1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন

ব্যাপক লাভে থাকা কোম্পানিটি এখন গুনছে লোকসান

  • আপডেট সময় : রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
Heidelberg-CEMENT

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক সিমেন্ট কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড গত দুই বছর ধরে লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করছে বিনিয়োগকারীদের। মুলত উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশের শীর্ষস্থানীয় সিমেন্ট উৎপাদনকারী এ কোম্পানিটি গত দুই বছরে মুনাফা থেকে লোকসানে রয়েছে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির লোকসান হয় ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার কিছু বেশি। তবে করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর আয়ে উল্লম্ফন হলেও ব্যতিক্রম বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ।

ধারাবাহিকভাবে আয় কমছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের। ব্যাপক লাভে থাকা কোম্পানিটি এখন গুনছে লোকসান। আবার আয় ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলেও কোম্পানির বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু উৎপাদন ও বিপণন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। যদিও বেশ কিছু ব্যবসায়িক উদ্যোগে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে তারা।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের পর থেকে ক্লিংকারের মূল্য প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে সিমেন্টের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। তবে ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিক্রয়মূল্য বাড়েনি। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা বেশি থাকায় তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে বিক্রয়মূল্য বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে দেশের সিমেন্ট শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে সাড়ে ৫ কোটি মেট্রিক টন। আর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ কোটি মেট্রিক টনের। দেশে চাহিদার তুলনায় সিমেন্টের উৎপাদন সক্ষমতা বেশি থাকায় তীব্র প্রতিযোগিতাও রয়েছে।

এর ফলে এক বছরে বস্তাপ্রতি সিমেন্টে প্রায় ৫৫ টাকা ব্যয় বাড়লেও বিক্রির ক্ষেত্রে একই হারে দাম বাড়াতে পারেনি সব কোম্পানি। বর্তমানে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর মধ্যে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের উৎপাদন ব্যয় সবচেয়ে বেশি। কোম্পানিটির সিমেন্ট বিক্রি থেকে আয়ের প্রায় ৯৩ শতাংশ ব্যয় করে উৎপাদনে।

অথচ লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যয় কোম্পানির মোট বিক্রির মাত্র ৭০ দশমিক ৭১ শতাংশ। লাফার্জের নিজস্ব ক্লিংকারের খনি থাকায় তাদের উৎপাদন ব্যয় সবচেয়ে কম। তালিকাভুক্ত কনফিডেন্স সিমেন্ট ৮৬ শতাংশ, প্রিমিয়ার সিমেন্ট ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ, এম আই সিমেন্ট ৮৮ দশমিক ৯ শতাংশ ও মেঘনা সিমেন্টের ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয় হয় উৎপাদনে।

বরাবর বেশ মুনাফা দেয়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। ওই বছর কোম্পানির লোকসান হয় ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার কিছু বেশি। চলতি বছরের পরিস্থিতিও ভালো নয়। আগের বছরের ১২ মাসের লোকসান আর চলতি বছরের ৯ মাসের লোকসান প্রায় সমান। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি লোকসান করেছে ১৭ কোটি সাড়ে ৭ লাখ টাকার মতো।

২০১৬ সালে ১৫০ কোটি ৭৮ লাখ, ২০১৭ সালে ৮০ কোটি ৩১ লাখ, ২০১৮ সালে ৮০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা মুনাফা করে তারা। এরপর থেকে পুরোপুরি লোকসানে যায় ব্যালান্স শিট। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে বরাবরই ছিল কোম্পানিটি। কিন্তু ক্রমাগতভাবে খারাপ করতে থাকায় সেই আগ্রহে ভাটা পড়েছে। তবে কী কারণে এটি খারাপ করছে, সেই জিজ্ঞাসা রয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

কোম্পানিটির আর্থিক ভিত ছিল বরাবরই ভালো। পণ্যমান নিয়েও প্রশ্ন ছিল না কখনও। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, উৎপাদন এবং পণ্য বিক্রি দুটোই ভালো চলছে। ব্যবসা সম্প্রসারণে কাঁচপুরে নিজস্ব জেটিও নির্মাণ হয়েছে। একাধিক কোম্পানি হাইডেলবার্গের সঙ্গে একীভূত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের প্রভাবে কোম্পানির আয় বাড়ার কথা। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা।

বার্ষিক নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে কোম্পানি ১ হাজার ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার সিমেন্ট বিক্রি করেছিল। ২০১৬ সালে তা ১ হাজার ৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে বিক্রি আরও বেড়ে হয় ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে সমাপ্ত বছরে বিক্রি আরও বেড়ে হয় ১ হাজার ১৯৮ কোটি টাকায়। করোনার মধ্যে সিমেন্ট বিক্রি তুলনামূলক কমলেও কোম্পানির জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৯ মাসের অনিরীক্ষিত হিসাব বলছে, এই সময়ে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৮১০ কোটি ৬৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার।

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে জুলাইয়ের পর দেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। কারখানাগুলো উৎপাদনে ফিরেছে। ধীরগতির উন্নয়নেও লেগেছে গতি। ফলে শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-নভেম্বর ও ডিসেম্বর) কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যের বেচাবিক্রি তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে।

এর ধারাবাহিকতা থাকলে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ব্যবসা ২০১৯ সালের অর্জিত রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিক্রি বাড়ছে, তাহলে লাভজনক কোম্পানি কেন লোকসানিতে? এমন প্রশ্নে কোম্পানি সচিব ইমদাদুল হক এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। বেড়েছে পরিচালন ও বিপণন খরচ। কিন্তু যে হারে খরচ বেড়েছে সিমেন্টের দাম সে হারে বাড়েনি।’

তিনি বলেন, ‘অগ্রিম আয়করকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখন চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করছে। এর ফলে কোম্পানি ২০১৯ সালে লভ্যাংশ ঘোষণায় যেতে পারেনি। ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি অগ্রিম আয়কর হিসাব সমন্বয় করতে গিয়ে কোম্পানিকে চাপের মুখে থাকতে হচ্ছে। মূলত এসবের প্রভাবেই এখন হাইডেলবার্গ লোকসানিতে পরিণত হয়েছে।’

অবশ্য এই মন্দা বেশি দিন থাকবে না বলে আশাবাদী ওই কর্মকর্তা। বলেন, ‘অচিরেই আমরা ঘুরে দাঁড়াব। কারণ, উৎপাদনে খরচ কিছুটা হলেও কমিয়ে আনার পাশাপাশি বিক্রয় বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা বাজার অংশীদারত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ‘এ ছাড়া চলতি মাসেই এমিরেটস সিমেন্ট ও এমিরেটস পাওয়ার কোম্পানি নামে দুইটি প্রতিষ্ঠান হাইডেলবার্গের সঙ্গে একীভূত হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে কোম্পানির ব্যবসার প্রসার ঘটবে।’
কর্মকর্তারা জানান, সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিনির্ভর।

২০১৬ সালের পর থেকেই ক্লিংকারের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। একই সময়ে জ্বালানি ও গ্যাসের মূল্যও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ ছাড়া সরকার সড়কে মালামাল পরিবহনে এক্সেল লোড নীতিমালা কার্যকর করায় সিমেন্ট শিল্পের ব্যয় আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে হাইডেলবার্গে।

বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ কমতে কমতে শূন্য, পড়ে গেছে শেয়ারের দর। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৩৪০ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৩৪ টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করে হাইডেলবার্ডের পরিচালনা পর্ষদ। পরের বছর লভাংশ কমে হয় ৩০০ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৩০ টাকা। ২০১৬ সালেও দেয়া হয় সমপরিমাণ লভ্যাংশ। কিন্তু ২০১৭ সালে লভ্যাংশ কমে হয় অর্ধেক। ওই বছর ১৫০ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা লভ্যাংশ পায় শেয়ারধারীরা।

এর পরের বছর আরও অর্ধেক, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি সাড়ে ৭ টাকা অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। এরপর থেকে হতাশা। আয় ও লভ্যাংশ কমার প্রভাব পড়েছে কোম্পানির শেয়ার মূল্যে। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার ৫০০ থেকে প্রায় ৬০০ টাকার মধ্যে ছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে গত বছরের মাঝামাঝি নেমে আসে ১২৫ টাকায়। এরপর কিছুটা বাড়লেও এখনও তা ১৬০ টাকার ঘরে রয়েছে।

উল্লেখ্য, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট তার সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ কিনে নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেছে। দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠান এমিরেটস সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড এবং এমিরেটস পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে কিনে নিতে চাইছে। হাইকোর্ট হাইডেলবার্গ সিমেন্টের এই আবেদনের বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) জানাতে বলেছে। গত বছরের ২২ অক্টোবর হাইডেলবার্গ সিমেন্ট তাদের সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠানকে কিনে নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিল।

১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। পুঁজিবাজারে এ কোম্পানির ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯০টি শেয়ার আছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ ৬৭ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ