কয়েক দিনের বিরতি দিয়ে গতকাল পুঁজিবাজারে বড় উত্থান দেখা গেছে। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটদর বৃদ্ধির পাশাপাশি দেখা গেছে সূচকের বড় উত্থান। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে স্থির হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে। মূলত তালিকাভুক্ত শীর্ষ বাজার মূলধনধারী কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণেই এ ধরনের বড় উত্থান চোখে পড়ে। তবে এতে স্বস্তি মিলছে না বিনিয়োগকারীদের। তাদের প্রত্যাশা স্থিতিশীল পুঁজিবাজার।
গতকাল বাজারের শীর্ষ মূলধনধারী কোম্পানি গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায় তিন টাকা ৪০ পয়সা। এ একটি প্রতিষ্ঠানের কারণে বাজার মূলধন বাড়ে চার হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। এছাড়া সম্প্রতি বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রবি আজিয়াটা, ওয়ালটন, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিসহ সিংহভাগ শীর্ষ বাজার মূলধনধারী কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে। যে কারণে সূচকে বড় ধরনের উত্থান ঘটে।
এদিকে বড় বড় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পায় বাজার মূলধন। দিন শেষে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং ফান্ডের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায় ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাজারের এ ধরনের উত্থান-পতন স্বাভাবিক মনে করছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা বড় বড় উত্থান বা পতন চান না। তারা চান দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার।
এ প্রসঙ্গে মো. শহিদুল ইসলাম নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক উত্থান এবং পতন কোনোটাই ভালো লক্ষণ নয়। কারণ বাজারে যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে তখন কারসাজির ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। তাই বাজার এ ধরনের আচরণ করলে তা অধিকাংশ আমাদের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনে না।
অন্যদিকে গতকাল বাজার-পরিস্থিতি ভালো থাকায় লেনদেনও বাড়তে দেখা যায়। এদিন ডিএসইতে মোট এক হাজার ৮২ কোটি টাকার শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হতে দেখা যায়। আগের কার্যদিবসে যেখানে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮০১ কোটি টাকা।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ের বাজার পরিস্থিতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়ী করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, দেশের পুঁজিবাজারে কিছুদিন আগে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়েছেন। যার জেরে বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ ছিল। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণও বাড়তে দেখা যায়। তবে হঠাৎ করে বাজারে ছন্দপতনে তাদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের কাছে। তারাও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তারা এখন ডে ট্রেডারের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এটা করলে বাজার নিজস্ব গতি হারাবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত কাজ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। এখন দেখছি তার উল্টো চিত্র। তাদের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করেন না কেউই।’
একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি শেয়ার বিক্রিতে মেতে উঠেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। বিক্রির তুলনায় তারা শেয়ার কিনছেন খুবই সীমিত। যে কারণে বাজারও তার গতি ফিরে পাচ্ছে না। হঠাৎ হঠাৎ এ উত্থানকে আইওয়াশ বলে আখ্যায়িত করেন তারা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি না থাকলে পুঁজিবাজার তার স্বাভাবিক গতি হারায়। যে কারণে কমে যায় লেনদেন। কমতে থাকে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ও বাজার মূলধন। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি অনুক‚লে রাখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভ‚মিকা জরুরি। তাই বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। কোনো কারণে মার্কেট নিম্নমুখী হলেই অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা ভীত হয়ে তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেন। এতে তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই এদিকে নজর না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের উচিত দেখেশুনে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার বিবেচনায় বিনিয়োগ করা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও বাজারের তুলনায় তা এখনও কম। বিশ্বের বড় পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বেশি দেখা যায়। তাদের অভিমত, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হলে এটি বাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ তারা বাজারের সার্বিক অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করে থাকেন।