পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চারশ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এটি বর্তমান বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই কম।
ব্যাংকগুলোকে পুঁজিাবজারে বিনিয়োগের জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে। তারা কতটুকু বিনিয়োগ করেছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘সূচকের উত্থান পতনে এখন বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই আতঙ্কিত। এটা থেকে তাদের বের করে আনতে হবে। এজন্য নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের শেয়ার যে দামে আছে তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ লভ্যাংশ সংক্রান্ত নির্দেশনায় ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। কিন্ত তারপরও কেন আগ্রহী নন বিনিয়োগকারীরা তা আমারও বোধগম্য নয়।’
লেনদেন কমার কারণ কী হতে পারে- এমন প্রশ্নে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘নতুন কিছু কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেক অর্থ আটকে গেছে। রবির দর আরও কমেছে। নতুন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কিছুটা বাড়লে হয়তো বাজার আবার চাঙ্গা হবে।’
খাতভিত্তিক অবস্থা
ব্যাংক খাতের ৩০ ব্যাংকের মধ্যে শেয়ারের দর বেড়েছে মাত্র দুটির। কমেছে ১১টির। বাকি ১৭টি ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে।
বিমা খাতের লেনদেনে ছিল একই চিত্র। ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র তিনটির। কমেছে চারটির। বাকি ৪২টির দর কমেছে।
প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে দুটির। কমেছে ১৮টির। আর পাল্টায়নি ২২টির।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র একটির, পাল্টায়নি পাঁচটির। আর বাকি ১৫টির দর কমেছে।
কী অবস্থা ব্ল চিপ কোম্পানির
পুঁজিবাজারে প্রায় সাড়ে তিনশ কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত থাকলেও তার থেকে বাছাই করে ত্রিশটি কোম্পানি নিয়ে গঠন করা হয়েছে ব্ল চিপ সূচক।
সেখানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে আর্থিক অবস্থা সবচেয়ে ভালো, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার অন্যদের জন্য উদাহরণ সেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত।
ভালো লভ্যাংশসহ এসব কোম্পানির স্থিতিশীল বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে চিহিৃত করা হয়।
এই কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত এমন ব্ল চিপ ৩০টি কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র একটি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। দর পাল্টায়নি তিনটির। বাকি ২৬টির দর কমেছে।
সোমবার ব্ল চিপ সূচকে সবচেয়ে বেশি কমেছে সিটি ব্যাংকের ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এরপরেই ছিল বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড (বেট বাংলাদেশ) তিন দশমিক ৪৫ শতাংশ। বেট বাংলাদেশের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫৫ টাকা।
লেনদেনে এগিয়ে থাকলেও বেক্সিমকো লিমিটেড শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
ব্র্যাক ব্যাংকের ২ দশমিক ২২ শতাংশ, বিএসআরএম লিমিটেডের ১ দশমিক ৪০ শতাংশ, বেক্সিমকো ফার্মার ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দর কমেছে।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সস ৯০ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট কমে যাওয়ায় বর্তমান অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২০ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২২ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৪৮ দশমিক ২০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৭ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৩৪৩টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ২৩টির, কমেছে ২১৯টির ও পাল্টায়নি ১০১ টির।
যে ১০১টির দর কমেনি, তার মধ্যে অন্তত ৮৪টি কোম্পানির দর এর চেয়ে কমা সম্ভব নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেঁধে দেয়া ফ্লোর প্রাইসেই আছে এগুলোর দাম।
লেনদেন হয়েছে ৪৬৭ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬৯৪ কোটি টাকা। এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ২২৭ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ–সিএসই প্রধান সূচক ডিএসএসপিআই ২৫৬ দশমিক ২৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫৬৪ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ১৮৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির, কমেছে ১২২টির ও পাল্টায়নি ৩৮টির। লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি টাকা।
আগ্রহ অনাগ্রহের কোম্পানি
মন্দা বাজারে সোমবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছিল বি ক্যাটাগরির কোম্পানি আলহাজ টেক্সটাইল, যার শেয়ার দর বেড়েছে ১০ শতাংশ।
এই কোম্পানির শেয়ারের বিক্রেতাই ছিল না।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়ালটনের শেয়ার দর ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে।
ইউনিলিভারের শেয়ার দর বেড়েছে ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ।
গোল্ডেনসনের শেয়ার দর বেড়েছে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।
দর বৃদ্ধির তালিকায় আরও আছে আরডি ফুড, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, রেকিডবেনকিউসার, এম আই সিমেন্ট।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল পাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, যার দর কমেছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
নতুন শেয়ার মীর আকতুর হোসাইন লিমিটেডের শেয়ার দর কমেছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
রবির শেয়ার দরও কমেছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দাম কমে হয়েছে ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা।
সবচেয়ে বেশি দর পতনের তালিকায় আরও ছিল জুট স্পিনার্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তাওফিকা ফুড অ্যান্ড অ্যগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (লাভেলো আইসক্রিম) ইত্যাদি।
লেনদেনে এগিয়ে যেসব কোম্পানি
শেয়ার দর কমলেও লেনদেনের শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছিল বেক্সিমকো লিমিটেড।
কোম্পানিটির এক কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৫ কোটি টাকায়।
রবির ৯৫ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়।
বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর দুই লাখ ৫০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি টাকায়।
লংকাবাংলা ফিন্যান্সের মোট ৭১ লাখ ৬৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি টাকায়।