চলতি সপ্তাহের শুরুতে পতন থাকলেও শেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় আবারও উঠে এসেছে বেক্সিমকো লিমিটেড ও রবি।
সপ্তাহের শুরুর প্রথম তিন কার্যদিবস কমেছে সূচক। একই সঙ্গে ছিল লেনদেনে উত্থান পতন। সূচকের এই পতনকে মূল্য সংশোধন বলেছিলেন বাজার বিশ্লেষকরা। ফলে এই সময়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার দর ৮৯ টাকা থেকে নেমে আসে ৭৮ টাকায়। আর রবির শেয়ার দর ৫৭ টাকা থেকে নেমে আসে ৫০ টাকায়।
শেয়ার দর কমে যাওয়ায় এখন আবার নতুন করে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
তারা বলছেন, বেক্সিমকোর ব্যবসায়ীক সাফল্য উল্লেখ করে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠাটির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় পর পুঁজিবাজারে টেলিকমিউনিকেশন খাতের রবি তালিকাভুক্ত হওয়ায় আগ্রহ বেশি বিনিয়োগকারীদের। গত কয়েক দিন এই দুই কোম্পানির শেয়ারের দর কমায় এখন আবার কিনছে বিনিয়োগকারীরা। ফলে দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বৃহস্পতিবার বেক্সিমকোর শেয়ার দর ছিল ৮৫ টাকা আর রবির শেয়ার দর ছিল ৫৪ টাকা। এই দুই কোম্পানি শীর্ষ লেনদেন হওয়া কোম্পানির তালিকায় ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, রবির প্রায় দুই কোটির বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, যার সিংহভাগ কিনছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একইভাবে এক মাসে বেক্সিমকোর প্রায় পাঁচ কোটি শেয়ার বিক্রির খবর পাওয়ায় গেছে, যার পুরোটাই কিনেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
পতনের বাজারে নতুন আস্থা হিসেবে আসে আইসিবির সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার খবর। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কাছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি পুঁজিবাজার আধুনিকায়নে সাত মিলিয়ন ডলার অনুদান চায়।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল্য সংশোধনের মাধ্যমে বাজারে কিছু মূল্য সংশোধন হয়েছে। বিশেষ করে বেক্সিমকো ও রবির শেয়ারের মূল্য সংশোধন হওয়া প্রয়োজন ছিল। ’
তিনি বলেন, এ সপ্তাহে আইসিবির বন্ড ছাড়া, বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুদান চাওয়াসহ বেশ কিছু ভালো আলোচনা ছিল পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে আস্থা ধরে রাখা সম্ভব হলে মূল্য সংশোধনের মাধ্যমে সূচকের পতন হবে সত্যি, তবে তা আবার ঘুরে দাঁড়াবে।’
বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেডের এক কোটি ৪৮ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকায়। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল রবি, যার এক কোটি ২১ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৪ কোটি টাকায়। এছাড়া এ তালিকায় আরো ছিল বেক্সিমকো ফার্মা, যার ৩২ লাখ ৮৮ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি টাকায়। ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকে লিমিটেডের তিন লাখ ৫২ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৭ কোটি টাকায়।
সূচক ও লেনদেন
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে-ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে। শরিয়াহ ভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস দশমিক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৮০ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১২ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৯১ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৫৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৪টির, কমেছে ১৩১টির ও পাল্টায়নি ৯৪টির দর। মোট লেনদেন হয়েছে ৯৪১ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৯০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩৬ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮৬ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৭৫ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ২৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৭টির, কমেছে ৮৭টির ও পাল্টায়নি ৬০টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা।
দর বেড়েছে কমেছে
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৯.৮৫ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল আমান ফিড, যার দর বেড়েছে ৯.০৯ শতাংশ। এছাড়া বেক্সিমকোর শেয়ারের দর বেড়েছে ৮.১৪ শতাংশ। সাইফপাওয়ার লিমিটেডের শেয়ারের দর বেড়েছে ৭.৪২ শতাংশ।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, যার শেয়ারের দর কমেছে ৬.১৫ শতাংশ। এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ারের দর কমেছে ৫.৮০ শতাংশ। এসএস স্ট্রিল লিমিটেডের শেয়ারে দর কমেছে ৫.৬৮ শতাংশ। এছাড়া প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ছিল এ তালিকায়।