1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন

যেসব কারণে শেয়ারবাজারে তীব্র অস্থিরতা

  • আপডেট সময় : বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪

দেশের পুঁজিবাজারে তীব্র অস্থিরতা বিরাজ করছে। চলছে ব্যাপক রক্তক্ষরণ। অস্থিরবাজারে প্রায় প্রতিদিনই মূল্যসূচক কমছে। এরচেয়েও বেশি কমছে শেয়ারের দাম। আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের অনেকেই যে কোনো মূল্যে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে মরিয়া। তাতে বাজারে বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে দেখা দিয়েছে ক্রেতার অভাব। প্রায় প্রতিদিনই লেনদেনের এক পর্যায়ে একাধিক কোম্পানির শেয়ার ক্রেতা-শুন্য হয়ে পড়ছে।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে শুধু ব্যক্তি বিনিয়োগকারী নন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানগুলোও উদ্বিগ্ন। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমসিম খাচ্ছে।

গত এক মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজারমূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। এ সময়ে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি বড় মূলধনের কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ছিল উর্ধমুখী। এদের অবদান বাদ দিলে বাজারমূলধন হ্রাসের পরিমাণ হবে আরও অনেক বেশি।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, বেশ কিছু কারণে বাজারে এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

১৫ বছরের অপশাসনের ধারাবাহিকতাঃ

পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের গত ১৫ বছর মেয়াদে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মত পুঁজিবাজারেও অবাধ লুটতরাজ হয়েছে। এ সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে যোগসাজশ করে অসংখ্য দূর্বল ও প্রায় দেওলিয়া কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ক্রমেই কোম্পানিগুলোর আসল চেহারা প্রকাশিত হচ্ছে। অন্যদিকে এই বাজারে লাগামহীন কারসাজির মাধ্যমে দূর্বল, জাঙ্ক কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব শেয়ারে আটকে আছে অসংখ্য বিনিয়োগকারীর মূলধন। ২০১০ সালে বড় ধসের পর থেকেই পুঁজিবাজার ধুঁকছিল। সদ্য বিদায়ী শিবলী কমিশনের মেয়াদে এসে তা আরও নাজুক অবস্থায় পড়ে। শিবলী কমিশন ফ্লোরপ্রাইস আরোপসহ নানা কৃত্রিম ব্যবস্থায় বাজারের এ অবস্থা ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন ওই কৃত্রিম চেষ্টা না থাকায় ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকা অনিয়ম, দুর্নীতি, কারসাজির অনিবার্য পরিণতি এখন আগের চেয়েও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

বড় বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তাঃ

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গত ১৫ বছরে লুটেরা সরকারের সুবিধাভোগী সামরিক-বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এদের একটি অংশ আত্মগোপনে, অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।বাকীরাও লাইমলাইটের আড়ালে থাকার চেষ্টা করছে। স্বাভাবিক কারণেই এরা বাজারে নিষ্ক্রিয়। এদের কেউ কেউ তাদের বিনিয়োগ পুরোটা বা অংশবিশেষ প্রত্যাহার করেছে বা প্রত্যাহারের চেষ্টা করছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ

গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহ্ম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এই সরকারের মেয়াদ এখনো স্পষ্ট নয়। আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিয়ে এই সরকার বিদায় নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কে হবেন সরকার প্রধান, মন্ত্রীপরিষদ কেমন হতে পারে, সে সরকার কেমন অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণ করবে-তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ। ইতোমধ্যে আওয়ামীসরকার বিরোধী প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে মাঠে নামছে বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠি। তৈরি পোশাক খাতসহ শিল্পাঙ্গনে শ্রমিক আন্দোলনসহ অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। পতিত আওয়ামীলীগ ও একটি প্রতিবেশী দেশ নানাভাবে ইন্ধন দিয়ে দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে বাজারে।

ব্যাংক আমানতে সুদের হার বৃদ্ধিঃ

গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংক আমানতের সুদের হারে উর্ধগতি চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় সব ব্যাংকে সুদের হার ডাবল ডিজিট হয়ে গেছে। ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করে পাওয়া যাচ্ছে ১২ শতাংশ সুদ। মূল্রস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও কয়েক দফা নীতি নির্ধারণী সুদের হার বাড়াবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এমনটি হলে ব্যাংক আমানতের সুদের হারও বাড়বে। আমানতের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় দু’ভাবে প্রভাবিত হচ্ছে পুঁজিবাজার। ব্যাংকে আমানত রেখে এবং ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করে আকর্ষণীয় রিটার্ন পাওয়া যাওয়ায় অনেকেই পুঁজিবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গার বিনিয়োগকে পরিহার করছেন। তাতে অনেক তহবিল পুঁজিবাজার থেকে এখন ব্যাংকমুখী। একই কারণে নতুন তহবিলও তেমন আসছে না। অন্যদিকে ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ব্রোকারহাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে মার্জিন ঋণের (শেয়ার কেনার জন্য বিনীয়োগকারীকে দেওয়া ঋণ) সুদের হারও বাড়ছে। বড় বিনিয়োগকারীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে অভ্যস্ত। তহবিল ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এরা মার্জিন ঋণে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্রঃ

আওয়ামীলীগ সরকার বিদায় নিলেও বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আওয়ামীলীগ ও তার সুবিধাভোগীদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আওয়ামী দুঃশাসনে বিভিন্ন অপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এবং বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। পুঁজিবাজারও এই ষড়যন্ত্রের আওতায় আছে। কারণ অন্য যে কোনো খাতের তুলনায় এই খাতকে সহজে অস্থির করে তোলা সম্ভব।

অপরাধীদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার প্রভাবঃ

সরকার পরিবর্তনের পর দায়িত্ব নেওয়া বিএসইসির নতুন কমিশন সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে কারসাজিসহ নানা অনিয়মের কারণে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এরও প্রভাব পড়েছে বাজারে। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকে ক্ষোভ থেকে বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করছেন। নতুন করে যাতে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, সেটিও তাদের উদ্দেশ্য। বিভিন্ন সময়ে কারসাজিতে যুক্ত ছিলেন এমন বিনিয়োগকারীদের অনেকেও বাজারকে অস্থির রাখার চেষ্টা করছেন, যাতে বিএসইসি এসব বিষয় নিয়ে সামনে না আগায়।

রাশেদ মাকসুদ কমিশনের অদূরদর্শীতাঃ

রাষ্ট্রক্ষমতার বড় একটি পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিএসইসির দায়িত্ব নিয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে কমিশনার-প্রত্যেকেই পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট জায়গায় নতুন। তাদের একাডেমিক যোগ্যতা থাকলেও পুঁজিবাজার সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নেই বললেই চলে। অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে তাদের নেওয়া কিছু ভাল উদ্যোগও নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত ছিল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাতে শুরুতেই কমিশন ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্পর্কে যে ধরনের উচ্চ ধারণা থাকলে বিনিয়োগকারী ও অংশীজনদের মধ্যে আস্থা জন্ম নেয়, সেটির প্রবল ঘাটতি আছে এই কমিশনের।

এছাড়া কারসাজিকারীসহ নানা ধরণের দোষে দুষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও কমিশন অতিমাত্রায় তাড়াহুড়া করছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে। যেহেতু কমিশনের বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে এবং কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও কমিশনকে সঠিকভাবে গাইড করার মত লোকের ঘাটতি, তাই কমিশনের উচিত ছিল কিছুটা সময় নিয়ে বাজারের নানা দিক সম্পর্কে কিছুটা বাস্তব ধারণা নিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া।

অন্যদিকে অংশীজনদের সঙ্গে কমিশনের বোঝাপড়ার ঘাটতিও বাজারকে ভোগাচ্ছে। সংস্কার এবং অপরাধীদের বিচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং কাজে সাফল্যের জন্য অংশীজনদের সহযোগিতা খুবই জরুরি। কমিশনের উচিত ছিল তাদের সঙ্গে নিবিড় বৈঠক করে বাজারের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ এবং তা উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া। পাশাপাশি বাজার ও অর্থনীতির স্বার্থে তারা যে ধরনের সংস্কার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চান তার যৌক্তিকবতা তুলে ধরা। তাতে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি হতো। কিন্তু শুরুর দিকে কমিশন এ বিষয়ে মনোযোগী না হওয়ায় এবং তাদের কিছু ভুল এপ্রোচে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে, হয়েছে ভুল বোঝাবুঝি, যদিও কমিশন এখন তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে, তবে এর মধ্যেই এর নেতিবাচক কিছু প্রভাব পড়ে গেছে বাজারে।

এছাড়া ভুল সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ঘটনাও আছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণে ব্যর্থ ২৭ কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনিতে মাসের শেষ সময়ে ব্রোকারহাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে সমন্বয়ের চাপ থাকে। ওইরকম নাজুক সময়ে একসঙ্গে এতগুলো কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাজারে তীব্র প্রভাব ফেলে। তাছাড়া ক্যটাগরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে প্রকৃত দোষীদের কোনো শাস্তি হয় না; ক্ষতির শিকার হন বিনিয়োগকারীরা। এসব কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করায় বিনিয়োগকারীরা কোম্পানি সম্পর্কে আশাবাদী হয়ে শেয়ার কিনেছিলেন। তাদের আশা ছিল লভ্যাংশ পাওয়া অথবা মূলধনী মুনাফা। কিন্তু কোম্পানিগুলো ঘোষিথ লভ্যাংশ বিতরণ না করায় একদিকে তারা প্রত্যাশিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।অন্যদিকে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের কারণে তারা মূলধনী মুনাফার পরিবর্তে বড় ধরনের মুলধনী লোকসানের শিকার হয়েছেন। তারা লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা বিতরণ না করার দায় বিনিয়োগকারীদের নয়, ওই অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট ও পরিচালকমণ্ডলীর। তাই ক্যাটাগরি পরিবর্তন না করে দোষী কর্মকর্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়তো, অন্যদিকে আগামি দিনে অন্য কোম্পানির পরিচালকরাও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতো।

বিএসইসির বর্তমান কমিশনের আনাড়িপনা ও অদূরদর্শীতার নানা প্রভাব পড়ছে বাজারে। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসার কার্যকর উপায় খুঁজতে হবে কমিশনকে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ