লভ্যাংশ ঘোষণার পরদিন বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৯২ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৭০০ টাকা ৩০ পয়সায় দাঁড়ায়। দ্বিতীয় কার্যদিবসে এই কোম্পানির শেয়ারে যে সার্কিট ব্রেকার ছিল, তাতে দাম সবচেয়ে কমে বিক্রি হতে পারত এক হাজার বিক্রি হতে পারত এক হাজার ৫৯৪ টাকা ১০ পয়সায়। এই দামেও বিক্রি হয়েছে শেয়ার।
এক বছরে ৮০০ শতাংশ মুনাফা। যার মধ্যে ৬০০ শতাংশ বা ৬০ টাকা নগদে আর ২০০ শতাংশ, অর্থাৎ একটি শেয়ারে দুটি বোনাস শেয়ার।
এর মধ্যে ৩০০ শতাংশ বা ৩০ টাকা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েছেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা বিএটিবিসির বিনিয়োগকারীরা। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয়েছে বাকি ৫০০ শতাংশ লভ্যাংশ।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস সংক্রান্ত বিধি না পাল্টালে এই কোম্পানির শেয়ারধারীরা বিপুল পরিমাণ মুনাফা পেয়ে যাবেন।
কারণ, বর্তমান নীতি অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ারদর কোনোভাবেই ৯০৭ টাকা ৬০ পয়সার নিচে নামতে পারবে না।
এই ফ্লোর প্রাইস ঘোষণার পর বিভিন্ন কোম্পানি বোনাস শেয়ার ও রাইট ঘোষণার পর যে দর সংশোধন হয়েছে, সেখানেও এই ফ্লোর প্রাইস বজায় ছিল।
গত ২২ মার্চ মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা হয় ৭৯৪ টাকা। এরপর কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে। কিন্তু বোসান শেয়ার যোগ হওয়ার পরেও ফ্লোর প্রাইস ৭৯৪ টাকাতেই স্থির থাকে।
প্রকৌশল খাতের ন্যাশনাল পলিমারের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে।
এই কোম্পানির প্রতি একটি শেয়ারের বিপরীতে একটি করে রাইট শেয়ার পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত ৬ জানুয়ারি রাইট শেয়ারের জন্য ক্লোজিং ডেতে এর দাম ছিল ৭১ টাকা ৬০ পয়সা। প্রতি ১০ শেয়ারে পাঁচ টাকা প্রিমিয়াম নেয়া হয়েছে। ফলে রাইট শেয়ার যোগ হওয়ার পর মূল্য সমন্বয় হওয়ার কথা ছিল ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা।
কিন্তু এই শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা আছে ৫৬ টাকা ৬০ পয়সা। আর এর নিচে দাম নামতে পারছে না।
এই নিয়ম অক্ষুণ্ন থাকলে ৩ মার্চের পর বিএটিবিসির শেয়ারধারীরা একটির বিপরীতে যে দুটি বোসান শেয়ার পাবেন, তখন প্রতিটি শেয়ারের দর হবে কমপক্ষে ৯০৭ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থাৎ তিনটি শেয়ারের দর হবে ২ হাজার ৭২২ টাকা ৬০ পয়সা।
এই অবস্থায় লভ্যাংশ ঘোষণার পরদিন বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৯২ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৭০০ টাকা ৩০ পয়সায় দাঁড়ায়।
এরপর ফ্লোর প্রাইস নিয়ে আলোচনা হয়। দুইশ শতাংশ বোসান শেয়ার পাওয়ার পরেও এই দর কত হয়, তা নিয়ে তৈরি হয় আলোচনা।
দিনের শুরুতে দাম এক টাকার মতো বাড়লেও পরে দাম ক্রমেই কমতে থাকে।
কোনো কোম্পানির শেয়ার দর সর্বোচ্চ সংখ্যক বাড়া বা কমার যে সীমা বেধে দেয়া আছে, সেই সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী এই কোম্পানির শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি কমে বিক্রি হতে পারত এক হাজার ৫৯৪ টাকা ১০ পয়সায়।
সেই সীমাও এক পর্যায়ে স্পর্শ করে দাম। পরে কিছুটা বেড়ে দিন শেষে দর দাঁড়ায় এক হাজার ৫৯৯ টাকায়।
বিনিয়োগকারী রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, ‘কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস যদি পরিবর্তন করা না হয়, তাহলে শেয়ারধারীদের বড় অংকের মুনাফা হবে। তবে যদি ফ্লোর প্রাইস বোনাস লভ্যাংশের হিসাবে কমে আসে, তাহলে আবার লাভ হবে না। মূলত এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় এ কোম্পানির শেয়ারধানীরা বিভ্রান্তিতে আছেন।’
তবে ১০০ টাকা দর হারালেও কোম্পানির শেয়ারে যে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ব্যাপক তা লেনদেনের চিত্রই বলে দেয়।
বাজারে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়ার তালিকায় দুই নম্বরেই আছে বিএটিবিসি।
কোম্পানিটির শেয়ার হাতবদল হয়েছে ছয় লাখ ২৫ হাজার ১৭৫টি। টাকার অংকে যা ১০২ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে কেবল বেক্সিমকো লিমিটেডের। টাকার অংকে হাতবদল হয়েছে ২১৭ কোটি ৬৩ লাখ ১৫০ টাকার শেয়ার।
এই দুটি কোম্পানি বাদ দিলে লেনদেনের চিত্র খুবই হতাশাজনক। তৃতীয় অবস্থানে থাকা রবির শেয়ার হাতবদল হয়েছে কেবল ৪৪ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার টাকার।
বিএটিবিসি ১৯৭৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টিএটিবিসির মোট শেয়ারের ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। সরকারের কাছে আছে দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকরীদের কাছে আছে ১২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ অর্থাৎ ৭২ লাখ ২৪ হাজারটি শেয়ার আছে।
বিদেশিদের কাছে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ অর্থাৎ ৬৬ লাখ ৮৪ হাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ শেয়ার, অর্থাৎ ১৯ লাখ ৬২ হাজার শেয়ার আছে।
উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি করতে হলে ঘোষণা দিতে হয়। কিন্তু কোম্পানির মালিকপক্ষের কেউ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়নি।
ফলে ৬০ কোটি টাকা পরিশোধিত কোম্পানির ছয় কোটি শেয়ারের মধ্যে হাতবদল করা সম্ভব এক কোটি ৬২ লাখ ৫৪ হাজার শেয়ার। এর মধ্যে গত তিন কার্যদিবসেই হাতবদল হয়েছে যথাক্রমে তিন লাখ ৭৯ হাজার ৭২৭, ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭২৭ এবং ছয় লাখ ২৫ হাজার ১৭৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
অর্থাৎ লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬২৯টি শেয়ার বিক্রি হয়েছে।