দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জুন ক্লোজিং কোম্পানির লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা শেষ করেছে। তালিকাভুক্ত দুই শতাধিক কোম্পানি এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়া না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ১৫৮টি কোম্পানি। এসব কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীরা পাবে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ বছর ৫৮টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীদের জন্য স্টক শেয়ার ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ক্যাশের পাশাপাশি স্টক শেয়ার দিয়েছে। আর ১০টি প্রতিষ্ঠান কোনো ক্যাশ লভ্যাংশ দেয়নি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চাপে পড়ে এই বছর ক্যাশ লভ্যাংশ দিতে বাধ্য হয়েছেন কোম্পানিগুলো।
২০১৯-২০ আর্থিক বছরের জন্য বিনিয়োগকারীরা ক্যাশ লভ্যাংশ পাচ্ছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। একইভাবে এই বছর বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছে ৫০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের স্টক শেয়ার। অর্থাৎ স্টক এবং ক্যাশ মিলে বিনিয়োগকারীরা পাবে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শেয়ারহোল্ডাররা। কারণ তাদের স্টক শেয়ারের চেয়ে ক্যাশ ডিভিডেন্ড বেশি পছন্দের। বিশেষ করে দুর্বল কোম্পানি থেকেই বেশি স্টক শেয়ার আসতে দেখা যায়। আর এসব কোম্পানির স্টক শেয়ার চান না বিনিয়োগকারীরা।
হেলাল হোসেন নামে এক প্রবীণ বিনিয়োগকারী এ বিষয়ে বলেন, বাজারে বহুজাতিক কোম্পানিসহ স্বল্প-সংখ্যাক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখান থেকে আমরা স্টক আশা করি। কিন্তু এসব কোম্পানি থেকে সাধারণত স্টক শেয়ার দেয়া হয় না। অন্যদিকে যেসব কোম্পানি থেকে স্টক আশা করা হয় না তারাই বেশি স্টক শেয়ার দিত। এ বছর নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়ে কোম্পানিগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ড বাড়িয়েছে। এটা ভালো খবর। ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেলে আমরা বেশি উপকৃত হব।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি যদি পরপর দুই বছর ক্যাশ ডিভিডেন্ড না দেয় তাহলে সেই কোম্পানির অবস্থান হবে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে। পাশাপাশি এসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যার সুবাদে এ বছর ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ার হার বেড়েছে। সম্প্রতি বিএসইসি থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
বিএসইসি কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো কোম্পানি টানা দুই বছর বিনিয়োগকারীদের ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হলে বা লোকসান করলে বা অপারেটিং ক্যাশ-ফ্লো ঋণাত্মক হলে বা এজিএম করতে ব্যর্থ হলে সেটি জেড ক্যাটেগরিভুক্ত হবে। এছাড়া কোম্পানির ব্যবসায়িক বা উৎপাদন কার্যক্রম অন্তত ছয় মাস বন্ধ থাকলে বা পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের বেশি হলেও তা এই ক্যাটেগরিতে চলে যাবে। এর বাইরে বিদ্যমান বিধান ভঙ্গ করলে কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে সেটিকে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে পাঠাতে পারবে স্টক এক্সচেঞ্জ।
অন্যদিকে কোনো কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটেগরিভুক্ত হওয়া মাত্র সেটির সব উদ্যোক্তা ও পরিচালকের শেয়ার বিক্রি, হস্তান্তর, বন্ধক প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা তালিকাভুক্ত অন্য কোনো কোম্পানির পরিচালক বা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন। এসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেবে এবং বিশেষ অডিটের ব্যবস্থা করবে। পুনর্গঠিত পর্ষদ পরবর্তী চার বছরে কোম্পানিকে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে না পারলে তালিকাচ্যুত করবে স্টক এক্সচেঞ্জ।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কিছু কোম্পানির আছে যারা বছরের পর বছর স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে। এতে তাদের শেয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে শেয়ারের চাহিদা এবং দর উভয়ই কমে যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে দুর্বল কোম্পানিগুলো এ সুবিধা গ্রহণ করে। এসব কোম্পানি থেকে স্টকের বদলে ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেলে তা বিনিয়োগকারীর জন্য ভালো। বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের কোম্পানি থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ডই প্রত্যাশা করেন।