নেতিবাচক প্রবণতার মধ্য দিয়ে আবারও সপ্তাহ শেষ করল দেশের পুঁজিবাজার। দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে চলতি ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বড় পতন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এই সপ্তাহে শুধু এক দিনের জন্য ইতিবাচক হয়েছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক। সপ্তাহ শেষে পুঁজিবাজারে সামগ্রিক লেনদেন বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানি শেয়ার ও ফান্ডের ইউনিট দর।
এর মাঝেও বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষ দশে উঠে আসে ওষুধ ও রসায়ন খাতের প্রতিষ্ঠান বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর আট দশমিক ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা লেনদেন করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
জানা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসই লেনদেন শুরু করে বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ৭৯ হাজার ৩০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। আর সপ্তাহ শেষ করে চার লাখ ৬৯ হাজার ৭১০ কোটি ৭৯ লাখ ১৭ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন হারায় ৯ হাজার ৫৯৩ কোটি ৬৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে চার হাজার ৮৬ কোটি ১২ লাখ ৬৪ হাজার ১৮০ টাকা মূল্যের লেনদেন হয়, যা আগের সপ্তাহ থেকে ৩৩৩ কোটি ৭০ লাখ ২১ হাজার ৬৮০ টাকা বা আট দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ৭৫২ কোটি ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকার।
ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ৮১৭ কোটি ২২ লাখ ৫২ হাজার ৮৩৬ টাকার। আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছিল ৭৫০ কোটি ৪৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে গড় লেনদেন ৬৬ কোটি ৭৪ লাখ চার হাজার ৩৩৬ টাকা বেশি হয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬২ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৮৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪৮৫ দশমিক শূন্য এক পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২৪ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বা দুই শতাংশ কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১১০ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৬৩ দশমিক শূন্য চার পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৯০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ২৩৬ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৬৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৪টির বা ছয় দশমিক ৫৪ শতাংশের, কমেছে ২৫২টির বা ৬৮ দশমিক ৬৬ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত ছিল ৯১টির বা ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশের।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ওষুধ খাতের কোম্পানি বীকন ফার্মা পুঁজিবাজারে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন করছে। শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় সর্বশেষ ৮৪ টাকা ১০ পয়সায়। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন শেষ করে ৮২ টাকা ১০ পয়সায়। অর্থাৎ দিন শেষে কোম্পানিটির দর বাড়ে ৯০ পয়সা বা এক দশমিক শূন্য আট শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির দিনভর মাত্র ৪৯৬ বারে ছয় লাখ ৩৫ হাজার ৪৩টি শেয়ার হাতবদল হয়। যার মূল্য পাঁচ কোটি ৩০ লাখ টাকারও বেশি। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৯৪ টাকায় লেনদেন করে।
৩০০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনের এ কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ২৩১ কোটি টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার আছে ২৩ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৩ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ শেয়ার।
সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ছয় শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ২০২০ সালে বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল এক টাকা ৬৫ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) ছিল ২০ দশমিক শূন্য চার টাকা।
শীর্ষ গেইনারের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড। শেয়ারদর ছয় দশমিক ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে কোম্পানিটি এ অবস্থানে উঠে আসে। সারা সপ্তাহে কোম্পানিটি সর্বমোট এক কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা সমমূল্যের শেয়ার লেনদেন করে, যা দৈনিক ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা। তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল আনলিমা ইয়ার্ন ডাইং লিমিটেড। চার দশমিক ৪২ শতাংশ দর বেড়ে কোম্পানিটি এ স্থান অর্জন করে। সারা সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির মোট এক কোটি ৭০ লাখ ৯৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা দৈনিক ৩৪ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ টাকা। এরপরের অবস্থানে ছিল বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজার। বৈশ্বিক এ কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ে তিন দশমিক ৫০ শতাংশ এবং সারা সপ্তাহজুড়ে ১১ কোটি ৫০ লাখ ১২ হাজার টাকা সমমূল্যের শেয়ার লেনদেন করে। দৈনিক হিসাবে গড়ে যার পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ৩০ লাখ দুই হাজার ৪০০ টাকা।
পঞ্চম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড বা বেক্সিমকো। কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ে তিন দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। সারা সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার হাতবদল হয় ৭০১ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকার। দৈনিক গড় হিসাবে যার পরিমাণ ৪০ কোটি ২৫ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ টাকা।
তালিকার ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেড। দুই দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটি তালিকার সেরা দশে স্থান করে নেয়। সারা সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির মোট চার কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। দৈনিক গড়ে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ লাখ ৫৭ হাজার টাকায়। দুই দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ারদর বৃদ্ধির মাধ্যমে তালিকার সাত নম্বরে উঠে আসে বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান মতিন স্পিনিং মিলস লিমিটেড। সারা সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির মোট ১৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার লেনদেন হয় যার গড় দৈনিক দুই লাখ ৭৫ হাজার ২০০ টাকা।
তালিকার অষ্টম অবস্থানের উঠে আসে ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠান ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে দুই দশমিক ৪৪ শতাংশ দর বাড়ে কোম্পানিটির। পুরো সপ্তাহে দুই কোটি ৪৬ লাখ ১৯ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয় যার দৈনিক গড় হিসাবে ৪৯ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ টাকা। তালিকার নবম স্থানে উঠে আসে এনসিসি ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড-১। এর ইউনিট দর বাড়ে দুই দশমিক ২৭ শতাংশ। পুরো সপ্তাহজুড়ে চার কোটি ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যার গড় পরিমাণ দৈনিক ৮৭ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ টাকার। তালিকার সর্বশেষ স্থানটি দখল করে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এক দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ারদর বৃদ্ধির মাধ্যমে তালিকায় উঠে আসে কোম্পানিটি। সারা সপ্তাহজুড়ে মোট দুই কোটি ৩৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকার সমপরিমাণ শেয়ার হাতবদল হয়, যার দৈনিক গড়ে দাঁড়ায় ৪৭ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ টাকায়।