ডিসেম্বরে খবর আসে করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে ভালো মুনাফা করেছে ব্যাংকগুলো। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো এ বছর বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে।
এমন অবস্থায় ব্যাংকগুলোর জন্য ৭ ফেব্রুয়ারিতে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, পাঁচ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। তবে এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়া যাবে।
এমন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরপর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থবছর শেষ হয় ডিসেম্বরে। এ সময়টিতে মূলত এসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকেন।
লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে হতবাগ হয়ে যান বিনিয়োগকারীরাসহ বাজার বিশ্লেষকরা। এ অবস্থার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন তারা। এসব পরিপ্রেক্ষিতেই বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছু অবগত নয়, এমন বক্তব্য আসে বিএসইসির পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছিলেন, ‘পুঁজিবাজার সংবেদনশীল জায়গা। এখানে যে কোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বিএসইসি এককভাবে কিছু করতে পারবে না। প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরের সহযোগিতা। ভালো পুঁজিবাজার সবার সমন্বয় ছাড়া সম্ভব নয়।’
এমন সিদ্ধান্ত বাতিল করে কোম্পানিগুলোকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদানের সুযোগ দিতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়া হয়।
সমন্বয়হীনতা পুরনো
২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলালউদ্দিন নিজামী ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তাদের সমন্বয়হীনতা নিয়ে আক্ষেপ করেন।
সেদিন তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার সম্পৃক্ত কোনো কিছু জারি করতে গেলে বিএসইসির সঙ্গে আলাপ করে নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ এবং এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
‘আগেও সমন্বয়ের বিষয়ে বলা হয়েছিল, কিন্ত নানা কারণে সেটি হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি সমন্বিত প্রয়াশে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে।’
কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়ায় বিএসইসির সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সীমা নির্ধারণ করে নির্দেশনা জারির আগে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক
বৈঠকে বসছে বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক
এমন সমন্বয়হীনতা নিয়ে যখন সর্বত্র আলোচনা তখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠক বসছে।
আগামী ১৫ মার্চ দুপুর ১২ টায় বিএসইসি কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সেদিন বৈঠক উপস্থিত থাকবেন।
এ বিষয়ে বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় মুদ্রা বাজার ও পুঁজিবাজার উন্নয়নে আলোচনা হবে। তবে এজেন্ডা সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’