ব্যাংক, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শতাধিক কোম্পানির আর্থিক বছর সম্প্রতি শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডিসেম্বর ক্লোজিং এসব কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা আসছে। এরই মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন, ইউনিলিভারসহ বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা এসেছে। নতুন কোম্পানি রবি আজিয়াটা ছাড়া এখন পর্যন্ত যে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দিয়েছে, তাকে সার্বিকভাবে সন্তোষজনক বলছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
এ কারণে যে কোম্পানিগুলো থেকে এখনও লভ্যাংশ ঘোষণা আসেনি, সেসব কোম্পানির সিংহভাগের শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। আর্থিক দিক দিয়ে এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যসব কোম্পানির চেয়ে শক্তিশালী, যে কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এর জের ধরে সম্প্রতি এসব শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ডিসেম্বর ক্লোজিং ১১২ কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। ২০২০ হিসাববছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ায় এখন কোম্পানিগুলোর পর্ষদ সভা চলছে।
লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা খাত ও বহুজাতিক হিসেবে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। এর মধ্যে ব্যাংক খাতে ৩০টি কোম্পানি, বিমা খাতে ৪৯টি, আর্থিক খাতে ২৩টি এবং ১১টি বহুজাতিকসহ মোট ১১২টি কোম্পানি রয়েছে।
আরও পড়ুন…চার কোম্পানির ১৬৪.৪৬ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষনা
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, এ বছর ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানির দিকে বাড়তি নজর রয়েছে। এর কারণ তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অনেক কম। এমন দরে শেয়ার কিনতে পারলে লভ্যাংশ নিয়ে লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে, যে কারণে এখন এসব শেয়ারদর বাড়ছে। অন্যদিকে আর্থিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকার কারণে এসব শেয়ারে ঝুঁকি কম। মূলত সে কারণেই এসব কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁকটা বেশি।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সব ভালো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিনিয়োগকারীরা ভালো রিটার্ন আশা করে, সেটা যে কোনো খাতের কোম্পানি হতে পারে। তবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে এ প্রত্যাশা একটু বেশিই থাকে। কোম্পানিগুলো যদি শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশার প্রতিফল দেখাতে পারে, তাহলে এসব কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন…এবারও বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব মার্কেন্টাইলের
এদিকে এসব প্রতিষ্ঠান বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার চেয়ে নগদ লভ্যাংশ বেশি দিলে শেয়ারহোল্ডাররা বেশি লাভবান হবেন বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এতে এসব শেয়ারের চাহিদা আরও বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, এসব কোম্পানি থেকে (বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান) আগে বেশি বেশি বোনাস শেয়ার প্রদান করা হতো। এতে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কারণ এতে বাজারের প্রচুর বোনাস শেয়ার যোগ হতো। এতে বেড়ে যেত মোট শেয়ার। ফলে এসব শেয়ারের দর কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হতো। তবে এখন বোনাস শেয়ার দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম বেঁধে দেয়ায় বেশিরভাগ কোম্পানি থেকে নগদ লভ্যাংশ আসে, যে কারণে আর্থিক বছর শেষ হলে এসব শেয়ারদর বাড়ে।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত বছর এসব কোম্পানি বিশেষ করে ব্যাংক থেকে ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা আসেনি। এ বছর আমরা তার বিপরীত চিত্র দেখতে চাই।
আরও পড়ুন…লভ্যাংশ ঘোষণা: খুশি নয় চার কোম্পানির শেয়ারধারীরা
প্রসঙ্গত, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস ১৯৮৭-এর ১২(৩এ) এবং ১৩নং ধারায় বলা হয়েছে, বছর শেষ হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে এবং ১৪ দিনের মধ্যে তা উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনে জমা দিতে হয়। পাশাপাশি এ সময় লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে হয়।
আরও পড়ুন…
ডিসেম্বর ক্লোজিং ১১২ কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় বিনিয়োগকারীরা
বড় অঙ্কের বোনাস ঘোষণার পরও দাম ধরে রাখতে পেরেছে
চার কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা ১৬৪ কোটি টাকা
মুনাফায় বড় ঊর্ধ্বগতি থাকলেও লভ্যাংশে প্রভাব নেই
বেশি বোনাসে ব্যাপক লোকসান যেসব কোম্পানিতে
জেমিনি সি ফুডে বিনিয়োগ করে কপালে হাত
বেশি বোনাসের করুণ ফল