গত কয়েক কার্যদিবসে দর বৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর শেয়ার। এছাড়া পুঁজিবাজারের দামি শেয়ার বা হাজার টাকা ওপরে শেয়ারের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।
ছয় কার্যদিবসের মধ্যে একদিন সূচক কমেছিল ২০ পয়েন্ট। বাকি প্রতিদিনই বেড়েছে সূচক। একই সঙ্গে লেনদেনেও সাত থেকে আটশ কোটি টাকায় স্থির হয়েছে।
উত্থান পতনের মধ্যে সূচক ও লেনদেনের এমন অবস্থায় নতুন বিনিয়োগসহ পুঁজিবাজার আস্থায় ফিরছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
তাদের বক্তব্য, পুঁজিবাজারে উত্থান পতন থাকবেই। তবে এই উত্থান পতন কতটা দীর্ঘ হচ্ছে সেটিই দেখার বিষয়।
গত কয়েক কার্যদিবসে দর বৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর শেয়ার। এছাড়া পুঁজিবাজারের দামি শেয়ার বা হাজার টাকা ওপরে শেয়ারের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।
জেড ক্যাটাগরিতে আগ্রহ
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজার বেশ কয়েকটি দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির পর্ষদ পুনগর্ঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তারপরও থেকেই মূলত বাড়তে থাকে দুর্বল বা জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার দর।
গুজব আছে, এমন জেড ক্যাটাগরির সব কোম্পানির পর্ষদ পুনগর্ঠন করবে বিএসইসি। আবার চালু হবে এসব কোম্পানি। তখন বর্তমান দামে আর শেয়ার পাওয়া যাবে না।
এমন আলোচনায় আগে যে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার দৈনিক লেনদেন হতো তিন থেকে চার লাখ, এখন সেটির লেনদেন হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ।
যদিও বিএসইসি থেকে এ ধরনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিএসইসি কমিশনার শেখ শামুসদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বন্ধ কোম্পানিগুলো চালু করার জন্য পর্ষদ পুনগঠর্ন করছি, যেন কোম্পানিগুলো আবার চালু হতে পারে। কিন্ত ঢালাও ভাবে সব কোম্পানির পর্ষদ পুনগর্ঠন করা হবে এটি সঠিক নয়।
‘একটি কোম্পানির বন্ধ থাকার চেয়ে আবার চালু হলে তাতে সেই কোম্পানির ও লাভ। সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বিনিয়োগকারীরা। আমরা সেটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছি।’
সোমবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকার শীর্ষে ছিল জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, সম্প্রতি যার পর্ষদ পুনগর্ঠন করা হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স ও জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ফ্যামিলিটেক্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। মিথুন নিটিংয়ের শেয়ার দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।
দামি শেয়ারের দৌরাত্ম্য
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার দর বৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিসহ দামি শেয়ারগুলোর। সোমবারও সেই ধারাবাহিকতা ছিল পুঁজিবাজারে। লেনদেনে ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেডের শেয়ার প্রতি ৪৪ টাকা ৬০ পয়সা দর বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৮৪৬ টাকা। বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশের শেয়ার প্রতি ৫৭ টাকা দর বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭০৯ টাকা। লিন্ডেবিডির প্রতিটি শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৫ টাকা, আগের দিনের তুলনায় দর বেড়েছে ১৫ টাকা ৩০ পয়সা।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের প্রতিটি শেয়ার দর বর্তমানে ১ হাজার ২৩৮ টাকা। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১৫ টাকা ৩০ পয়সা। রেনিটার প্রতিটি শেয়ার দর বেড়েছে ১২ টাকা ৭০ পয়সা। দিন শেষে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮০ টাকা।
বাজার বিশ্লেষকের বক্তব্য
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদের মতে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে একটি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সূচক সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টে আছে। লেনদেন হাজার কোটি টাকা না হলেও একটি স্থিতাবস্থা আছে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য আস্বস্তের।
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার যখনই স্থিতিশীল হতে থাকে তখনই কিছু না কিছু সমস্যা চলে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লভ্যাংশ সীমা বেধে না দিত, তাহলে এ সময়টিতে আরও ভালো অবস্থায় থাকত এ খাত। যদিও এখন অল্প অল্প করে বাড়ছে। তবে তা স্থায়ী হওয়া জরুরি।’
সোমবার তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনসহ দর বেড়েছে। এছাড়া প্রকৌশল খাত, বিদ্যু ও জ্বালানী খাতের শেয়ারের দর বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
খাতভিত্তিক দিনের লেনদেন
সোমবার ডিএসইর লেনদেনে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে আটটির। আর দর কমেছে ১৪টির, পাল্টায়নি আটটির।
প্রকৌশল খাতেও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর পাল্টায়নি। তালিকাভুক্ত ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর পাল্টায়নি ১৩টির, দর বেড়েছে ১৮টির। বাকি ১১টির দর কমেছে।
ব্যাংক বহির্ভূত ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮টির, পাল্টায়নি পাঁচটির।
বিমা খাতের ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির। দর পাল্টায়নি ৭টির; আর কমেছে ২৬টির।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ২১ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির, দর কমেছে ২টির। দর পাল্টায়নি ৩টির।
সূচক ও লেনদেন
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬০৪ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৮ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৫ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১১ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৭ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৪৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১০৭টির ও পাল্টায়নি ১১১টির দর। ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৭২১ কোটি টাকা। আগের দিন ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছিল ৮৭৬ কোটি টাকা। এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৫৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে- সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৬১ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৬২ পয়েন্টে। লেনদনে হওয়া ২৩০টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯২টির, কমেছে ৭৭টির ও পাল্টায়নি ৬১টির। এ সময় সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা।