কোম্পানির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে একটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে। বাকি দুটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ ও ৩১ মে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, যাতে কোম্পানির মালিকানা ৩৫ শতাংশ। কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে শেয়ারধারীদের কী হবে, সে বিষয়ে কেপিসিএল বা বিএসইসি কিছুই বলছে না।
পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত খুলনা পাওয়ারের শেয়ারধারীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। কোম্পানিটির যে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোর একটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে দুই বছরেরও বেশি সময় আগে। বাকি দুটির মেয়াদ আছে তিন মাস।
এই অবস্থায় কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা একেবারেই তলানিতে। কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের কারণে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের নিচে নামতে পারছে না দাম। ফলে কেউ লোকসান গুনে কম দামে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না।
কোম্পানিটির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। এর মধ্যে একটির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ায় আর নবায়ন করা হয়নি।
বাকি দুটির মধ্যে খানজাহান আলী পাওয়ার লিমিটেডের ৪০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ মে। আর খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ইউনিট টু ১১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে ২৮ মে।
মেয়াদ শেষ হলে কী হবে, সে বিষয়ে কোম্পানি বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি।
২০১০ সালে চাঙা পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হয় গড়ে ১৯৪ টাকা করে। ছয় বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৯৭ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ১৭৯টি শেয়ারের মধ্যে ৩০.০১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে আছে ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
যদি কোম্পানিটির বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আর নবায়ন না হয়, তাহলে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ২১ হাজার ৩৬৬টি শেয়ারের মালিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কী হবে, সে প্রশ্ন উঠেছে।
কোনো কোম্পানি অবসায়ন হলে সেই কোম্পানির শেয়ার বাই ব্যাক করার কোনো আইন বাংলাদেশে নেই। এই অবস্থায় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে উৎকণ্ঠিত অনেক মানুষ।
বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘তাদের শেয়ার যেহেতু পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীদের এ কোম্পানির প্রতি আস্থা আছে, সেহেতু তারা নিশ্চয়ই হঠাৎ করে বাজার থেকে চলে যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সের সঙ্গে বিএসইসির কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের লাইসেন্স নবায়ন হবে কি হবে না, সেটা তাদের বিষয়। আমাদের এখানে কোনো সমস্যা হলে সেটি আমরা দেখব এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা হয় সেভাবেই সবকিছু বিবেচনা করা হবে।’
জানতে চাইলে খুলনা পাওয়ারের কোম্পানি সচিব আরিফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এতে বিনিয়োগাকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে লাইসেন্স নবায়ন করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে নবায়ন না হলেও সময় নেয়া যায়। আমাদের আগের একটি প্ল্যান্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পর নবায়ন করা হয়।’
অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর লাইসেন্স আর নবায়ন করা হবে না। পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ হয় এমন তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলাকেও আর নতুন করে লাইসেন্স দিতে চায় না সরকার।
মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেলে কেপিসিএলের হাতে থাকবে কেবল সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার প্লান্ট। গত ১৮ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে এটি।
পটুয়াখালী জেলার খলিসাখালী এলাকায় ১৫ বছর মেয়াদি ১৫০ মেঘাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে খুলনা পাওয়ারের।
পুঁজিবাজারে ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মোর্চা বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ‘এই কোম্পানির শেয়ার কিনে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছেন। তাদের লাইসেন্স নবায়নের একেবারে শেষ সময়ে চলে এসেছে। এখনো তারা লাইসেন্স নবায়ন করেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের অস্পষ্টতার মধ্যে রাখছে। বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি করা উচিত।’
ফ্লোর প্রাইসেও ক্রেতা নেই
বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার গত ২৮ অক্টোবর থেকে লেনদেন হচ্ছে ফ্লোর প্রাইসে। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর বাজার মূল্যের বিবেচনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ঠিক করে দেয় কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর এর চেয়ে নিচে নামতে পারবে না।
কেপিসিএলের ক্ষেত্রে এই দাম ঠিক হয় ৪৫ টাকা ৩০ পয়সা। ২৮ জানুয়ারি থেকে এই দামেই রয়েছে শেয়ার। বিক্রির পরিমাণ খুবই কম।
বৃহস্পতিবার শেষ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ১৫ হাজার ৩৬৩টি শেয়ার।
কোম্পানিটি ২০১০ সালের। তালিকাভুক্তির বছরে ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের জুন মাস পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে।
এরপর ২০১০ সালের জন্য ২০ শতাংশ, ২০১১ সালের জন্য ২৫ শতাংশ, ২০১২ সালের জন্য ১২.৫ শতাংশ, ২০১৩ সালের জন্য ৫ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের জন্য আবার ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে।
১৯৪ টাকা ভিত্তি ধরে ১০ বছরের বোনাস শেয়ার হিসাব করলে দাম দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৫৫ পয়সা।
পাঁচ বছর ধরে নগদ লভ্যাংশের দিকে জোর দেন কোম্পানির উদ্যোক্তারা। ২০১৬ সালে ৭৫ শতাংশ (শেয়ারপ্রতি সাড়ে সাত টাকা), ২০১৭ সালে ৫৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৩০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ এবং ২০২০ সাল ৩৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।