বেশ কিছুদিন ধরে অব্যাহত দর পতন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। এর মধ্যেও থেমে নেই যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা আর লেনদেনে নিষ্ক্রিয় থাকা। লেনদেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এবং অব্যাহত দর পতন বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশা বাড়াচ্ছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম নিরলসভাবে বাজার উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেলেও সুবিধাভোগী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আস্থা সংকটে আছে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাজ হল, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থিতিশীল বাজার তৈরি করা। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারী ছাড়া এই বাজার টেকসই হবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেসব সুবিধা বিদ্যমান তার সিংহ ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য। আইপিও শেয়ার বরাদ্দের নতুন নিয়ম যা আগামী এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। নতুন এই উদ্যোগ বাজার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে প্রসংশিত হচ্ছে। কিন্তু যোগ্য বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে নিয়ম পরিবর্তন না হলে, কোন সুফল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন না বলে আমি মনে করি।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু এই যোগ্য বিনিয়োগকারীদের অতি মুনাফা লোভ সকল উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যদিও নানা আলোচনা আর অনিয়মের কারণে সম্প্রতি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে দর নির্ধরণ বা কাট-অফ প্রাইসের যৌক্তিক দর প্রস্তাবের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হবে না বলে আমি মনে করি।
কারণ যোগ্য বিনিয়োগকারীরা, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৫০ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ পায়। ২০১৭ সালের নির্দেশনায় তার লক-ইন পিরিয়ড ছিল। অর্থাৎ বর্তমানের মত লেনদেনের প্রথম দিনে সব শেয়ার বিক্রয় যোগ্য ছিল না। প্রথম দিন ৫০ শতাংশ, ৬ মাস পর ২৫ শতাংশ, ৯ মাস পর বাকি ২৫ শতাংশ বিক্রয়যোগ্য ছিল। সেইজন্য নিজেদের স্বার্থেই দাম ধরে রাখত তারা। কিন্ত বর্তমানে মুনাফা ছাড়া অন্য কোন দায়বদ্ধতা নাই।
বিএসইসিকে চাপ দিয়ে নানা সুবিধা যোগ্য বিনিয়োগকারীরা নিয়ে থাকেলও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সহায়তার কোন ইচ্ছা তাদের নাই।
তাই বাজারের সবার স্বার্থে কিছু সুপারিশ রাখছি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে। সেগুলো হলো-
যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কোটা কমিয়ে দেওয়া।
লক-ইন পিরিয়ড পুনর্বহাল করা।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যারা অস্বাভাবিক মূল্য নির্ণয় করবে তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা।
সবশেষ সকলের জন্য একটা স্থিতিশীল পুঁজিবাজার হোক এ প্রত্যাশা করছি।
আল-আমিন, সহযোগী অধ্যাপক একাউনটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।