টানা উত্থানের পর বর্তমানে নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে পুঁজিবাজার। গত এক মাসের বেশিরভাগ সময়ই বাজারে মন্দা পরিস্থিতি চলছে। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যে এ সময়ে পুঁজিবাজারে যোগ দেন প্রায় ৮২ হাজার নতুন মুখ, যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এপ্রিলে সবার জন্য আইপিও পদ্ধতি কার্যকর হওয়ার আগে সুযোগ নিতে যাচ্ছেন আইপিও শিকারিরা। কারণ এই সময়ের মধ্যে বাজারে আসছে আরও চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি। মূলত সে কারণেই বাড়ছে নতুন বিও সংখ্যা। তবে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্যও অনেকে পুঁজিবাজারে আসছেন বলে মন্তব্য করেন তারা।
গত বছরের নভেম্বর মাসে পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন প্রায় দেড় লাখ বিনিয়োগকারী। বহুজাতিক কোম্পানি বরির তালিকাভুক্তির খবরে বাড়ে উল্লেযোগ্যহারে বিও। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে তা নেমে এসেছে ৪৪ হাজারে। লটারি প্রথা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে আইপিওর শেয়ার বণ্টনের খবরেই ভাটা পড়েছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলা। জানুয়ারিতে নতুন বিও খোলা হয় ৮১ হাজার ৮২৯টি।
সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর শেষে পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৫২ হাজার ১৬৮টি। জানুয়ারি শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৯৭টি। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে প্রায় ৮১ হাজার ৮২৯টি। এর মধ্যে একক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৬ লাখ ৮১ হাজার ১৩৬টি। এছাড়া ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭৬৮টি যৌথ এবং কোম্পানির বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৪ হাজার ৯৩টি।
সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে লটারি প্রথা উঠিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে। সে অনুযায়ী বিনিয়োগকারীরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদন করলে সবাই শেয়ার পাবেন। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে ন্যূনতম বাজারমূল্যে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে এমন বিধান রেখে আইপিওর সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যমান লটারি ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সবার জন্য আইপিওর শেয়ার বরাদ্দ হলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা হবে। এখনও এমন অনেক লোক রয়েছে যারা একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন নামে শত শত বিও অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন। ফলে কোনো কোম্পানির আইপিও এলে তাদের আবেদনই বেশি পড়ে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে পড়েন। সবার জন্য আইপিও পদ্ধতি চালু হলে তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিষয়টিতে আমি ভিন্নমত পোষণ করছি। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন আছে কি না আমার জানা নেই। আমার মতে, আগের নিয়মই ঠিক ছিল।’
একই বিষয়ে জয়তুন সিকিউরিটিজ ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জাামান বলেন, ‘বাজারে আইপিও থাকলে বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা এমনিতেই বাড়ে। সম্প্রতি বাজার পরিস্থিতি কিছুটা মন্দা হলেও এর আগে পরিস্থিতি বেশ ভালো ছিল। সে কারণেই নতুন বিনিয়োগকারী বাড়ছে।’
স্মরণকালের (২০১০ সালের) ভয়াবহ ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধারাবাহিক ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। গত ছয় বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৯ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট। বর্তমানে বাজারচিত্র বদলে যাওয়ায় আবারও পুঁজিবাজারে ফিরছেন বিনিয়োগকারীরা। নতুন নিয়মের কারণে চলতি বছর বিপুলসংখ্যক বিও ঝরে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিয়মানুযায়ী, জুনে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়।
এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।