1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন

নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তারাই আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত

  • আপডেট সময় : সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অসাধু কর্মকর্তারাই আর্থিক দুর্নীতিতে সহযোগিতা করেছেন। আমানতকারীদের পক্ষ থেকে বারবার সাবাধান করা হলেও নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। চুপ ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক উভয়ই। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে পাঁচ বছর আগে থেকে সতর্ক করা হলেও তাদের পক্ষেই চিঠি ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন ঘটনা ঘটেছে অবসায়নের প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ে। প্রতিষ্ঠানটির আমানতকারীদের লিখিত অভিযোগে এমন তথ্য জানা গেছে।

আমানতকারীরা অভিযোগ করেন, পিপলস লিজিংয়ের পরিচালকদের এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতে সরাসরি জড়িত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শাহ আলম। বিষয়টি লিখিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এসব বিষয় উল্লেখ করে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেন আমানতকারীরা। কিন্তু সেখান থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত মূল হোতারা অধরাই থেকে গেছেন।

আমানতকারীদের পক্ষ থেকে দুদকে পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের শুরু থেকে নিয়মিতভাবে চেক ডিজঅনার, মুনাফা প্রদানে বিলম্ব এবং আমানত নগদায়নের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হতে থাকে পিপলস লিজিং। ফলে পাওনা টাকা পাওয়ার জন্য দলে দলে পিপলস লিজিংয়ের অফিসে ভিড় করতে থাকেন গ্রাহকরা। তখন আমানকারীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের ঝগড়াঝাঁটি ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যাপ্টেন (অব.) মোয়াজ্জেম হোসেন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আগে ঘটে যাওয়া কিছু অনিয়মিত ঋণ প্রদানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। এতে কোম্পানি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছিল। পরে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় পরিচালনা পর্ষদে ন্যক্কারজনক পরিবর্তন ঘটে। নতুন পরিচালনা পর্ষদে জায়গা পান অখ্যাত, দুর্নীতিবাজ ও বিভিন্ন বেনামি কোম্পানির কর্ণধাররা। তারা পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হয়ে কোম্পানি থেকে অভিজ্ঞ যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করেই অন্যায়ভাবে ক্রমাগত ছাঁটাই করতে থাকেন। পাশাপাশি যোগ্যতা, গুণাগুণ, সততা ও অভিজ্ঞতার বিচার না করে উচ্চপদস্থ পদে তাদের পছন্দমতো লোক নিয়োগ দিতে থাকেন, যারা নতুন পরিচালকদের অন্যান্য কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আইন অনুযায়ী আর্থিক প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুই স্বতন্ত্র পরিচালক থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু পিপলস লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদে দীর্ঘ চার বছর পাঁচ থেকে ছয় স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন, যা আইন পরিপন্থি।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রশান্ত কুমার হালদার, উজ্জ্বল কুমার নন্দী, ড. ইউসুফ খান, সামি হুদা, শেখর কুমার হালদার, সুকুমার মৃধা, অমিতাভ অধিকারী ও কাজী আহমেদ জামাল সবাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমের ছত্রছায়ায় অবৈধ ও দুর্নীতির মূল কাজগুলো করেন। একই ব্যক্তিরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) প্রভৃতি কোম্পানির পরিচালক হিসেবে বহাল আছেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ‘২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রলোভনমূলক এফডিআর স্কিমের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করা হলেও এটা ফেরত দিতে না পারা, কোম্পানির বিভিন্ন স্থাবর সম্পদ বিক্রি করা, অন্য গ্রাাহকের আমানত ফেরত না দিতে পারলেও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ২৮০ কোটি টাকা ফেরত দেয়া এবং কমিশন বাণিজ্যের মতো কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেয়ার জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কতিপয় উচ্চপদস্থ অসাধু কর্মকর্তা বিশেষত মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমের সহযোগিতা পেত। পাশাপাশি যোগসাজশে অতি স্বল্প সময়ে ‘গোপনীয় বাজার’ থেকে পিএলএফএসকে অবসায়িত করে বিশাল দুর্নীতি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তারা।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (সাবেক মহাব্যবস্থাপক) মো. শাহ আলমের ব্যক্তিগত সেলফোনে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পিপলস লিজিংয়ের পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পর ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান তৎকালীন চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম। চিঠিতে জানানো হয়, পিপলস লিজিংয়ের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে তিনজন নতুন পরিচালক হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উজ্জ্বল কুমার নন্দী, ওরিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের নং চাও মং এবং ড্রাইনুন অ্যাপারেলস লিমিটেডের কাজী মোমরেজ। কিন্তু পরিচালক হওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছিল, তা সঠিকভাবে দাখিল করতে পারেননি তারা। এছাড়া পরিচালক হতে প্রয়োজনীয় শর্তাদি পূরণে ব্যর্থ হন তিনজনই। আবেদনকারী তিনজনের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। তারপরও একই বছরের ১২ অক্টোবর পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের নতুন পরিচালক নিয়োগ প্রসঙ্গে একটি চিঠি জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়, আনান কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রি এবং ড্রাইনুন অ্যাপারেলসের প্রস্তাবিত প্রতিনিধিদের পর্ষদে অন্তর্ভুক্তিতে কোনো আপত্তি নেই। অথচ এর আগেই তাদের অযোগ্য ঘোষণা করে পিপলস লিজিং।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। অনিয়মের বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই জানা থাকা দরকার। কিন্তু আমানতকারীদের পক্ষ থেকে জানানোর পরও যখন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, সুতরাং এখানে অবশ্যই কোনো ফাঁকফোকর আছে।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেয়া উচিত। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ বলে আমি মনে করি। দ্রুত এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তা না হলে আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষ আস্থা হারাবেন। এতে সার্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফিশিয়াল আদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দেয়ার অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেয়া হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে স্টাফ ‘ল’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

ব্যাংক খাতে আমানত কমেছে

  • ১৭ অক্টোবর ২০২৪