নতুন বছরের শুরুতেও দাপট দেখিয়েছে এই বাজার। গত বছরের শেষ ছয় মাস দাপুটে লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। বিশেষ করে রবি আজিয়াটা ও দেশের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট গ্রুপ ওয়ালটন এসে শেয়ার লেনদেনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তবে টানা উত্থান হতে থাকায় অনেকের মধ্যে আস্থার সঙ্কটও দেখা দিতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, গত দুই সপ্তাহের কারেকশনে বাজারের ভিত আরও শক্তিশালী হয়েছে। এতে নতুন বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার প্রতি আগ্রহী হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, শুধু উত্থান হলেই বাজার ভালো বলা যায় না। নতুন বিনিয়োগকারীরা যাতে নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে পারেন সে ব্যবস্থাও জরুরি। এজন্য বাজার কারেকশন দরকার হয়। কেনাবেচা যখন বাড়বে, তখন তাকে ভালো বাজার বলা যায়।
টানা উত্থানের পর বাজার কারেকশন বা সংশোধন হওয়া আগেই জরুরি ছিল বলে মনে করেন ড. জায়েদ বখত।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরতপনও হয়েছে। এক সপ্তাহে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি মূলধন হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কমেছে সবকটি মূল্যসূচক ও লেনদেন। প্রধান মূল্যসূচক ছিল প্রায় ২ শতাংশ। লেনদেন কমেছে ২৩ শতাংশেরও বেশি।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ১২ কোটি টাকায়। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এক সপ্তাহে মূলধন কমেছে ৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা দুই সপ্তাহে ডিএসই ১৭ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছে।
এর আগে টানা সাত সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছিল ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়ার পর ১৭ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা কমেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১১১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৭৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট। আগের টানা সাত সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছিল ১ হাজার ৩৭ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি টানা দুই সপ্তাহ পতন হয়েছে অপেক্ষাকৃত ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকেরও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ১৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে কমেছে ২৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। তার আগের সাত সপ্তাহে বেড়েছিল ৫৪৬ পয়েন্ট।
ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও টানা দুই সপ্তাহ পতনের মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহে কমেছে ১৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে কমেছে ২৮ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট। এর আগে টানা পাঁচ সপ্তাহে বেড়েছিল ২০৪ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। দাম বেড়েছে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের। কমেছে ২৫৫টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৯টির। বাজারের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের প্রতিটি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২০৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ১ হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ।