৩০ ডিসেম্বর পযন্ত চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ৬৯৩৭ জন ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা তাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছেন।
আয়কর রিটার্নে ঘোষণা দিয়ে সরকারকে মোট ১১১০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছেন তারা। সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এসেছে আবাসন খাতে।
তবে ব্যক্তি শ্রেনীর করদাতাদের রিটার্ন দেওয়ার হার গত বছরের তুলনায় কমেছে এ অর্থবছরে। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দিয়েছেন ২০.৪১ লাখ করদাতা। আগের বছর এটি ছিল ২২ লাখের কিছু বেশি।
কালো টাকা বিনিয়োগের বিদেশে পাচারের পরিবর্তে দেশে বিনিয়োগের এ হারকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমতুল মুনিম।
তিনি বলছেন, কর দিয়ে সাদা করা এসব অর্থ আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে না। টাকা বিদেশে চলে যাওয়ার চেয়ে যেকোনো উপায়ে দেশে বিনিয়োগ হওয়া ভালো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে টাকা বিনিয়োগ করা হযেছে তার পরিমাণ প্রকৃত কালো টাকার তুলনায় খুব কম। হাতেগোণা কিছু মধ্যবিত্ত তাদের কর বহির্ভূত আয় পুঁজিবাজার আর আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন, বলেই তাদের মন্তব্য।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ”এর মাধ্যমে এনবিআর কিছু কর পেলেও বিনিয়োগের পরিমাণটা খুব বেশি নয়। ধনীক শ্রেনীর একটা অংশ এ সুযোগটি নিয়েছেন। তবে এতে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন।
এনবিআরে জমা দেয়া রিটার্ন থেকে জানা যায়; নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ফ্ল্যাট ও জমি কিনে কালো টাকা সাদা করেছেন ৬ হাজার ৭৪৯ জন। সরকার এই খাত থেকে কর পেয়েছে ৮৫৮ কোটি টাকা। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন ১৮৮ জন। তাদের কাছ থেকে সরকার কর পেয়েছে ২৫২ কোটি টাকা।
মহামারীর কারণে দেশের অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে আয়কর আদায়ে যে প্রভাব পড়বে, তা কাটিয়ে উঠতে আয়কর দেওয়ার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে সরকার।
গত অর্থবছর পর্যন্ত করদাতারা আয়কর বিধি অনুসারে তাদের অপ্রদর্শিত আয় ঘোষণা করতে পারতেন। তবে, সরকারের অন্যান্য সংস্থা চাইলে এই আয়ের উত্স নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারত। ফলে খুব কম মানুষই এই সুযোগ নিতে আগ্রহী হয়েছিলেন।
যার কারণে এবার এনবিআর আইনে পরিবর্তন এনে নতুন বিধান করেছে যে, এই আয়ের উত্স সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
নতুন বিধানের আওতায় করদাতারা জমি, ভবন ও ফ্ল্যাটসহ যেকোনো অঘোষিত সম্পত্তি এলাকার ওপর নির্ভর করে প্রতি বর্গমিটারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করতে পারবেন।
করদাতারা তাদের আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত আয়ের নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো যেকোনো সম্পদের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করতে পারবে।
ব্যক্তি পর্যায়ে প্রদর্শিত আয়ের ওপর সর্বোচ্চ প্রদেয় কর ২৫ শতাংশ। সেখানে অপ্রদর্শিত আয়ের ওপর এই হার মাত্র ১০ শতাংশ।
এনবিআর কালো টাকা সাদা করার এই সুযোগ দিচ্ছে এক বছরের জন্য। ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কালো টাকার উৎস না জানিয়েই সাদা করা যাবে।
বিগত দশকগুলোতে বিভিন্ন সময়ে কালো টাকা সাদা করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে, খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়নি।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নয় হাজার ৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছিল। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছিল।
আওয়ামী লীগের আগের দুই মেয়াদে যথাক্রমে এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা এবং চার হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা সাদা করা হয়েছিল।