বিক্রি করে নয়; কেনার সময়ই আপনাকে লাভ করতে হবে। কম দামে ভাল শেয়ার কিনতে না পারলে বিক্রি করে লাভ করা সম্ভব নয়। ব্যাক্তিগতভাবে ‘ডাউন মার্কেট’ ই হল আমার প্রিয় বিনিয়োগের সময়। কারণ, এ সময় ভাল মানের শেয়ার তুনামূলকভাবে অনেক কম দামে কেনার সুযোগ পাওয়া যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির দিক নিম্নে আলোচনা করছি। তবে এই চেক লিস্টই শেষ নয়। বিনিয়োগকারী হিসেবে সময়ের সাথে সাথে আপনি যেমন অভিজ্ঞ হবেন, তেমনি এই চেক লিস্টও আপনার অভিজ্ঞতার সাথে সাথে বড় হবে।
ভাল কোম্পানির শেয়ার কেনার প্রাথমিক চেকলিস্ট প্রথমেই আপনার পছন্দের শেয়ারটির P/E দেখুন। এটা অবশ্যই ১৫ বা তার নিচে হওয়া উচিত। যত কম হবে ততই ভাল।
এবার NAV দেখুন। NAV এর সাথে বাজার মূল্যের সামঞ্জস্য থাকা উচিত। সাধারনত NAV ও শেয়ারের মূল্য অনুপান ১ হলে তা বিনিয়োগের জন্য আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। তবে আমাদের বাজারে এ অনুপাত ১.৫ থেকে ২ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। মানে ৩০ টাকা NAV হলে ঐ শেয়ারের জন্য ৬০ টাকা পর্যন্ত ক্রয় মূল্য নিরাপদ।
কোম্পানির EPS ও NAV এর অনুপাত নির্ণয় করুন। এ অনুপাত ১০ বা তার চাইতে যত বেশি হবে শেয়ারটি তত ভাল বলে বিবেচিত হবে।
গত ৩/৪ বছরে কোম্পানির EPS বা মোট লাভের পরিমাণ লক্ষ্য করুন। ধারাবাহিক ভাবে EPS বা মোট লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায়া ভাল কোম্পানির লক্ষণ।
মোট শেয়েরের সংখ্যা দেখুন। আর দেখুন তার কতটুকু পাবলিকের হাতে আছে। নিয়মিত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় লেনদেন হয় এমন শেয়ারই কেনা উচিত। ছোট paid-up capital এর শেয়ার তুলনামূলক ভাবে অতিমূল্যায়িত থাকে এবং এদের দাম অনেকে বেশি flactuate করে। তাই একজন নতুন অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি মধ্যম থেকে বড় মাপের paid-up capital আছে এমন শেয়ারে বিনিয়োগ করুন। কারণ মাঝারী থেকে বড় মূলধনের (১৫০ কোটি বা তার ওপরের)স্টকগুলোর বাজার দর অনেক বেশি stable থাকে।
Authorized capital আর Paid-up capita এর অনুপাত দেখুন। যদি দুটি খুব কাছাকাছি হয় তবে ঐ কোম্পানি কখনই ডিভিডেন্ড হিসেবে বোনাস শেয়ার দেবেনা। এ ধরনের শেয়ার থেকে আপনি শুধু ক্যাশ ডিভিডেন্ড পাবেন।
গত ৩-৪ বছরের ট্রেক রেকর্ড দেখুন। কী পরিমাণ বোনাস দেয় তা দেখুন। নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেয়া কোম্পানিগুল তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ।
গত ১/২ বছরের গড় মূল্য দেখুন। চেষ্টা করুন এ মূল্যার কাছাকাছি দামে শেয়াটি কিনতে।
ডিএসই’র সাইটে প্রকাশিত গত ৫-৬ মাসের কোম্পানি সংশ্লিষ্ট খবরগুলি দেখুন।
ডিএসই প্রতি ৪ মাস পর পর কম্পানির আর্নিং রিপোর্ট দেয়। একটু বুঝে-শুনে হিসেব করলেই কোম্পানি বছর শেষে কি পরিমাণ লাভ করবে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব।
কোম্পানির সুনাম ও এর পরিচালকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা করুন। পরিচালকদের ব্যক্তিগত ইমেজ খারাপ হলে ঐ কপম্পানি ফান্ডামেন্টালি যত ভালই হোক তা এড়িয়ে চলুন।
কি ভাবে কিনবেন ?
ধরুন আপনি কোম্পানি ‘ক’ এর ১০০০ টি শেয়ার কিনতে চান। সাধারণত আমরা একবারেই সব শেয়ার কিনে ফেলি। আর এতে আমাদের লোকসানের ঝুঁকি অনেক অনেক বেড়ে যায়। বরং একবারে সব শেয়ার না কিনে ৩-৪ বারে কিনুন। এটা মাথায় রাখুন যে, আপনি কেনার পর পরই শেয়ারটির দাম পড়ে যেতে পারে।
তাই ৩/৪ বারে কিনলে আপনার গড়ক্রয় মূল্য অন্যদের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই কম হবে। অর্থাৎ শুরুতেই আপনি অন্যদের চাইতে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবেন; যা আপনার মুনাফা অর্জনের জন্য সহায়ক। -এ স্ট্রটেজিকে বলা হয় এভারেজিং টেকনিক। বিক্রির ক্ষেত্রেও একই ফরমূলা অনুসরণ করুন। সব শেয়ার একবারে বিক্রি না করে ২-৩ ধাপে বিক্রি করুন। কতটুকু কিনবেন ? এটা নির্ভর করে আপনার পোর্টফলিও এর ডিজাইন ও তার বর্তমান অবস্থার ওপর। সহজ কথায়, সব মূলধন একটি কোম্পানির স্টকে বিনিয়োগ নিরাপদ নয়। এ কারনে সব টাকা একটি সেক্টরের ৩/৪ টি শেয়ার বিনিয়োগ করাও অনুচিত। নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য প্রথমেই ২-৩ টি সেক্টর বাছাই করুন। এবার প্রতিটি সেক্টর থেকে ২-৪ টি কম্পানির শেয়ার আপনার পোর্টফলিওতে রাখুন। কারন সব ডিম এক খাচায় রাখলে একটি দুর্ঘটনাই আপনার সব কিছু নষ্ট করে দিতে পারে। তাই কখনই সব মূলধন একটি শেয়ারে বা একটি সেক্টরের শেয়ার সমূহে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকুন। ইনশাল্লহ পরবর্তী পোস্টে পোর্টফলিও ডিজাইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা রাখছি। আশা করি তা থেকে আপনারা উপকৃত হবেন। লেখক- মোহাম্মদ হাসান শাহারিয়ার