আগামী এপ্রিল থেকে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন নিয়মে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর শেয়ার বিলির নিয়ম করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আগের লটারির ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন নিয়মে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বণ্টন হবে আনুপাতিক হারে। অর্থাৎ, আইপিওতে যারা আবেদন করবেন, তারা সবাই শেয়ার পাবেন।
কিন্তু তাতে লাভ কী হবে?
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আইপিওর নিলামে শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাওয়া ঠেকিয়ে দেবে নতুন নিয়ম, যার সুফল পাবে পুঁজিবাজার। গত বছরের শেষ দিন বাংলাদেশ সিকিউরিটজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নতুন পদ্ধতিতে আইপিওর শেয়ার বণ্টনের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের ‘দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উত্সাহী করতেই’ এ নতুন পদ্ধতি।
নতুন নিয়মে শর্ত দেওয়া হয়েছে, আইপিওতে আবেদনের আগে একজন বিনিয়োগকারীর তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ বা সেকেন্ডারি মার্কেটে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। আইপিওতে বিনিয়োগের জন্য আগে এ নিয়ম ছিল না।
কমিশনের মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এই নিয়ম পরিপালন করতে হলে পুঁজিবাজারে নতুন টাকা ঢুকবে। কারণ আইপিওতে আবেদন করার আগে সেকেন্ডারি মার্কেটে আগে বিনিয়োগ থাকতে হবে। এছাড়া আইপিওতে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকার শেয়ারের জন্য আবেদন করতে হবে। কেউ চাইলে ১০ হাজার টাকার গুণিতক হারে আবেদন করতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, “এই নিয়মের ফলে সবাই শেয়ার পাবে। নিলাম হবে না বলে আগের মত আইপিওতে শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাবে না।”
একই মত মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের। তিনি বলেন, “লটারির ব্যবস্থা উঠিয়ে দেওয়া একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সবাই শেয়ার পেয়ে যাবে, ফলে শেয়ারের সরবরাহ বেড়ে যাবে। আগের মত কম মানুষের হাতে শেয়ার থাকবে না। আবার আইপিওতে শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবেও বাড়বে না।” মনিরুজ্জামানের ধারণা, এই নিয়মের ফলে দেশের পুঁজিবাজারে ‘একটি নতুন শ্রেণির’ বিনিয়োগকারী তৈরি হবে, যারা আইপিওর শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতেন চান। “আগে শেয়ারের জন্য আবেদন করার পর আবার লটারি করা লাগত। এখন লাটারি ছাড়াই শেয়ার যার যার অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। এখন চাইলে অনেক আগেই শেয়ারের লেনদেন শুরু হয়ে যেতে পারে।”
অনেক বিনিয়োগকারী আছেন, যারা নতুন আইপিওর অপেক্ষায় থাকেন। আইপিও ছাড়া হলে তারা নাম-বেনামে বিভিন্ন বিও অ্যাকাউন্ট থেকে আবেদন করেন। লটারিতে শেয়ার পেলে দাম বাড়ার পর বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে যান। এদেরকে বলা হয় ‘আইপিও হান্টার’। অনেক সময় এদের কারণে একটি অ্যাকাউন্টধারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আইপিওর লটারিতে শেয়ার পান না। লটারি পদ্ধতি উঠে যাওয়ায় এই আইপিও হান্টারদের দৌরাত্ম আর থাকবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম।
আর ব্রোকারেজ হাউজ ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদিক বলেন, “যারা শুধু আইপিওর শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন, তারা মার্কেটের কেউ না। তারা অনেক অ্যাকাউন্ট খুলে শুধু আইপিওতে বিনিয়োগ করতেন, সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করতেন না। “এখন আইপিওতে বিনিয়োগ করতে হলে আগে ২০ হাজার টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করতে হবে। এটা দেশের পুঁজিবাজারে ভালো প্রভাব ফেলবে, যেহেতু সবাই লংটার্ম বিনিয়োগ করার চেষ্টা করবে।”