চট্টগ্রামভিত্তিক পরিবহন খাতের প্রতিষ্ঠান বাগদাদ এক্সপ্রেস। একসময় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে মার্সিডিজ এসি বাস পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে অস্তিত্ব নেই। আর ব্যবসায়িক ও পরিচালনাগত ব্যর্থতায় খেলাপি হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে। ব্যাংকটির প্রবর্তক মোড় শাখায় প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৩ কোটি ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৫ টাকা। আর এ পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে থাকা জমি নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, বাগদাদ এক্সপ্রেস ব্যবসা পরিচালনার জন্য ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড প্রবর্তক মোড় শাখা থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে। প্রথম দিকে ঋণের পাওনা পরিশোধ নিয়মিত হলেও পরে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। বারবার তাগাদা দিলেও পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ।
মূলত ব্যবসায়িক ও পরিচালনাগত ব্যর্থতায় প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি হয়েছে প্রবর্তক মোড় শাখায়। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৩ কোটি ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৫ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে বাই মোরাবাহা (হাইপো) বিনিয়োগের বিপরীতে ১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৮৪৯ টাকা এবং এইচপিএসএম (পরিবহন) বিনিয়োগের বিপরীতে ১৯ কোটি ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৬ টাকা। আর এ পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে সীতাকুণ্ড উপজেলা জঙ্গল সলিমপুরে মোট ৬০ ডেসিমেল বন্ধকিতে থাকা জমি নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে ব্যাংকটির শাখা।
আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এতে আগ্রহীরা নিয়ম অনুসরণ করে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা জানান, পরিবহন ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়েছে বাগদাদ এক্সপ্রেস। ঋণের টাকায় সড়কে গাড়ির ব্যবসা করেছে ঠিকই, কিন্তু ব্যাংকের পাওনা শোধ করেনি। পরে এনআই অ্যাক্টে মামলা করা হয়। অন্যদিকে ২০১০ সালে খেলাপি হওয়া প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৩ সালে ঋণ দেয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
জানা যায়, বাগদাদ গ্রুপের কর্ণধার চট্টগ্রামের রাউজানের ফেরদৌস খান আলমগীর। তার বাবা আইয়ুব খান ছিলেন সারের ডিলার। চট্টগ্রামের মাঝির ঘাটে সারের ব্যবসা থেকে একপর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় আসেন তিন সহোদর ফেরদৌস খান আলমগীর, তানভীর খান আলমগীর ও আজাদ খান আলমগীর। এর মধ্যে ফেরদৌস খান আলমগীর ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। তাছাড়া তিনি সাদার্ন ইউনিভার্সিটিরও পরিচালক।
পরে মৎস্য আহরণ, আবাসন, পরিবহনসহ আরও কয়েকটি ব্যবসায়ের জন্য মেসার্স আলমগীর ব্রাদার্স, বাগদাদ ট্রেডিং, ফেরদৌস এন্টারপ্রাইজ, বাগদাদ এক্সিম করপোরেশন, বাগদাদ পরিবহন ও বাগদাদ প্রপার্টিজ নামে প্রতিষ্ঠান খোলেন তারা। এরপর অতীতের সুনাম ও সম্পর্ককে ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো থেকে একের পর এক ঋণসুবিধা নেন। প্রথমে ভালো লেনদেন করলেও পরে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে গড়িমসি শুরু করেন।
একপর্যায়ে ব্যাংকগুলোর মোটা অঙ্কের পাওনা আটকে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৫৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪৬ কোটি, ব্যাংক এশিয়ার ১২ কোটি ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকা। এছাড়া আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা আটকে আছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। এদিকে গত কয়েক বছরে বাগদাদ গ্রুপের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিলাসবহুল মার্সিডিজ বাসগুলো অকেজো হয়ে গ্যারেজে পড়ে রয়েছে।
খেলাপি ঋণের বিষয়ে জানার জন্য বাগদাদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস খান আলমগীরের ব্যবহত নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যবহৃত সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড প্রবর্তক মোড় শাখা ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আসিফ বলেন, ‘বাগদাদ আমাদের খেলাপি গ্রাহক। আর পাওনা আদায়ে নিলামে বন্ধকি সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তারা আমাদের আঞ্চলিক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এছাড়া আমিও এ শাখায় নতুন, তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না।’