বুধবার লেনদেনের এক ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ৩৭ কোম্পানির সবগুলোই ছিল বিমা কোম্পানি। এমনকি বিমার ১৭ কোম্পানির শেয়ার বিক্রেতাশূন্য হয়ে যায়।
সম্প্রতি বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন কোনো ঘোষণা নেই বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা -আইডিআরের। নেই কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, যাতে শেয়ারের দর বাড়তে পারে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর।
এরপরও বুধবার লেনদেনের এক ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ৩৭ কোম্পানির সবগুলোই ছিল বিমা কোম্পানি।
এমনকি বিমার ১৭ কোম্পানির শেয়ার বিক্রেতাশূন্য হয়ে যায়।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, বিমা নিয়ে আগেও কারসাজি হয়েছে। তখন সিংহভাগ বিমা কোম্পানির শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত করা হয়েছে। সে সময় অনেক বিনিয়োগকারী বিমার শেয়ার কিনে লোকসানে পড়েছেন। এখন আবারও তা করা হচ্ছে কি না তা দেখা উচিত।
তিনি বলেন, বিমা নিয়ে এখন পর্যন্ত এমন কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই যাতে হঠাৎ এমন উল্লম্ফন হতে পারে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার আইডিআরএ জাতীয় বিমা দিবস সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। যেখানে বিমা মেলার বিশেষ দিকগুলো উপস্থাপন করা হয়। এর আগে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ডেল্টা লাইফের ঘুষ দাবির অভিযোগ আনলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুরো বিমা খাতে।
এ নিয়ে ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা, ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে এনবিআরের মামলাসহ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
বুধবার লেনদেনের এক ঘণ্টায় সূচকের উত্থান অব্যাহত আছে পুঁজিবাজারে। লেনদেন হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
সদ্য লেনদেন শুরু করা রবি আজিয়াটা ২০২০ সালের জন্য বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার দিনভর ছিল আলোচনা। বিএসইসি চেয়ারম্যান মঙ্গলবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘রবি ভালো কোম্পানি। দেশের অন্যান্য কোম্পানির মতো রবির ফান্ডামেন্টালও ভালো। আগামীতে রবি বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করছি।’ একই সঙ্গে বাংলালিংককে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
রবির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ জানান, লভ্যাংশ না দিলেও মুনাফা কোম্পানিতে পুনঃবিনিয়োগ করা হবে। যা রবির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ দরপতন হওয়া রবির শেয়ার বুধবার লেনদেন শুরুর পর থেকেই বাড়তে থাকে। এক ঘণ্টায় ১ দশমিক ২২ শতাংশ দর বেড়ে লেনদেন হচ্ছে ৪২ টাকা ৮০ পয়সায়।
এ সময়ে রবির ৩৬ লাখ ৯০ হাজারের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি টাকায়।
দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে লেনদেনের এক ঘণ্টায় এগিয়ে আছে তালিকাভুক্ত বিমা খাত। শেয়ার বিক্রেতাশূন্য হয়ে আছে বিমার ১৭ কোম্পানির।
এ সময় শেয়ারের বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, যার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, নর্দান ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এছাড়া এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের সচিব ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার মুন্সী বলেন, এমন কোনো তথ্য নেই যাতে বিমা খাতের উপর বিশেষভাবে প্রভাব পড়তে পারে। তবে সম্প্রতি আইডিআরএ যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে এজেন্ট কমিশন বাতিল, পরিচালকদের পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার ধারণ ইত্যাদির প্রভাব থাকতে পারে।
লেনদেনের এক ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের ৭০ কোটি টাকা। বেক্সিমকো ফার্মার লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। বিএটিবিসির লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি টাকা। রবির লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি টাকা।
সূচক ও লেনদেন
এক ঘণ্টায় ডিএসইর প্রধান সূচক ২ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫২৯ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১ দশমিক ০৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫১ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৯ পয়েন্ট। এ সময় ২৯৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৯টির, কমেছে ১০০টির, পাল্টায়নি ৯৮টির।
এ সময় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের-সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৭ দশমিক ৫১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৯০ পয়েন্টে। এ সময়ে লেনদেন হওয়া ১০২ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭টির, কমেছে ৪৪টির, পাল্টায়নি ২১টির। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।