1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

বেশি বোনাসের করুণ ফল

  • আপডেট সময় : শনিবার, ৬ মার্চ, ২০২১

প্রথমে ৩৫০ শতাংশ। পরে ২০ শতাংশ ও ১০ শতাংশ।

২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মুন্নু অ্যাগ্রোর বোনাস শেয়ারের হিসাব এটি।

প্রথমে কোম্পানিটির নাম ছিল মুন্নু স্টাফলার। তখন তারা উৎপাদন করত পাটকলের যন্ত্রাংশ। এখন উৎপাদন করে কৃষি যন্ত্রপাতি।

এই ব্যবসা পরিবর্তনের জন্য পরিশোধিত মূলধন ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয় তিন বছর আগে। আর তখন একে কেন্দ্র করে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে যায় ২০ গুণের মতো।

কিন্তু যারা উচ্চমূল্যে সেই শেয়ার কিনেছেন, তারা এখন ব্যাপক হতাশ। কারণ বিপুল পরিমাণ লোকসান দিয়েছেন তারা। ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ার দর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের নিচে নামতে পারছে না বটে। কিন্তু লোকসান গুনে কেউ শেয়ার বেচতেও পারছেন না। কারণ এই ফ্লোর প্রাইসেও নেই ক্রেতা।

যে কোম্পানির শেয়ার দর ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে থাকত, ২০১৮ সালে সেটি হঠাৎ করেই বাড়তে বাড়তে চলে যায় ৫ হাজার ৮০০ টাকায়।

১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে তখন কাজ করেছে ভালো লভ্যাংশ দিয়ে কোম্পানি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা।

ওই বছর কোম্পানিটি সাড়ে ৩০০ শতাংশ বোনাস অর্থাৎ প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে সাড়ে ৩০০টি শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দেয়।

ওই বছর উচ্চ মূল্যে যারা শেয়ারটি কিনেছেন, তাদের সবাই পড়েন বিপাকে।

বোনাস শেয়ার যোগ হওয়ার পর ৫ হাজার ৮০০ টাকার শেয়ারের দাম সমন্বয় হয় এক হাজার ২৮৮ টাকা।

পরের দুই বছর কোম্পানিটি যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয় লভ্যাংশ হিসেবে।

এই হিসাবে তিন বছর যিনি শেয়ারটি ধরে রেখেছেন, তার শেয়ারের দাম পড়ে ৯৭৬ টাকা ৪০ পয়সা। কিন্তু এর এখন বাজার মূল্য কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছে ৭৯৪ টাকা ৮০ পয়সায়।

তাও প্রতি শেয়ারে বর্তমানে লোকসান ১৮১ টাকা ৬০ পয়সা। আর তিন বছরের বোনাস শেয়ার বিবেচনায় আনলে আগের দামে লোকসান দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা।

কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার কথা বলা হচ্ছে এই কারণে যে, গত বছর প্রতিটি কোম্পানির সর্বনিম্ন শেয়ারদর বেঁধে দিয়ে যে ফ্লোর প্রাইস ঘোষণা করা হয়, তাকে মুন্নু অ্যাগ্রোর এই দাম ঠিক করা হয়।

এই দাম ঠিক করার পর ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার যোগ হলেও ফ্লোর প্রাইস পাল্টায়নি। পাল্টালে দাম দাঁড়াতে পারত ৭২২ টাকা ৬০ পয়সা।

কিন্তু বিনিয়োগকারীদের কাছে এর বর্তমান দাম যে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না, তা স্পষ্ট কোম্পানিটির লেনদেনের চিত্রে।

এই দামে গত এক মাসে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। প্রতিদিন বিক্রেতা থাকে, কিন্তু ক্রেতা থাকে না কেউ।

কোম্পানি সম্প্রসারণ, ব্যবসা পরিবর্তনের পর মুনাফায় বৃদ্ধি হয়েছে, এমন নয়। ২০১৮ সালে ৩৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার সময় শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৮ টাকা ৭৪ পয়সা। শেয়ার সংখ্যা বাড়ায় পরের দুই বছর এই আয় কমে হয় যথাক্রমে ২ টাকা ৭৪ পয়সা ও ২ টাকা ১২ পয়সা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আয় হয়েছে এক টাকা ১৭ পয়সা।

কোম্পানি সচিব বিনয় পাল বলেন, ‘২০১৮ সালে আমাদের কাছে বিনিয়োগযোগ্য নগদ অর্থ ছিল। তখন আমাদের পরিশোধিত মূলধন ছিল মাত্র ৪৬ লাখ টাকা। আমাদের কোম্পানি সম্প্রসারণের জন্য তখন বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা ৩৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিলাম। নগদ লভ্যাংশ দিলে টাকাগুলো চলে যেত। তাই বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আমরা আমাদের কোম্পানির সম্প্রসারণে ব্যয় করেছি।’

তারপরও কোম্পানিটি কেন ভালো হয়নি প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের আগে জুট মেশিনের স্পেয়ার পার্টস তৈরি করতাম। সেখানেই আমাদের টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। ২০১৯ সালে এসে আমরা আমাদের কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে অ্যাগ্রো বেইস পোডাক্ট তৈরিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন আমরা হারভেস্টিং মেশিন, ভুট্টা মাড়াই মেশিন তৈরি করছি।

‘এই প্রজেক্টের বয়স বেশি দিন না হওয়ায় এখনও মুনাফা আসেনি। তবে আগামীতে ভালো সম্ভাবনা আছে।’

কোনো কোম্পানি অনেক বেশি বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর খবরে যারা বিনিয়োগ করেছেন, মুন্নু অ্যাগ্রোর মতো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা বড় লোকসানে পড়েছেন। তবু অনেক বেশি বোনাস শেয়ার দেবে, এমন খবরে বাড়তি দাম দিয়ে হলেও শেয়ার কিনতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কমতি নেই।

২০১০ সালের পর থেকে শতভাগের বেশি বোনাস শেয়ার দেয়া প্রায় সব কোম্পানির ক্ষেত্রেই একই চিত্র দেখা গেছে।

২০১২ সালে ডেল্টা লাইফ ২১০০ শতাংশ অর্থাৎ একটি শেয়ারের বিপরীতে ২১টি, ২০১৩ সালে ফ্যামিলিটেক্সের ১০০ শতাংশ, ২০১৭, ১৮ ও ১৯ সালে স্টাইল ক্রাফটের যথাক্রমে ৮০, ৪১০ ও ১৫০ শতাংশ, জেমিনি সি ফুড ২০১৬ ও ২০১৭ সালে যথাক্রমে ৫০ ও ১২৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ডাচ বাংলা ব্যাংক ১৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর পর কোম্পানিগুলো ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ঘটাতে পারেনি।

এ কারণে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণে লোকসানে আছেন বিনিয়োগকারীরা।

সাম্প্রতিক সময়ে কেবল বহুজাতিক দুটি কোম্পানিই শতভাগ বা তার চেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার ইস্যুর পরও দর ধরে রাখতে পেরেছে।

কোম্পানি দুটি হলো ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড বা বিএটিবিসি ও বার্জার পেইন্টস। যদিও বোনাস শেয়ার নেয়ার পর লোকসান কাটাতে বেশ কিছু সময় লেগেছে বিনিয়োগকারীদের।

২০১৮ সালে ২০০ শতাংশ বোনাস ও শেয়ার প্রতি ৫০ টাকা নগদ এবং ২০২০ সালের জন্য আবার ২০০ শতাংশ বোনাস ও শেয়ার প্রতি ৬০ টাকা নগদ মুনাফা দিয়েছে বিএটিবিসি।

দুই বছরে ধরে রাখার পর বিনিয়োগকারীরা ২০১৮ সালে উঠা চার হাজার ৮০০ টাকার সঙ্গে সমন্বয় করতে পেরেছেন।

একই পরিস্থিতি বার্জার পেইন্টসের।

২০১৮ সালে ১০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম তিন হাজার টাকার কাছাকাছি চলে যায়। দুই বছর পর এখন শেয়ার পর দেড় হাজার টাকার কিছু বেশি। ফলে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ‘যেসব কোম্পানি বড় অংকের বোনাস শেয়ার দেয়, সেসব কোম্পানিতে মূলত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হয় বেশি। বিনিয়োগকারীরা মনে করে সমন্বয়ের পর দর বাড়লে তারা লাভবান হবেন। কিন্ত যখন দেখা যায় সেই শেয়ার আর বিক্রি করা যাচ্ছে না তখনই সমস্যা তৈরি হয়।

‘এ জন্য কোম্পানির কাছে টাকা থাকলেও সেটির বিপরীতে বড় অংকের বোনাস দেয়ার প্রবণতা বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিনিয়োগকারীদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্যের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা বলে বোনাস দিয়ে সেই অর্থ বিনিয়োগ করে না। ফলে কোম্পানির আয় বাড়ে না। এতে সার্বিক কোম্পানি ও শেয়ার দরের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বিএসইসিকে অনেক আগেই বলেছিলাম যেসব কোম্পানি ন্যূনতম পাঁচ বছর টানা নগদ লভ্যাংশ দেবে না তাদের কে যেন বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার অনুমতি না দেয়া হয়। কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েই দুই তিন বছর টানা বোনাস দিয়ে পরে আর টিকে থাকতে পারে না। কিন্ত বড় অঙ্কের বোনাস লভ্যাংশ প্রলোভনে শেয়ার দর বাড়লেও পরে তা আর টিকে না। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ