সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার পুঁজিবাজারে ১৪২ পয়েন্ট আর সোমবার ১২৮ পয়েন্ট সূচক পতন হয়। বিপরীতে মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ১২৪ পয়েন্ট। এতে বাজারে আস্থা ফিরেছে বিনিয়োগকারীদের।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনে সূচকের বড় পতনে অস্থির হয়ে ওঠা পুঁজিবাজারে স্বস্তি ফিরেছে। আতঙ্কগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে যখন বিনিয়োগ সুরক্ষার পরিকল্পনায় ব্যস্ত, তখন উত্থানে ফেরত এলো এক দিনের সূচক।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার পুঁজিবাজারে ১৪২ পয়েন্ট আর সোমবার ১২৮ পয়েন্ট সূচক পতন হয়। বিপরীতে মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ১২৪ পয়েন্ট।
এতে বাজারে আস্থা ফিরেছে বিনিয়োগকারীদের। তারা বলছেন, গত দুদিন যেভাবে সূচকের পতন হচ্ছিল তা মঙ্গলবার অব্যাহত থাকলেও তা হতো পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে আতঙ্কের।
বিএসইসি যেভাবে পুঁজিবাজারে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তার মধ্যে গত দুদিনের পতন অনেক বড় ক্ষত তৈরি করেছিল। মঙ্গলবার ঘুরে দাঁড়ানোয় যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে সূচক কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে এক ঘণ্টায় সূচক ওঠে ৮৫ পয়েন্টে, আর লেনদেন হয় ২৫৩ কোটি টাকা। এ উত্থান লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সূচকের উত্থান থাকলেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কমেছে।
মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৬৮৩ কোটি টাকা, যা গত দেড় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগের গত বছরের ১ ডিসেম্বর লেনদেন হয়েছিল ৬৬৩ কোটি টাকা। সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৭৮৯ কোটি টাকা। ফলে এক দিনের ব্যবধানে ডিএসইর লেনদেন কমেছে ১০৬ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদের মতে, মঙ্গলবার পুঁজিবাজার ইতিবাচক হওয়াটা জরুরি ছিল। যদিও যেভাবে সূচক ও লেনদেনের পতন হচ্ছিল, তা স্পষ্ট ছিল না কত দিন অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে এখন বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আস্থা ফিরে পাবে। এখন আবার যদি বুধবার বড় পতন হয় তাহলে সে আস্থা ধরে রাখা কঠিন হবে। একই সঙ্গে বিএসইসি যে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে বাজার উত্থান রাখার চেষ্টা করছে সেটিও অনেকটা প্রশ্নের মুখে পড়বে।’
এদিকে গত দুই দিনের সূচকের পতনের সার্ভিল্যান্সে কারসাজি চিহ্নিত করাসহ বাজার সংশ্লিষ্ট ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সঙ্গে বৈঠক করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। যেখানে বাজার পতনের মৌলিক কোনো বিষয় নেই বলে জানানো হয়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের শেয়ারের নিম্নমুখী অবস্থায় গত রোববার ব্যাংকের লভ্যাংশ প্রদান সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে সবচেয়ে ভালো মানের ব্যাংক ২০২০ সালের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বোনাস শেয়ার ঘোষণা করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়।
এমন ঘোষণার এক দিন পর সোমবার আরও পতনের মুখে পড়ে ব্যাংক খাতের শেয়ার। যেখানে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে দর বাড়ে মাত্র চারটি ব্যাংকের।
এমন অবস্থায় পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘এটি খুবই ভালো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানে ব্যাংকের শেয়ারের দর এখনও অনেক কম, সেখানে ব্যাংক যদি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারে তাহলে বিনিয়োগকারীরা ভালো রিটার্ন পাবে।
তার মতে, প্রজ্ঞাপনটি বিনিয়োগকারীদের মাঝে ভালোভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে ব্যাংকগুলো কী করতে পারবে তাও স্পষ্ট ছিল না। ফলে সোমবার ব্যাংকের শেয়ারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
মঙ্গলবার অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে। ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে, পাঁচটির দর পাল্টায়নি। বাকি ২০টি ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে।
বিমা খাতের ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটি কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। দর পাল্টায়নি চারটির। বাকি ৪৪টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে।
একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দর পাল্টায়নি। বাকি ১৮টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে।
সূচক ও লেনদেন
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে-ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২২ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৯৮ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২৪ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৯ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৬২ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৬ পয়েন্টে।
এদিন লেনদেন হওয়া ৩৪৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৪০টির, কমেছে ১৭টির, পাল্টায়নি ৯২টির।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে- সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৯৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯১৯ পয়েন্টে। এদিন লেনদেন হওয়া ২৩৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬০টির, কমেছে ২৮টির, পাল্টায়নি ৪৯টির। মোট লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি টাকার।
আগ্রহ ও অনাগ্রহ কোম্পানি
মঙ্গলবার লেনদেনের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, যার এক কোটি ১৯ লাখ ২৩ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৭ কোটি টাকায়। বেক্সিমকো ফার্মার ২৮ লাখ ৫২ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৫ কোটি টাকায়। রবির ৯৬ কোটি ২১ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি টাকায়।
এ তালিকায় আরও ছিল বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড-বিএটিবিসি, লংকাবাংলা ফিন্যান্স, সামিট পাওয়ার।
এ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ার দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ। একই হারে দর বেড়েছে ডোমিনস, ফুয়াং সিরামিক, মাইডাস ফিন্যান্স, মীর আক্তার হোসাইনের। এ ছাড়া লংকাবাংলা ফিন্যান্সের শেয়ারের দর বেড়েছে ৯.৯৭ শতাংশ।
দর পতনের দিক থেকে শীর্ষে ছিল ফার্স্ট ফাইন্যান্স, যার দর কমেছে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। প্রাইম ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া এ তালিকায় ছিল এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, দেশ গার্মেন্টস, যমুনা ব্যাংক।