লভ্যাংশের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সর্বশেষ যে নির্দেশনা দিয়েছে, তার কিছু ধারা সম্পর্কে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)। এসব ধারা সংশোধনের জন্য বিএসইসিতে লিখিত প্রস্তাবনা দিয়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর এ ফোরাম। গতকাল বিএসইসিতে এ প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে বিএপিএলসি।
নির্দেশনার তৃতীয় ধারায় বলা হয়েছে, নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ অথবা মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি কমিটির সভায় এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে মোট লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আলাদা ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণ করতে হবে। শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে এ শর্ত আরোপ করা হয়েছে বলে তখন বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
বিএপিএলসি এ ধারাটি সংশোধন করে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠানের ১০ দিনের মধ্যে আলাদা ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশের অর্থ স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। এর যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, অনেক সময় ঘোষিত লভ্যাংশের হার এজিএমে গিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই শেয়ারহোল্ডাররা ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের পর পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশের অর্থ স্থানান্তর করা ভালো। তাছাড়া পরিচালনা পর্ষদের সভার পর এজিএম আয়োজনের জন্য ৯০ দিন সময় পাওয়া যায়। তারপর লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়। তাই পর্ষদ সভার পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ আলাদা ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হলে কোম্পানি ওই অর্থ ব্যবহারের সুযোগ থেকে অনেকটা বঞ্চিত হবে। তিন মাস ওই অর্থ ব্যবহার করা যাবে না। তাতে কোম্পানির চলতি মূলধনের ওপর চাপ তৈরি হবে। কোম্পানির মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয়ে (ইপিএস) নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নিদের্শনার অন্য একটি ধারায় বলা হয়েছে, লভ্যাংশ ঘোষণার পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে তা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা সম্ভব না হলে অবিতরণকৃত লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ বিএসইসির নির্দেশিত একটি তহবিলে স্থানান্তর করতে হবে। আর স্থানান্তরের পর যদি কোনো শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডার ওই লভ্যাংশ দাবি করেন, তাহলে ওই দাবির ১৫ দিনের মধ্যে তা যাচাই করে আলোচিত তহবিলের কাছে পাঠাতে হবে, যাতে তারা তাদের প্রাপ্য লভ্যাংশ পেতে পারেন।
বিএপিএলসি এই ধারার বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও স্পষ্টীকরণের সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভারতের কোম্পানি আইনে সাত বছর পর অবণ্টনকৃত লভ্যাংশ বিশেষ তহবিলে স্থানান্তরের বিধান আছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোম্পানি আইনে এ-সংক্রান্ত কোনো বিধান বা নির্দেশনা নেই।
পাশাপাশি নির্দেশনার আরেকটি ধারায় বলা হয়েছে, স্টক লভ্যাংশের ক্ষেত্রে ওই লভ্যাংশ ঘোষণা বা রেকর্ড তারিখ অথবা এজিএমে তা অনুমোদনের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারের বিও অ্যাকাউন্টে তা জমা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। বিএপিএলসি সিডিবিএলের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়ার শর্তটুকু তুলে দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
উল্লেখ, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি লভ্যাংশ-সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে একটি ডিরেক্টিভ জারি করে বিএসইসি। ওই ডিরেক্টিভের চারটি ধারা সংশোধনের সুপারিশ করেছে বিএপিএলসি।