ডিএসই এসএমই বোর্ডসহ অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এগুলোর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। এর কারণে লেনদেন সময়ে কিছুটা জটিলতা হচ্ছে। তবে তা সাময়িক সমস্যা।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ- ডিএসইতে লেনদেন শুরু সকাল ১০টায়। ব্রোকারেজ হাউস থেকে একের পর এক অর্ডার আসছে। কেনাবেচাও হচ্ছে অনেক।
কিন্তু ওয়েবসাইটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। সকাল সোয়া ১০টায় দেখানো হয় মাত্র একটি কোম্পানি জনতা ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে।
তার প্রায় কয়েক সেকেন্ড পর দেখানো হয় ৭০টির বেশি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেশ কিছু ব্রোকার হাউস থেকেই এমন সমস্যার কথা জানানো হয়।
সিটি ব্যাংক ক্যাপিটালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় সকালে কিছুটা সমস্যা হলেও দ্রুতই তা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ট্রেডিং কোম্পানির পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়।
লেনদেনের এমন ত্রুটির বিষয়ে ডিএসইতে যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর উপ মহাব্যবস্থাপক ও মুখপাত্র শফিকুর রহমান বলেন, ‘সকালে লেনদেন শুরুর পর কিছুটা কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। মূলত মাল্টি মার্কেট সিস্টেম আপডেট করার পরিপ্রেক্ষিতে এমন সমস্যা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিএসই এসএমই বোর্ডসহ অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এগুলোর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। এ কারণে লেনদেন সময়ে কিছুটা জটিলতা হচ্ছে। তবে তা সাময়িক সমস্যা।’
ডিএসইর লেনদেনের জটিলতা কাটিয়ে উঠতে কমিটিও করা হয়েছে।
পুঁজিবাজারের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসাবে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানকে নেয়া হয়েছে। তারা হলো সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোটিয়াম।
চুক্তি অনুযায়ী তারা ৩৭ মিলিয়ন ডলার বা ৩১৪ কোটি টাকার প্রযুক্তি সহায়তা দেবে ডিএসইকে। কিন্ত ২০১৮ সালে এই চুক্তি হলেও এখনও এই অর্থ ব্যয় করা যায়নি।
এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তি উন্নয়নের যে অর্থ পাওয়ার কথা, সেটি পেলেও ব্যবহার করা যায়নি। ২০২৩ বা ২০২৪ সালে এটি ব্যবহার করা হবে। তখন পুঁজিবাজারে ১০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হলেও কোনো সমস্যা হবে না।’
ব্রোকার হাউসগুলো প্রতিদিন ডিএসইকে যে লেনদেনের তথ্য প্রদান করে, সেই ম্যাচিং ইঞ্জিন নেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক থেকে। অপরটি ট্রেডিং সফটওয়্যার, যা নেয়া হয়েছে ফ্রান্স থেকে। দুটি প্রযুক্তি ব্যবহারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে।
শাকিল রিজভী বলেন, বর্তমান ট্রেডিং সিস্টেমে কিছুটা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। কারণ আগে শেয়ার লেনদেনের অর্ডার আসতো লট হিসাবে, এখন লট না থাকায় অর্ডার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তারপরও বর্তমানে যে সফটওয়্যার আছে সেটি হালনাগাদ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালেই আমরা চীনের প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করব। তখন সফল হলে চীনের প্রযুক্তিতে চলবে পুঁজিবাজার।
২০১২ সালে ডিএসইর সার্ভারের কারিগরি ক্রটির কারণে লেনদেন শুরু হয় এক ঘণ্টা পর। আর ২০১০ সালে দুইবার এমন কারিগরি ক্রটির মুখে পড়ে ডিএসই।
২০১৩ সালে জানুয়ারিতে ওএমএস প্লাসের জটিলতার কারণে লেনদেনের শুরুতে ব্রোকারেজ হাউসগুলো মূল সার্ভারে লগ-ইন করতে পারেনি।
২০১৫ সালের ২৪ মে ডিএসই সার্ভারে কারিগরি ত্রুটির কারণে লেনদেন তিন ঘণ্টা ৫০ মিনিট বন্ধ থাকে।
সর্বশেষ গত ১১ জানুয়ারিও ডিএসই সার্ভারে কারিগরি ক্রটির কারণে স্বাভাবিক লেনদেন বিঘ্নিত হয়। সেদিন বেলা দেড়টার পর থেকে ট্রেডিং সিস্টেমের ত্রুটির কারণে শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয় আদেশ কার্যকর হয়নি। এ নিয়ে ডিএসইতে স্মারকলিপিও দিয়েছিল বিনিয়োগকারীরা।
সমস্যা মোবাইল অ্যাপেও
গত ১১ জানুয়ারি থেকে ডিএসইর মোবাইল অ্যাপ হালনাগাদ করার কাজ করা হয়। এ সময় বিনিয়োগকারীরা ৪৫ মিনিট অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেননি ।
একই সঙ্গে লেনদেন শেষ হয় বেলা আড়াইটায়। কিন্ত কোনো কোনো সময় পৌনে তিনটাতেও দিনের আপডেট তথ্য পাওয়া যায় না।
প্রায়শ লেনদেনের এমন জটিলতার মুখে পড়লেও লেনদেনে থাকা ব্রোকার হাউস থেকে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার শুরু করে বিনিয়োগকারীরা। অভিযোগও বিস্তর।
গত ১০ জানুয়ারি ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১১ জানুয়ারি থেকে অ্যাপের অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-ওএমএস সফটওয়্যার হালনাগাদ করা হবে। এর জন্য লেনদেন শুরুর প্রথম ১৫ মিনিট ও শেষ ৩০ মিনিট অ্যাপে শেয়ার লেনদেন করা যাবে না।
পরে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে লেনদেনে পুরো সময় ব্যবহার করা শুরু হয় এই অ্যাপ।
অ্যাপ পুরো সময় ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হলেও এখনও পুঁজিবাজারভিত্তিক ফেসবুক পেজগুলোকে ডিএসই অ্যাপের সমালোচনা করা হয়। এবং অভিযোগ করা হয়, অ্যাপ যথাযথভাবে কাজ করছে না।