1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

সি পার্লের শেয়ার কিনে চরম বিপাকে সিটি ব্যাংক

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিটি ব্যাংক পিএলসী ২০২৩ সালে সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের শেয়ারে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। শেয়ারটির দাম কমে যাওয়াতে সিটি ব্যাংকের বিনিয়োগ এখন ২০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে।

সিটি ব্যাংক কেন এবং কীভাবে সী পার্লের শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে, তা নিয়ে ব্যাংকটি এখন নিজেই তদন্ত শুরু করেছে। ব্যাংকটি বলছে, সী পার্লের শেয়ারে ব্যাংকটির শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। যা ব্যাংকটির শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটেছে।

তদন্তে দেখা গেছে, কক্সবাজারভিত্তিক হোটেলটি ঋণ বা বন্ড পরিশোধে খেলাপির হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। এরপরও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারে সিটি ব্যাংক কেন এত বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছে, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কারসাজির মাধ্যমে শেয়াররটির দাম যখন কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়, তখনই সিটি ব্যাংক কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছিল। এখন শেয়ারের দাম অনেক কমে গেছে। যার ফলে ব্যাংকটি শেয়ারটিতে বড় লোকসানের মুখে পড়েছে।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সিটি ব্যাংক সী পার্লের শেয়ার কিনেছিল। তখন শেয়ারটির দাম ছিল ১৮০ টাকার ওপরে। এখন শেয়ারটির দাম প্রায় চার ভাগের এক ভাগের নিচে নেমে গেছে। যার কারণে শেয়ারটিতে বিনিয়োগ করে সিটি ব্যাংকের ৮৬ টাকার বিনিয়োগ এখন ২০ কোটি টাকায় নেমে গেছে।

সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারাই চড়াও দামে সী পার্লের শেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা অভিযোগ করছেন, সী পার্লের শেয়ারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের কারণে শেয়ারটির কারসাজিকারিরা বেশি দামে ব্যাংকটির কাছে শেয়ার বিক্রির সুযোগ পেয়েছে।

প্রসঙ্গত, সী পার্লের শেয়ারের অস্বাভাবিক দর ওঠানামা খতিয়ে দেখতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসী)।

কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ও কয়েকজন ব্যক্তি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজিতে জড়িত বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

বিএসইসীর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেয়ারের দামে কারসাজির সময় সী পার্লের শেয়ার কেনা আরও কয়েকটি ব্যাংক মোটা অংকের মুনাফা করলেও কিছু লোকসানে পড়েছে।

বিএসইসি’র এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, গুজব ও কারসাজির ওপর ভিত্তি করে ২০২৩ সালে শেয়ারটির দর বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কারসাজিকারীদের কেবল সতর্কই করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে। এর আগে কয়েক বছর ধরে সী পার্লের শেয়ারের দাম ৫০ টাকার নিচে আটকে ছিল। অথচ এক বছর পর তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০৮ টাকায় পৌঁছায়।

সিটি ব্যাংকের ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সী পার্ল তাদের ৪২ লাখ শেয়ারের প্রতিটির জন্য গড়ে ২০৩ টাকা ব্যয় করেছে।

একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কোনো অবস্থাতেই ব্যাংক এই ধরনের শেয়ার কিনতে পারে না, কারণ যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয় তাতে কাউকে না কাউকে শেষ পর্যন্ত লোকসানে পড়তে হয়।

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘একটি ব্যাংক কেন তার আমানতকারীদের অর্থ দিয়ে এই শেয়ার কিনবে?’

এদিকে সী পার্লের অডিটর তাদের অডিট রিপোর্টে মতামত দিয়েছেন যে, তারা ২০২২-২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে কিছু বস্তুগত ভুল তথ্য খুঁজে পেয়েছেন।

হোটেলটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, স্বল্পমেয়াদি ঋণ, বন্ড পেমেন্ট, লিজ ফাইন্যান্স ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য পাওনা মিলিয়ে ৫৬৫ কোটি টাকার মতো ঋণের মধ্যে রয়েছে।

নিরীক্ষক তার প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কোম্পানিটির মোট ঋণ তাদের মোট ইক্যুইটির ৭১.১৮ শতাংশ।

এছাড়া ২০২০ সালের জুন থেকে বন্ডের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না কোম্পানিটি। এই কারণে এর দায় অনেক বেড়েছে বলে জানান নিরীক্ষক।

২০১৭ সালে ব্যবসা বাড়াতে ২০ শতাংশ কনভার্টিবল বন্ডের মাধ্যমে ৩২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে সী পার্ল রিসোর্ট। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) বন্ডের ইউনিটই ক্রয় করে।

কিন্তু সময়মতো সী পার্ল বন্ডের সব কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়। পরে তারা হাইকোর্টে ব্যবসায় মন্দা ও পরবর্তীতে আইসিবিকে অর্থ পরিশোধ না করতে পারার জন্য করোনা মহামারিকে দায়ী করে।

পরে সী পার্ল বন্ডের ১২০ কোটি টাকা সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরের অনুরোধ জানায়। এর প্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারিতে বিএসইসি সী পার্লকে খেলাপি হতে রক্ষা করতে এই বিষয়ে অনুমোদন দেয়।

এই ধরনের একটি কোম্পানিতে কেন বিনিয়োগ করা হলো এই ধরনের প্রশ্নের একটি লিখিত উত্তরে সিটি ব্যাংক বলেছে, সী পার্লের শেয়ার প্রতি আয় আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে ১০ গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি জানার পর এই শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এছাড়া শামীম এন্টারপ্রাইজের (প্রা.) ৩০ শতাংশ শেয়ার কেনার পরিকল্পনা করে সী পার্ল। এতে কোম্পানিটি বছরে ১৮ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা পাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

কোম্পানিটির আরও ঘোষণা করেছিল, জেম গ্লোবাল ইল্ড এলএলসী সী পার্লের শেয়ার কিনবে এবং সংশ্লিষ্ট ক্রয় চুক্তিটি বিএসইসি ও ডিএসই অনুমোদন দিয়েছিল।

সিটি ব্যাংক বলছে, ‘বিনিয়োগের সময় আমরা দেখেছিলাম, শেয়ারবাজারে সী পার্ল সবসময় লেনদেনের শীর্ষ ২০ কোম্পানির মধ্যে ছিল। এই কারণে আমরা এটিকে ওই সময়ে সবচেয়ে লিকুইড শেয়ার হিসেবে বিবেচনা করেছি।’

কিন্তু প্রায় এক বছর পার হয়ে গেলেও জেম গ্লোবাল এখন পর্যন্ত সী পার্লের শেয়ার কেনেনি।

এদিকে এই শেয়ার কেনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জুলাই সিটি ব্যাংক এই বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে।

সিটি ব্যাংক আরও জানায়, তারা স্বনামধন্য ব্রোকারেজ হাউজ ইউনাইটেড সিকিউরিটিজকে শেয়ারবাজার বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তারা এই শেয়ার কেনার পরামর্শ দেয়।

ইউনাইটেড গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড সিসীকিউরিটিজ এক লিখিত জবাবে জানায়, একটি ব্রোকারেজ হাউজ শুধু ব্রোকারেজ সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে গ্রাহকদের তথ্য গবেষণা, বিশ্লেষণ ও বাজার মনোভাব সরবরাহ করা হয়।

ইউনাইডেট সিকিউরিটিজ বলেছে, ‘সী পার্লের শেয়ার অফলোড করতে চায় এমন কোনো কারসাজির বিষয়ে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের কোনো ধারণা বা জানা ছিল না। শেয়ার কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট কমিটি নিয়েছে।’

একটি শীর্ষ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, জেম গ্লোবালের কাছে শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা কেন বাস্তবায়ন হয়নি তা বিএসইসির খতিয়ে দেখা উচিত।

এদিকে সী পার্ল বেশি লাভের পূর্বাভাস দিলেও হোটেলটির আয় আসলে কমেছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির নিট মুনাফা ৪২.৫০ শতাংশ কমে ৪৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বিএসইসির মুখপাত্র ফারহানা ফারুকী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জেম গ্লোবালের কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য কমিশন কিছু শর্ত দিয়েছিল, কোম্পানিটি তা পূরণ করেনি, তাই বিক্রি সম্পন্ন হয়নি।

তার ভাষ্য, ‘যেহেতু হোটেলটি গত এক বছরে তার শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করতে পারেনি, তাই বিক্রির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আরও একটি ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ