টানা পতন শেষে অবশেষে উত্থান হলো পুঁজিবাজারে। প্রায় শত পয়েন্ট সূচক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন। শেয়ারের মূল্য বেড়েছে ব্যাংক, বিমা, মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ প্রায় সব খাতেই।
ক্রমাগত দর পতনে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের হতাশার মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। সিংহভাগ শেয়ারের দর বাড়ায় সূচক বেড়েছে প্রায় শত পয়েন্ট। লেনদেন বেড়ে আবার ১ হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠেছে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের-ডিএসইতে লেনদেনের এই চিত্র বিনিয়োগকারীদের আশান্বিত করে তুলেছে। বাজার সংশোধনের অবসান হয়ে আবার চাঙাভাবে ফিরবে- এমন আশার কথা বলছেন তারা।
এদিন লেনদেনে ২২৬টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। ঝিমিয়ে থাকা ব্যাংক, বিমা, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি যোগ হয়েছে সূচকে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘অল্প অল্প করে সূচক ও লেনদেন বাড়ছে। এটা ভালো। আর এখন যে উত্থান, সেটি যে কারণেই হোক না কেন এটি প্রত্যাশিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগের তুলনায় অনেক উদ্যোগী। তাদের উদ্যোগের মধ্যেও যদি ক্রমাগত পুঁজিবাজারের পতন হয় তাহলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বেড়ে যায়। এখন পুঁজিবাজার ভালো হচ্ছে, এতে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি আস্থাও বাড়বে বিনিয়োগাকারীদের।’
বাজার বিনিয়োগকারীরা বলছেন, গত কয়েক দিনে দর কমে আসা কোম্পানিগুলোর উত্থান হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে বেক্সিমকো ও রবির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেশি দেখিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি দর ছিল ৮২ টাকা ৭০ পয়সা। এরপর তিন কার্যদিবস শেষে দর কমে হয় ৬৯ টাকা ৫০ পয়সা। ৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে উত্থান শুরু হয় বেক্সিমকো লিমিটেডের। সোমবারসহ ৫ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর উঠেছে ৯৫ টাকা ১০ পয়সায়।
মন্দায় আটকে থাকা রবির শেয়ার সোমবার ছিল বিক্রেতাশূন্য। এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০ জানুয়ারির পর থেকে ক্রমাগত কমেছে। সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারির পর কিছুটা বাড়লেও আবারও পতন হয় রবির। লেনদেন হয় ৪২ টাকায়। এই দরেই সোমবার শেয়ারের বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে কোম্পানিটি। দিন শেষে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ দর বেড়ে হয় ৪৬ টাকায়।
সোমবার লেনদেন ও সূচকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ওয়ালটন, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, মাইডাস ফিন্যান্স, লংকাবাংলা ফিন্যান্স।
গ্রিন ডেল্টার ভালো লভাংশ ঘুরিয়ে দিল গোটা খাতের চিত্র
টানা পতনের মধ্যে থাকা বিমা খাতের শেয়ার ঘুরে দাঁড়িয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের লভ্যাংশ ঘোষণার পর। কোম্পানিটি সর্বশেষ আর্থিক বিবরণীতে জানিয়েছে, তাদের শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে সাত টাকা ১৬ পয়সা। এর বিপরীতে কোম্পানির বিনিয়োগাকারীদের ২৪ শতাংশ নগদ ও সাত শতাংশ বোনাস লভ্যাংশসহ ৩২ শতাংশ ঘোষণা করেছে।
গত বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল তিন টাকা ২৩ পয়সা।
কোম্পানির সচিব সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনার কারণে মূলত ক্লেইম কম হওয়ায় আমাদের আয় বেড়েছে। একই সঙ্গে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি এজেন্টদের কমিশনের বিষয়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটি আমরা আগে থেকেই কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। এতে মুনাফা বেড়েছে।’
বিমা খাতের ৪৯টি বিমা কোম্পানির মধ্যে চারটি দর কমেছে, অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটি কোম্পানির দর। বাকি ৪০টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে।
ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যাংক খাতও
ব্যাংক খাতের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে একটির, পাল্টায়নি পাঁচটির। বাকি ২৪টি ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে।
গত ১০ কার্যদিবসে ক্রমাগত দর হারিয়েছে এই খাতের কোম্পানিগুলো।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটির দর কমেছে, পাঁচটির দর পাল্টায়নি। বাকি ১১টির দর বেড়েছে।
তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মধ্যে সোমবার দর কমেছে মাত্র একটির, পাল্টায়নি ছয়টির। বাকি ৩০টির দর বেড়েছে।
সূচক ও লেনদেন
সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৭ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২১ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬০ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৪৬ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৬ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৫১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২৬টির, কমেছে ৩৪টির, পাল্টায়নি ৯১টির। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮২ কোটি টাকা।
আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৮০১ কোটি টাকা। ফলে এক দিনের ব্যবধানে ডিএসইর লেনদেন বেড়েছে ২৮১ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৮৭ দশমিক ০২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৩ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ২২৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ৪৪টির, পাল্টায়নি ৩৮টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৩৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহ কোম্পানি
সোমবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের ২৩৮ কোটি টাকা। যার মোট ২ কোটি ৫২ লাখ ২৬ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির ৬ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি ১৪ লাখ টাকায়।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা লংকাবাংলা ফিন্যান্সের ২ কোটি ১৫ লাখ ৯৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮২ কোটি টাকায়।
এ তালিকায় আরও ছিল বেক্সিমকো ফার্মা, রবি, স্কয়ার লিমিটেড, ওয়ালটন ও সামিট পাওয়ার।
সোমবার সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, যার বৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৫৯ শতাংশ। ফরচুন সুজের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৪২ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা মাইডাস ফিন্যান্সের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৯৪ শতাংশ।
বে লিজিং, একটিভ ফাইন, রবি, সাইফ পাওয়ারটেকের দাম বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব তত।
দরপতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল গোল্ডেনসন, যার দর কমেছে পাঁচ শতাংশ। আজহার টেক্সটাইলের দর কমেছে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
লেনদেনে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও ৪৪ টাকা ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, যা শতকরা হিসাবে ২.৫৫ শতাংশ।