শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডারদের অদাবিকৃত ২১ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ পড়ে রয়েছে। শেয়ারহোল্ডাররা ঠিকানা না পাওয়া, ওয়ারিশ নিয়ে জটিলতাসহ বিভিন্ন কারনে কোম্পানিগুলোতে এই লভ্যাংশ জমা পড়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই পড়ে থাকা লভ্যাংশকে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।বিএসইসির পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের অদাবিকৃত লভ্যাংশের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) দায়িত্ব দেয়া হয়। ডিএসই ২১৮টি কোম্পানির কাছে অপরিশোধিত লভ্যাংশের তথ্য চেয়েছিল। যার মধ্যে ২০৮টি কোম্পানি তথ্য দিয়েছে। আর সিএসইর পক্ষ থেকে ১৫৩টি কোম্পানি কাছে তথ্য চাওয়া হলে ১২৭টি দিয়েছে।
ডিএসইর পরিসংখ্যান অনুসারে, কোম্পানিগুলোর অদাবিকৃত বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ ১১ হাজার ১০৪ কোটি ৪৮ লাখ ১৬ হাজার ৩৮৩ টাকা ও নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ৬৩৪ কোটি ৬৬ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৮ টাকা। আর সিএসইর হিসাব অনুসারে অদাবিকৃত বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮৮১ কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ৪৬৩ টাকা ও নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ৩২১ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিগুলাতে শেয়ারহোল্ডারদের মোট লভ্যাংশ পাওনার পরিমাণ জমা রয়েছে ২০ হাজার ৯৪২ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০৪ টাকা।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৮০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অদাবিকৃত লভ্যাংশ রয়েছে তামাক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের (বিএটিবিসি) কাছে। এরমধ্যে ৮ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বোনাস লভ্যাংশ এবং ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা নগদ লভ্যাংশ।
বিএসইসির পক্ষ থেকে এরইমধ্যে বিপুল অংকের এ অদাবিকৃত লভ্যাংশ শেয়ারাবাজারে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোর জন্য একটি নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে, যা শিগগিরই জারি করা হবে। নির্দেশনায় লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের এক বছরের মধ্যে অপরিশোধিত লভ্যাংশ একটি আলাদা ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। স্টক লভ্যাংশ ৩০ দিনের মধ্যে বিও হিসাবে পাঠিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে অদাবিকৃত বোনাস লভ্যাংশের জন্য একটি আলাদা সাসপেন্স বিও হিসাব রাখতে হবে কোম্পানিগুলোকে।
এছাড়া লভ্যাংশ ঘোষণা কিংবা অনুমোদনের তিন বছর অদাবিকৃত বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ ‘বিএসইসির পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল’ নামক একটি বিশেষ তহবিলে স্থানান্তর করা হবে। এ তহবিল থেকে শেয়ার ধারের মাধ্যমে বাজারে শেয়ার সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতায় ব্যবহার করা হবে। কীভাবে অপরিশোধিত লভ্যাংশ কাজে লাগানো হবে, এ-সংক্রান্ত একটি বিধিমালা প্রস্তুত করেছে কমিশন। শিগগিরই এ বিষয়ে জনমত যাচাই করা হবে।