করে গুজব ছড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তারা আতঙ্ক সৃষ্টি করে ওই ৬৬ কোম্পানি ছাড়াও বাকিগুলোর শেয়ার কম দামে হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ টানা ৩দিন বড় উত্থানের পড়ে বাজারে স্বাভাবিক সমন্বয় হতে পারত। তাই আতঙ্কিত না হয়ে নিজস্ব বিচার-বিবেচনা দিয়ে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন স্বাভাবিক। তাই বলে ১টি কোম্পানির কারনে অন্য কোম্পানির শেয়ার কম দামে বিক্রি করে দেওয়া যৌক্তিক হতে পারে না। এছাড়া কেউ ১টি বিষয়কে কেন্দ্র করে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করলেই তাতে আতঙ্কিত হয়ে কম দামে বিক্রি করে দেওয়া ঠিক হবে না। তাই আতঙ্কিত না হয়ে কোম্পানির পারফরমেন্সের ভিত্তিতে বিনিয়োগ ধরে রাখতে হবে।
বুধবার (০৭ এপ্রিল) বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ঈদকে কেন্দ্র করে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দর সীমা) তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যাতে করে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজনে ওইসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলতে পারেন। তবে বাকি কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস এই মুহুর্তে তুলে দেওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই কমিশনের।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন স্বাভাবিক। তাই ১দিনের পতনে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গত ৩দিনের টানা বড় উত্থানের পরে মুনাফা নেওয়ায় আজ কারেকশন হয়েছে। এছাড়া মার্জি ঋণ গ্রহিতাদের মধ্যে সপ্তাহের শেষ দিন বিক্রির চাপ কিছুটা থাকে। তারা শুক্রবার ও শনিবারের সুদ থেকে রেহাই পেতে এদিন ক্রয় করে না। বরং বিক্রি করে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পরে আজ (০৮ এপ্রিল) শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম কারন হিসেবে রয়েছে টানা ৩দিনের বড় উত্থানের পরে দর সমন্বয়। তবে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া নিয়ে একটি চক্রের সৃষ্ট আতঙ্কও ভূমিকা রেখেছে।
অন্যথায় ওই ৬৬ কোম্পানির দরপতন হলেও বাজারে তেমন কোন প্রভাব পড়ত না। কারন ওই কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন মাত্র ৫ শতাংশ। যদি ওই সবগুলো কোম্পানির ১০ শতাংশ করেও দরপতন হতো এবং গ্রামীণফোনের ৮ টাকা দর বাড়ত, তাহলে সমান সমান হতো।
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পেছনে ৬৬ কোম্পানির বাজার মূলধনে এই কম অংশগ্রহনকেও বিবেচনা নেয় কমিশন। তবে অনেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার জন্য বর্তমান সময়কে যৌক্তিক মনে করছেন না। এটা আরও আগে বাজারে যখন লেনদেন ১৫০০-২০০০ কোটি হচ্ছিল এবং সূচকে তেজিভাব ছিল, ওইসময় ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া যেত বলে অনেকে মনে করেন।
তবে কমিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, কমিশন ধারনা করেছিল মূল্যসূচক ৫৯০০ থেকে নেমে কারেকশন হয়ে ৫৬০০ পয়েন্ট পর্যন্ত নামবে। এরপরে সূচক আবার উর্ধ্বমূখী হবে। ওইসময় ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হয়নি। সূচক ধারাবাহিক পতন হয়ে ৫ হাজার ১শ’র নিচে নেমে যায়। যে কারনে পরিকল্পনা অনুযায়ি ফ্লোর প্রাইস তোলা সম্ভব হয়নি।
এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) বলেন, ফ্লোর প্রাইস প্রকৃতপক্ষে কোন সমাধান না। এটি সাময়িক সমাধান হতে পারে। তাই বলে সারাজীবন ফ্লোর প্রাইস রেখে দেওয়া যাবে না। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার না করে পোর্টফোলিও ভারি রেখে মনে মনে স্বান্তনা পাওয়া যাবে। কিন্তু এই দরে বিক্রি করতে না পারায় প্রকৃতপক্ষে কোন সুফল নেই। ফ্লোর তুলে দেওয়ার মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারী তা বিক্রির মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়া, অন্য জায়গায় বিক্রি করে লোকসান কাভার করা ইত্যাদির সুযোগ পাবে। অন্যথায় ফ্লোর প্রাইসের কোম্পানির শেয়ারে ধীরে ধীরে অনাস্থা বাড়তেই থাকবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা ভেবে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস এখন তুলে দেওয়া হলেও বাকিগুলোর ক্ষেত্রে এই মুহুর্তে কোন পরিকল্পনা নেই। তাই ফ্লোর প্রাইস নিয়ে বিনিয়োগকারীদেরকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহবান করেছে কমিশন।