1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন

উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীদের পকেট ফাঁকা

  • আপডেট সময় : রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১
dse

বস্ত্র খাতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ আয় করে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা স্টাইলক্রাফট ২০১৬ সালে ৮০ শতাংশ, পরের বছর ৪১০ শতাংশ আর ২০১৯ সালে ১৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়। সেই কোম্পানি এখন লোকসানি।

ব্যাপক বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে লোকসানে পড়েছে বস্ত্র খাতের প্রখ্যাত কোম্পানি স্টাইলক্রাফট।

পাঁচ বছর আগে যে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৯৫ টাকা, সেই কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা প্রায় ২৩ গুণ বাড়ার পর এখন তা লোকসানি।

ব্যাপক লাভজনক কোম্পানিটি লোকসানে পড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে যারা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করেছে, তারাও এখন হতাশ।

১৯৮৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি প্রতিবছর ব্যাপক মুনাফা করে আলোচিত ছিল। মাত্র ৬০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৯৫ টাকা মুনাফা করে চমক দেখায়।

এরপর থেকে টানা তিন বছর ব্যাপক হারে বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা করে। শেয়ারসংখ্যা ৬ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজারের বেশি।

পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে কোম্পানি সম্প্রসারণ হবে, এই আশায় উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীদের পকেট ফাঁকা হয়েছে।

ঈর্ষণীয় মুনাফা থেকে ক্রমাগত ডুবতে থাকার কারণ জানতে কোম্পানি সচিব এডমান্ড গোডার নম্বরে বহুবার কল করলেও কেউ ফোন ধরেননি।

তবে গত ১ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানির পক্ষ থেকে লোকসানের একটি কারণ ব্যাখ্যা করা হয়। সেদিন বলা হয়, শেয়ারপ্রতি আয়ে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণ কোভিড নাইনটিনের কারণে বিক্রি কমে যাওয়া।

এর আগে ব্যাপক হারে বোনাস শেয়ার দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে কোম্পানি সম্প্রসারণের কথা জানানো হয়।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের বোনাস শেয়ারের নাম যা হয়েছে তা পুরোটাই আইনবহির্ভূত। নিয়ম হচ্ছে, কোম্পানি চাইলেই বোনাস দিতে পারবে না। কেন বোনাস দিতে চাচ্ছে, তার কারণ অবশ্যই জানাতে হবে। এবং সেটি কতটা যৌক্তিক তা-ও দেখতে হবে, থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিএসইসির অনেক দায়িত্ব আছে। কিন্তু আগের যে কমিশন ছিল, তারা সেটি ভালোভাবে পালন করেনি। দেশীয় কোম্পানির সিংহভাগই বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ারের দর ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু কিছু বহুজাতিক কোম্পানি এটা পেরেছে।’

বোনাস শেয়ার আর আয়ে পতন সমানুপাতিক

স্টাইলক্রাফট নিয়ে পুঁজিবাজারে আলোচনা ছিল বরাবর। শেয়ারপ্রতি ১০০ টাকার আশপাশে আয়, প্রতিবছরই তা বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারমূল্যও বাড়ত নিয়মিত।
১০ টাকা অভিহিত মূল্যের দেশি উৎপাদনকারী কোম্পানির হিসেবে গত ১০ বছরে মুন্নু অ্যাগ্রোর পরে এই কোম্পানির শেয়ারদরই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

২০১৭ সালে কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো ৮০ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১০টি শেয়ারে আটটি শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দেয়। তখন শেয়ারের দাম বেড়ে ২ হাজার ৮০০ টাকার মতো হয়ে যায়।

পরের বছর কোম্পানিটি আরও চমক দেখায়। ওই বছর প্রতি ১০০ শেয়ারে বোনাস শেয়ার হিসেবে দেয়া হয় ৪১০টি শেয়ার। আরও ব্যাপক বোনাস শেয়ার দেয়া হবে, এই খবরে দাম ছাড়ায় ৪ হাজার ৯০০ টাকা।

এই দরে যারা শেয়ারটি কিনেছেন, তারা পরের বছর আরও দেড় শ শতাংশ অর্থাৎ দুটি শেয়ারের বিপরীতে আরও তিনটি শেয়ার বোনাস হিসেবে পাওয়ার পরও বিপুল পরিমাণে লোকসানে আছেন।

৪ হাজার ৯০০ টাকায় একটি শেয়ার যারা পেয়েছেন, ২০১৭ সালে ৪১০ শতাংশ বোনাস যোগ হওয়ার পর শেয়ারের দাম সমন্বয় হয় ৯৬০ টাকা। পরের বছর ১৫০ শতাংশ বোনাস যোগ হওয়ার পর দাম সমন্বয় হয় ৩৮৪ টাকা ৩০ পয়সা।

এরপর কোম্পানিটি আর বোনাস শেয়ার ইস্যু করেনি। এখন শেয়ারপ্রতি দাম ১৪৬ টাকা ৩০ পয়সা।

অর্থাৎ তিন বছর পর বর্তমানের সমন্বয় হওয়া শেয়ারমূল্যের হিসাবে শেয়ারপ্রতি লোকসান ২৩৮ টাকা। আগের দুই বছরের বোনাস শেয়ার বিবেচনায় নিলে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৪ টাকা।

অর্থাৎ ৪ হাজার ৯০০ টাকায় কিনে যিনি ৪১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার নিয়ে এখনও ধরে রেখেছেন, তার এই পরিমাণ লোকসান এখন।

ফ্লোর প্রাইসের কারণে আরও নিচে নামতে পারছে না দাম

এই কোম্পানির দামও মুন্নুর মতো কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছে। ফ্লোর প্রাইসেও এই শেয়ারের হাতবদল হচ্ছে না বললেই চলে।

গত বছর মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেয়া হয়, যার নাম দেয়া হয়েছে ফ্লোর প্রাইস।

কোম্পানির আয়, মৌলভিত্তি বিবেচনা না করেই কেবল বাজারমূল্যের বিবেচনায় এই ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাধারণত কোম্পানি খারাপ করতে থাকলে শেয়ারদর নেমে আসে। কিন্তু স্টাইলক্রাফট খারাপ করতে থাকলেও এর শেয়ারদর বেঁধে দেয়ায় ওই দামের চেয়ে নামতে পারছে না।

কিন্তু এই দাম যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না, তার প্রমাণ শেয়ার হাতবদলের সংখ্যা।

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এক দিনই কেবল বলার মতো শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
৯ ফেব্রুয়ারি ৬৪ হাজার ১৭১টি শেয়ার কেনার অর্ডার ছিল ফ্লোর প্রাইসে। একদিন সর্বনিম্ন ৩০০টি শেয়ারও হাতবদল হয়েছে।

কোম্পানিটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর কারণ এর ব্যালান্সশিট ক্রমাগত নিম্নমুখী হওয়া।

গত বছর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৫৩ পয়সা আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা।

এরই রকম অভিজ্ঞতা আরও

গত এক দশকে যেসব কোম্পানি মাত্রাতিরিক্ত বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন হঠাৎ করে বাড়িয়েছে, তার সিংহভাগের পরিণতিই স্টাইল ক্রাফটের মতো।
মুন্নু স্টাফলার পরিশোধিত মূলধন প্রায় ছয় গুণ বাড়িয়ে কোম্পানির নাম ও ব্যবসা পালটে মুন্নু অ্যাগ্রো হওয়ার পর কোম্পানির আয় কমেছে। সেখানেও উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে লোকসান হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

দেড় শ শতাংশ বোনাস শেয়ার নিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরাও এখন হতাশ। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে দেড় শ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দাম ২২১ টাকা উঠে যায়। এই লভ্যাংশ নিয়েও লোকসান হয়েছে। প্রথমে ৫০ ও পরে ১২৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার পর জেমিনি সি ফুডের শেয়ারমূল্য ব্যাপকভাবে বাড়লেও পরে বিনিয়োগকারীদের পকেট ফাঁকা করেছে কোম্পানিটি।

২০১২ সালে ডেলটা লাইফ একটির বিপরীতে ২১টি বোনাস শেয়ার দেয়াকে কেন্দ্র করে শেয়ারদর বেড়ে আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ার পর তাতে বিনিয়োগকারীরা টাকা হারিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন।

২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে ১০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার পর ফ্যামিলিটেক্সের শেয়ারের মূল্য ৭৪ টাকা ৮০ পয়সা হয়ে যায়। পরে তা কমতে কমতে ২০২০ সালে ১ টাকা ৬০ পয়সায় নামে।

ব্যতিক্রম বহুজাতিক দুই কোম্পানি আর দেশি ফার্মা এইড

মাত্রাতিরিক্ত বোনাস শেয়ার দিয়ে দরপতনের দৌড়ে ব্যতিক্রম বহুজাতিক দুই কোম্পানি- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা বিএটিবিসি ও বার্জার পেইন্টস আর দেশি কোম্পানি ফার্মা এইড।

তবে বহুজাতিক দুই কোম্পানির ক্ষেত্রেও ব্যাপক হারে বোনাস দেয়ার পর উচ্চমূল্যে কেনা শেয়ারের দাম সমন্বয়ের পর লোকসান কাটিয়ে উঠতে দুই বছরের বেশি সময় লেগেছে বিনিয়োগকারীদের।

বিএটিবিসি ২০১৮ ও ২০২০ সালের জন্য ২০০ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন ৯ গুণ বাড়িয়েছে।

শেয়ারটি ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৮০০ টাকা উঠে যায়। ৯ গুণ পরিশোধিত মূলধন হওয়ার পর সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করা দাম দাঁড়ায় ৫৩৩ টাকা। তবে সবশেষ দর ৫৫৬ টাকা।

একইভাবে ২০১৮ সালে ১০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়া বার্জার পরিশোধিত মূলধন ২৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪৬ কোটি করেছে।

বোনাস শেয়ার ঘোষণার পর দাম বেড়ে তিন হাজার টাকা ছুঁই ছুঁই হয়ে যায়। সমন্বয়ের পর দাম হয় দেড় হাজার টাকার আশপাশে। এখন দাম দেড় হাজার টাকার কিছু বেশি।

২০১০ সালে ফার্মা এইড ৫০০ শতাংশ অর্থাৎ একটি শেয়ারের বিপরীতে পাঁচটি বোনাস শেয়ার দেয়ার পর ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারটি ১৮ হাজার ৭০০ টাকা হয়ে যায়।

সেদিন যারা কেনেন, তাদের সমন্বয় করা দাম পড়ে ৩ হাজার ১১৬ টাকা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্য হওয়ার পর সে দাম দাঁড়ায় ৩১১ টাকা ৬০ পয়সা।

বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর ছিল ১৪৬ টাকা ৩০ পয়সা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ