পাসপোর্ট-সংক্রান্ত ফি রাষ্ট্রীয় একটি ব্যাংক ছাড়া আরও পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংকে জমা নেয়া হয়ে থাকে। ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই পাঁচ বেসরকারি ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা নেয়া শুরু হয়। এরই মধ্যে পাসপোর্ট ফি জমা নেয়ার এই পদ্ধতি সাত বছর অতিক্রম করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এই ফি সংগ্রহের জন্য শুধু অর্থ বিভাগ নয়, সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগেরই অনুমোদন নেয়া হয়নি। আবার বেসরকারি ব্যাংকগুলো পাসপোর্টের ফি-সংক্রান্ত যে অর্থ সংগ্রহ করে, তা দু’তিন মাসেও সরকারি কোষাগারে জমা করা হয় না। এমন তথ্য উঠে এসেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের কার্যবিবরণীতে। তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনেই বেসরকারি পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি গ্রহণের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত দ্রুত ও সহজ উপায়ে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এই তথ্য জানান।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দ্রুত ও সহজ উপায়ে এমআরপি এবং এমআরপির বুকলেট ক্রয়সংক্রান্ত একটি সভা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধূরীসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে ও বিদেশে বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে পাসপোর্টের চাহিদা বৃদ্ধিজনিত কারণে পাসপোর্ট প্রদান বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে এই অনির্ধারিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, দেশে সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম শুরু হলেও ই-পাসপোর্ট প্রদান করতে আরো সময় লাগবে। তাই এই চাহিদা মেটানোর জন্য এমআরপি প্রদান করতে হবে। ই-পাসপোর্ট যখন চালু করা হয়েছিল, তখনই সম্পূর্ণরূপে ই-পাসপোর্টে স্থানান্তরের পাশাপাশি এমআরপি দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রতিনিধি জানান, চার মিলিয়ন এমআরপি বুকলেট ক্রয়সংক্রান্ত প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দিয়েছে। পাঁচ লাখ ক্রয় করলে বর্তমান চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক সভায় উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালে যে এমআরপি ইস্যু করা হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সেই পাসপোর্টগুলোও নবায়ন করতে হবে।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব বৈঠকে বলেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তর পাসপোর্ট-সংক্রান্ত ফি পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। সংগ্রহকৃত অর্থ দু’তিন মাস পরও সরকারি কোষাগারে জমা করা হয় না। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি সংগ্রহের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদন নেয়া হয়নি। এমনকি সংশ্লিষ্ট বিভাগেরও কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। তিনি আরো উল্লেখ করেন, সংবিধানের আর্টিকেল ৮৪(১) অনুযায়ী সরকারের সব রাজস্ব ‘কনসোলিডেটেড ফান্ড’-এই জমা হবে। পাসপোর্ট ফি বাবদ সংগৃহীত অর্থ সরকারের তহবিলে জমা না হওয়া আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তিনি বৈঠকে আরো জানান, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পাসপোর্ট ফি সংগ্রহ করতে কোনো বাধা নেই, তবে তা আইবাসের (সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতির অনলাইন সফটওয়্যার) মাধ্যমে করতে হবে। এতে সরকারের রাজস্ব সরাসরি কনসোলিডেটেড ফান্ডে জমা হবে।
বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের মিশন বা দূতাবাসের মাধ্যমে প্রদানকৃত পাসপোর্টের ফি বাবদ আয়ের হিসাব জানা যায় না। সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও বৈঠকে এই-সংক্রান্ত হিসাব জানেন না বলে জানান। এই প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব জানান, এই-সংক্রান্ত হিসাব অর্থ বিভাগের কাছে আছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে আইবাসের এই-সংক্রান্ত হিসাবে অ্যাকসেস দেয়া হবে। ফলে তারাও এই সম্পর্কে অবহিত থাকতে পারবেন।
বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভবিষ্যতে চাহিদা যাচাইপূর্বক ক্রয় পরিকল্পনা ও কর্মপরিকল্পনা করলে জরুরি ভিত্তিতে ক্রয়ের প্রয়োজন সাধারণত হয় না। তার পরও অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে ক্রয় করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বর্তমানে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে এখন দ্রুত এমআরপি বুকলেট ক্রয় করতে হবে। যেহেতু একনেকে চার মিলিয়ন বুকলেট ক্রয়ের অনুমোদন আছে, সেহেতু দ্রুত ‘ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’-তে উপস্থাপন ও অনুমোদন গ্রহণের জন্য প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণের জন্য তিনি পরামর্শ প্রদান করেন।
বৈঠকের সভাপতি বলেন, সংবিধানের আর্টিকেল ৮৪(১) অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত সব রাজস্ব ‘কনসোলিডেটেড ফান্ড’-এই জমা হবে। এর ব্যত্যয় করার সুযোগ নেই। তিনি বেসরকারি যে পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে ফি গ্রহণ করা হয়, তাদের আইবাসের মাধ্যমে ফি গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেন।
পরে বৈঠক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের পাসপোর্ট ফি গ্রহণ কার্যক্রম আইবাসের মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি পাসপোর্ট অধিদপ্তরে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধূরী, এসজিপি, পিবিজিএমএস, এনডিসি, পিএসসি বণিক বার্তাকে বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্টের ফি সংগ্রহ করার কাজটি শুরু হয়েছে। আর ই-চালানের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি নেয়ার বিষয়টির কাজ শুরু হয়েছে, ট্রায়ালও চালানো হয়েছে। শিগগিরই ফি নেয়ার প্রক্রিয়াটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।