1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন

সেই রবি-ই এখন গলার কাঁটা!

  • আপডেট সময় : রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

আইপিও শেয়ার রবিতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। ফলে আইপিও শেয়ার এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুলত রবিতে বিনিয়োগ করে কবে নাগাদ পুঁজি ফিরে পাবে তা নিয়ে দু:শ্চিন্তায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। আর এ রবি শেয়ারে এমন কর্মকান্ডে বাজারের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত রবি আজিয়াটা লিমিটেড। ইতিহাসের সবচেয়ে কম বা ৪ পয়সার শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) নিয়ে পুঁজিবাজারে আসে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটা।

যে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোনের আগে ব্যবসা শুরু করলেও মাঝে মধ্যেই লোকসান গুণে। এরমধ্য দিয়েই পুঁজিবাজারের ইতিহাসে আইপিওতে সর্বোচ্চ শেয়ার ইস্যু করে রবি। রবি আজিয়াটার ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে মাত্র ৪ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে ১২.৬৪ টাকার। রবি আজিয়াটা ১৯৯৫ সালের ২২ অক্টোবর গঠিত হয় এবং একইদিনে ব্যবসা শুরু করে। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোন গঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১০ অক্টোবর। এই ১ বছর পরে গঠিত হয়েও গ্রামীণফোন এখন বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। আর রবি আজিয়াটা এখনো লোকসান থেকে মুনাফা করতে লড়াই করে যাচ্ছে। অথচ গ্রামীণফোনের থেকে রবির কয়েকগুণ বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে।

খসড়া প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, ৪ হাজার ৭১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের রবির ২০১৯ সালে টার্নওভার হয়েছে ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এই টার্নওভার থেকে সব ব্যয় শেষে নিট মুনাফা হয়েছে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যা শেয়ারপ্রতি হিসেবে মাত্র ৪ পয়সা। ২০১৮ সালে রবির ইপিএস হয়েছিল ৪৬ পয়সা। তবে ২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি ২ পয়সা ও ২০১৬ সালে ১ টাকা ৮৮ পয়সা লোকসান হয়েছিল।

অপরদিকে পুঁজিবাজারে একমাত্র মোবাইল অপারেটর কোম্পানি হিসেবে ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্রামীণফোনের বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৩৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই মূলধনের কোম্পানিটির ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ২৫.৫৬ টাকা হিসাবে নিট মুনাফা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদ রয়েছে ২৮.৪০ টাকা।

এদিকে বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটা গত ২৪ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। শুরুর দিন থেকেই ১০ টাকা অভিহিত দরের এ শেয়ারটি দর বৃদ্ধির ঝলক দেখাতে থাকে। টানা ১৫ কার্যদিবস দর বেড়ে শেয়ারদর চলে যায় ৭০ টাকা ১০ পয়সায়। কিন্তু এ দরেও শেয়ার বিক্রি করেননি অধিকাংশ লটারি বিজয়ীরা। দর আরও বাড়বে এমন গুজবে শেয়ার ধরে রেখে এখন আফসোস করছেন তারা।

কোম্পানির লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, তালিকাভুক্তির ১৫ দিনের মধ্যে টানা ১১ কার্যদিবস এ শেয়ারে বিক্রেতার অভাব ছিল। এ সময় বাজারে গুজব ছিল বহুজাতিক এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় চলে যাবে। মূলত সে কারণেই অধিকাংশ আইপিও বিজয়ীরা শেয়ার দরে রাখেন।

১৫ কার্যদিবসে দর বেড়ে (ক্লোজ প্রাইস) ৭০ টাকা ১০ পয়সা হলেও এক দিন শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ ৭৭ টাকায় কেনাবেচা হয়। এই হিসাবে আইপিও বিজয়ীদের এক লট শেয়ারদর হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে লাভ ছিল ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু তখনও তারা শেয়ার বিক্রি করেননি।

এদিকে টানা দর বৃদ্ধির পর এখন টানা দর কমছে রবির শেয়ারের। সর্বশেষ এ শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে ৪৪ টাকা ৯০ পয়সায়। সেই হিসাবে এখন রবির এক লট শেয়ারদর রয়েছে ২২ হাজার ৪৫০ টাকা। এখন এ শেয়ার বিক্রি করে লটারি বিজয়ীরা পাচ্ছেন ১৭ হাজার ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে তাদের মুনাফা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। ফলে হা-হুতাশ করছেন লটারিতে বিজয়ী শেয়ারধারী বিনিয়োগকারীরা।

এসব বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান শেয়ারদর যখন ৬০ টাকা অতিক্রম করে তখনই তা বিক্রি করে দেয়া উচিত ছিল। বর্তমানে নিন্মমুখী থাকা এ শেয়ারদর আবার আগের অবস্থানে যাবে কি না তা নিয়েও সন্দিহান তারা। তবে কেউ কেউ শেয়ার নিয়ে ইতিবাচক ভাবনাও ভাবছেন। যে কারণে অনেকই কম দরে কিনে রাখছেন এ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নতুন কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে এবং কখন শেয়ার কিনতে হবে সেটা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কেনা উচিত। শুধু আইপিওর শেয়ার নয়, অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই অধিক লাভের আশায় বসে থাকেন। এটা ঠিক নয়। যেকোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ভাবা উচিত ওই কোম্পানির শেয়ারদর ঠিক হওয়া উচিত। ওই সময়ই শেয়ার বিক্রি করে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘আইপিও লেনদেনের শুরুতে সার্কিট ব্রেকার দেওয়া হয়েছে মূলত একদিনে যেন শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত না হয়। বিনিয়োগকারীরা যেন কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল (মৌলভিত্তি) বিবেচনা করে শেয়ার কিনতে পারে। কিন্তু আমাদের হয়েছে উল্টো। বিনিয়োগকারীরা মনে করেছেন এই কোম্পানির শেয়ারের দর ক্রমাগত বাড়ছে, আরও বাড়বে। শেয়ার কিনতে হবে। কারণ তারা যখন শেয়ারের দর বাড়ে তখনই বেশি করে কেনে।’

বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘আগে লেনদেন শুরুর দিন কোন সার্কিট ব্রেকার ছিল না। ফলে প্রথম দিনই শেয়ারের দর দুই তিনশগুণ বেড়ে যেত। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতো বিনিয়োগকারীরা। ‘এখন তা হওয়ার সুযোগ নেই। বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এখানেও মিথ্যা শেয়ার কেনার চাহিদা তৈরি করে কারসাজি চেষ্টা করা হয়।’ তিনি জানান, রবির শেয়ার লেনদেন শুরুর পর একটি সন্দেহজনক ঘটনা তারা ধরেছেন।

পুঁজিবাজার থেকে ৫২৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে কোম্পানিটি। রবি আজিয়াটার আর্থিক বিবরণীতে দেখা যায়, সর্বশেষ পাঁচ বছরের মধ্যে দুই বছর লোকসানে ছিল কোম্পানিটি। এর মধ্যে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে লোকসানে ছিল। ২০১৬ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি লোকসান করে ৬৯৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। পরের বছর লোকসান কমে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। পরবর্র্তীতে ব্যবসায়িকভাবে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে লাভে ফিরে আসে কোম্পানিটি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে কোম্পানিটি মুনাফা করে ১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর আগের বছর (২০১৮ সালে) মুনাফা ছিল ২১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৯ সালে আগের চেয়ে মুনাফা অস্বাভাবিকহারে কমে গেছে।

যদিও ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির আয় বেড়েছে। এ সময় কোম্পানিটির রাজস্ব আয় দাঁড়ায় সাত হাজার ৪৮১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ছিল হাজার ৭৯৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তবে ২০১৮ সালে রবির আয় কমে যায়। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির আয় ছিল ছয় হাজার ৮২৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৬ সালেও কোম্পানিটির আয় কমে। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৯ হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিসাববছর শেষে পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া রবির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৬৪ পয়সা।

উল্লেখ্য, আলোচ্য সময়ের জন্য কোনো সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করেনি কোম্পানিটি। সমাপ্ত হিসাববছরে রবির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে মাত্র চার পয়সা। আর গত পাঁচ হিসাববছরের গড় হারে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৩ পয়সা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

ব্যাংক খাতে আমানত কমেছে

  • ১৭ অক্টোবর ২০২৪