1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন

নজরদারির অর্থনীতি

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২১


কোনো কিছু চুরি হয়েছে? ছিনতাইয়ের মুখে পড়েছেন কেউ কিংবা শহরে কোনো খুনের ঘটনা ঘটেছে?
এরকম ক্ষেত্রে এ সময়ে, নজরদারীর জন্য বসানো সিসিটিভির ফুটেজের সাহায্যে দ্রুতই অপরাধীকে সনাক্ত করা সহজ হচ্ছে।

ইলেকট্রনিক নিরাপত্তার এ বলয় অপরাধীদের জন্য বিপদ সংকেত; এ কারণেই ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তি নির্ভরতাও বেড়েছে বহুগুণে।

বৈশ্বিক অপরাধ সূচকে ঢাকা একটি সামনের সারির শহর। অপরাধ ঠেকাতে তাই ঢাকাবাসী প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থার দিকে দ্বারস্থ হচ্ছেন। ফলে বাজারে ভিডিও নজরদারি যন্ত্রের চাহিদাও বেড়েছে। বিগত ৪-৫ বছরে ভিডিও নজরদারি যন্ত্র কেনার খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

সরকারী বড় প্রকল্প ছাড়াই নজরদারি যন্ত্রের বার্ষিক খরচ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরও চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

নজরদারিতায় বিশ্বের ৩৭তম শহর ঢাকা

আন্তর্জাতিক অনলাইন নিরাপত্তা ও নজরদারি সংস্থা সার্ফশার্কের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাবলিক প্লেসে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা সংখ্যার হিসাবে বিশ্বে ঢাকার অবস্থান ৩৭তম। এ হিসাবে হংকং, লস অ্যাঞ্জেলেস, মাদ্রিদ, মিলান ও ব্যাংককের চেয়েও এগিয়ে আছে ঢাকা।

বিশ্বের ১৩০ টি জনবহুল শহরের ওপর করা এ গবেষণায় জানানো হয়েছে, ঢাকার পাবলিক স্পেসগুলোতে প্রায় ১৬ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে ৫২ দশমিক ২৯ টি। এ সংখ্যা নিউইয়র্কের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ।

প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে ০.৩২টি ক্যামেরা নিয়ে এ তালিকার ১২২ তম অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম।

এরপরও ঢাকার রাস্তায় শহরবাসী নিরাপদ বোধ করছে এমন দিন আসতে আরও অনেক দিন লাগবে। অপরাধ দমনের দিক থেকে ১৩০টি শহরের মধ্যে ১০৮ তম অবস্থানে আছে ঢাকা। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কিছু শহরের চেয়ে ঢাকা এদিক দিয়ে এগিয়ে আছে।

সার্বিয়া ভিত্তিক সংস্থা নামবিও প্রকাশিত অপরাধ সূচকে ঢাকা পেয়েছে ৬৪ দশমিক ৩৩ নম্বর। নাম্বিওর সূচক অনুযায়ী ২০ এর চেয়ে কম হলো অতি নিম্ন অপরাধ হার, ২০-৪০ হলো নিম্ন অপরাধ হার, ৪০-৬০ মধ্য, ৬০-৮০ উচ্চ অপরাধ হার এবং ৮০’র বেশি হলে তা অতি উচ্চ অপরাধ হার।

ভিডিও নজরদারি যন্ত্রের বাজার

একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ঢাকায় সিসিটিভি’র বাজার বড় হতে শুরু হয়। ২০০৩ সালে ভিডিও নজরদারি যন্ত্র বিক্রি শুরু করেন ঢাকার ব্যবসায়ী সাগর কুমার টিটো।

তিনি জানান, সেসময় একটি ক্যামেরার দাম পড়তো ২৫হাজার টাকা। শহরের অভিজাত শ্রেণীর মানুষই ছিল সেসময় সিসিটিভি ক্যামেরার প্রধান ক্রেতা, তখন বছরে বিক্রি হতো প্রায় ১০ হাজার ক্যামেরা।
সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে সফলভাবে অপরাধী শনাক্তকরণের ঘটনাগুলো সামনে আসার পর, সরকারও সিসিটিভির নজরদারি বাড়িয়ে তোলার ওপর জোর দেয় এবং অ্যাপার্টমেন্ট ও বিভিন্ন দোকানে সিসিটিভির ব্যবহার বাড়তে শুরু করে।

ইলেকট্রনিক সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. মোতাহার হোসেন খান জানান, ছয়- সাত বছর আগে থেকেই সিসিটিভির চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে। ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর বহুগুণে সিসিটিভির চাহিদা বেড়ে যায়।

তার প্রতিষ্ঠানের অনেক সদস্যই সিসিটিভি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তবে এ খাতের ৮০ শতাংশই চীনা প্রতিষ্ঠান হিকভিশন ও দাহুয়ার দখলে।

দাহুয়ার স্থানীয় অংশীদার প্রতিষ্ঠান সিডনি-সান ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাগর কুমার টিটো দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে জানান, ২০১৬ সাল থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার ৫০ শতাংশ বেড়েছে। সরকারে বড় প্রকল্পে কেনাকাটা ছাড়াও বাংলাদেশ বছরে ভিডিও নজরদারি সিস্টেমের জন্য ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে।

“আমি যখন প্রথমে সিসিটিভির ব্যবসা শুরু করি অভিজাত শ্রেণির মানুষই এর প্রধান গ্রাহক ছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি জনসাধারণের বহুল ব্যবহৃত পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে,” বলেন তিনি।

২০১৫ সালে দুই লাখ সিসিটিভি ক্যামেরা বিক্রি হয়, গত বছর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ।

তিনি আরও বলেন, “অন্তত ৭০ শতাংশ ক্যামেরাই ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কেনা হয়, বাকিগুলোর গ্রাহক সরকারী বা বেসরকারি সংস্থা।”

সাগর কুমার টিটো ও মোতাহার হোসেন দুজনই মনে করেন, এ খাতটির বেশ ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমানে বড় শহরের বাইরেও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভির দ্বারস্থ হচ্ছেন। সরকারি সংস্থা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে সিসিটিভি কিনতে অর্থ বিনিয়োগ করলে চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান মোতাহার হোসেন।

অন্যদিকে, কয়েক বছরের মধ্যেই গ্রাহকদের চাহিদা বেড়েই ১ হাজার কোটি টাকার বাজার দাঁড়িয়ে যাবে মনে করছেন সাগর কুমার টিটো।

মহামারির কারণে চাহিদা বৃদ্ধি

নিউ এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান্ট সেন্টারের আইটি হার্ডওয়্যার বিক্রির দোকান টেক-হিল দেশে লকডাউন জারি হওয়ার পরই এর আগের বছরের মে-জুনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সিসিটিভি ও সংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রি করেছে।

টেক-হিলের ব্যবস্থাপক আনিসুল হক চৌধুরী জানান, তুলনামূলক নির্জন অঞ্চলের অধিবাসীরা নিজেদের বাসায় ও কর্মক্ষেত্রে ভিডিও নজরদারি চালু করায় জোর দিচ্ছেন।

গত বছর ২০১৮ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি। তার একজন গ্রাহক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক গ্রামের বাজার থেকে ক্লাউড সার্ভিস ব্যাক-আপ সমৃদ্ধ সিসিটিভি সিস্টেম কিনে নিয়েছেন, যাতে হার্ডওয়্যার নষ্ট বা চুরি হয়ে গেলেও তিনি অপরাধী শনাক্ত করতে পারেন।

সিডনি-সানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ধীরে ধীরে ক্লাউড ব্যবস্থার চাহিদা বাড়ছে; প্রায় ৩ শতাংশ গ্রাহক তাদের ফুটেজ অনলাইনে সংরক্ষণের জন্য বাড়তি অর্থ খরচ করছেন। প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরার ক্লাউড সার্ভিসের জন্য বার্ষিক খরচ ১ হাজার ৫০০ টাকা হওয়ায় প্রতিনিয়ত গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে মহামারির কারণে সরকারি প্রকল্পে বিক্রি কিছুটা কমে গেছে।

অপরাধ রুখতে সিসিটিভি

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘আপনি সিসিটিভি নজরদারির আওতায় আছেন’ এ ধরণের লিখিত সতর্কবার্তা মানুষকে সংযত রাখতে এবং অপরাধীদের দূরে রাখতে প্রভাব রাখে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, “সিসিটিভি প্রধানত দুইভাবে অপরাধ কমাতে সাহায্য করে। প্রথমত, শনাক্ত হয়ে যাবে এমন ভয় থেকেই অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকেন। দ্বিতীয়ত, ভিডিও ফুটেজ দ্রুত পুলিশকে অপরাধী শনাক্তকরণে সাহায্য করে।”

ডিএমপির অধীনে ঢাকা শহরজুড়ে ১ হাজার ২০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা পরিচালিত হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও পৌরসভায় এ সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি।

তিনি জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পরবর্তী তিন মাসে শহরজুড়ে মোট ২১৮টি জায়গায় আরও ৬০০টি ক্যামেরা স্থাপন করবে ডিএমপি।

ডিএমপির তথ্যমতে, হত্যা ছাড়াই অন্যান্য অপরাধের জন্য ১৬ হাজার ৪৮৭টি মামলা দায়ের করা হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৩৩৪টি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ২২০।

ডিএমপির সহকারী মিডিয়া কর্মকর্তা (এডিসি) ইফতেখাইরুল ইসলাম বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে সিসিটিভি নজরদারি বাড়ানোর কারণে যানবাহন চুরি, ছিনতাই এমনকি খুনের মাত্রাও আগের চেয়ে কমেছে।”

সিসিটিভি নজরদারি ব্যবস্থার জোরদার ভবিষ্যতে অপরাধের হার আরও কমিয়ে আনবে বলে মনে করে তিনি।

চাহিদার কারণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক জানান, ঢাকা শহজুড়ে ৫০ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার। ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

এ খাতের প্রবৃদ্ধি বিবেচনায়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে অ্যাসেম্বলিং প্ল্যান্ট নির্মাণে ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে যাছে সিডনি-সান।

এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাগর কুমার টিটো জানান, আমদানিকৃত সিসিটিভি ক্যামেরা ও রেকর্ডারের নির্ধারিত কর ও শুল্ক ৩৭ ও ৮৯ শতাংশ।

“আমরা মার্চ থেকেই দাহুয়ার বিভিন্ন পণ্যের স্থানীয় প্রস্তুতকরণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। ফলে পরবর্তীতে দাম আরও কমিয়ে আনতে পারবো। কারণ স্থানীয়ভাবে নির্মিত পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক পড়বে ১ শতাংশ।”

পাবলিক প্লেসে ব্যবহৃত সিসিটিভি ক্যামেরার দাম ইতোমধ্যেই ১ হাজারে নেমে এসেছে, তবে উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরার দাম প্রায় ২৫ গুণ বেশি।
আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ভিত্তিক উদ্যোগ গেজ টেকনোলজি ব্যক্তিগত অর্থে ৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২০১৮ সালে দুইজন তরুণ উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠিত এ সংস্থাটি ইতোমধ্যে ডিএমপির সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে এবং ভিডিও বিশ্লেষণের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছে।

গেজ টেকনোলজি তাদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজে জমা পড়া ভিডিও ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করে এবং ‘ইনটেলিজেন্ট ভিজ্যুয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি’র মাধ্যমে ভিডিওতে ধরা পড়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারে।

সুত্র বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ