প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে যে পরিমাণের শেয়ার ছাড়বে, তার ৭০ শতাংশ ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) জন্য সংরক্ষিত কোটা কমিয়ে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের এমন প্রস্তাব দিয়েছে এসইসি, যা গতকাল জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ খসড়ার ওপর মতামত দিতে বলা হয়েছে।
পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো আইপিওতে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ও আইপিওতে ন্যূনতম কী পরিমাণ শেয়ার ছাড়বে, তাও নতুন করে নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে এসইসি। কোনো কোম্পানি আইপিও আবেদনের পূর্ববর্তী দুই বছরে বোনাস শেয়ার ইস্যু ছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারবে না। তবে আইপিও অনুমোদনের পর কোম্পানিগুলো চাইলে আইপিও শেয়ারের ১৫ শতাংশ প্রাইভেট প্লেসমেন্টে বিক্রি করতে পারবে।
বর্তমান পাবলিক ইস্যু বিধিমালা অনুসারে স্থিরমূল্যে আইপিওতে আসা কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ থাকে, যার ১০ শতাংশ আবার এনআরবিদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। আর এই পদ্ধতিতে আসা আইপিও শেয়ারের মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ ও মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ থাকে। বিধিমালাটি সংশোধন হলে প্রাতিষ্ঠানিকের পাশাপাশি এনআরবিদের সংরক্ষিত আইপিও কোটার পরিমাণ কমবে।
সংশোধিত বিধিমালার খসড়া অনুযায়ী, স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির আইপিও শেয়ারের ৬৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। আগে এনআরবিদের আইপিও কোটা ১০ শতাংশ রাখা হলেও এখন তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ কোটা ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। তবে স্থিরমূল্য পদ্ধতির আইপিওতে মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য সংরক্ষিত কোটা অপরিবর্তিত থাকছে।
বর্তমান বিধিমালায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির শেয়ারে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ, এনআরবি ১০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০ শতাংশ করে শেয়ার বরাদ্দ থাকে। সংশোধিত খসড়ায় যোগ্য বিনিয়োগকারী ও এনআরবিদের কোটা কমিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংরক্ষিত কোটার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে এসইসি। এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের বর্তমান কোটা ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ, এনআরবি কোটা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে আনা হচ্ছে। বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংরক্ষিত কোটা ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব রয়েছে সংশোধনীতে। মূলত আইপিওতে সব আবেদনকারী যাতে শেয়ার পান, তা নিশ্চিতেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন।
আইপিওতে আসা কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা শেয়ার এক বছর ও প্রাইভেট প্লেসমেন্টের শেয়ার দুই বছরের লক-ইন থাকবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে আইপিও আবেদনকারী কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ভিত্তিতে শেয়ার ছাড়ার পদ্ধতি আরোপ করতে যাচ্ছে কমিশন। এজন্য বিদ্যমান পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীর খসড়াতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে স্থিরমূল্য পদ্ধতির আইপিওতে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন আইপিওপরবর্তী অন্তত ৫০ কোটি টাকা থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। এ ছাড়া কোম্পানির মোট শেয়ারের ন্যূনতম ১০ শতাংশ কিংবা ৩০ কোটি টাকার মধ্যে যেটা বেশি হয়, সে পরিমাণের শেয়ার ছাড়ার বিধান ছিল। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আগে ন্যূনতম ৭৫ কোটি টাকার শেয়ার ছাড়তে হতো।
সংশোধনীর খসড়ায় তা পরিবর্তন করে স্থিরমূল্য ও বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির ক্ষেত্রে আইপিওপরবর্তী যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নীত হবে, সেসব কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। এ ছাড়া আইপিওপরবর্তীতে যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থেকে ১৫০ কোটি টাকা হবে, সেসব কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধনের অন্তত ২০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। আর আইপিওপরবর্তীতে যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে, আইপিওতে সেসব কোম্পানিকে অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।
আইপিও আবেদনে কোম্পানিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ভ্যাট চালান সংগ্রহ করে, তার সার্টিফায়েড কপি কমিশনে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যাংক স্টেটমেন্টও জমা দিতে হবে। কমিশন প্রয়োজনে ভ্যাট চালান ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যাচাই করবে।