প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজার দরপতনের ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে। কারফিউ শিথিলের মধ্যে সীমিত সময়ের লেনদেনে মূল্যসূচক ও লেনদেন উভয়ই বেড়েছে। তাতে দরপতন থেমেছে বাজারে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। যদিও বাজারে বড় দরপতন হয়েছিল।
আগের দিনের ধারাবাহিকতায় আজও লেনদেন শুরু হয় দরপতন দিয়ে। বেলা ১১টায় লেনদেন শুরুর প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪০ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। সংস্থাটির চেষ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারের পতন ঠেকাতে এগিয়ে আসে। তাতে সূচক ঘুরে দাঁড়ায়। দিন শেষে ডিএসইএক্স ৬২ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪১৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে উন্নীত হয়।
বাজার–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেনদেনের শুরুতে আজ দরপতন ঘটতে থাকলে তা ঠেকাতে এগিয়ে আসে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সংস্থাটির সক্রিয়তায় সূচক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হয়। পাশাপাশি সক্রিয় হন ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজারে দরপতন ঘটেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বুধবার লেনদেন শুরুর পর বিনিয়োগকারীসহ ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মধ্যে একধরনের আতঙ্ক ছিল। আজ তা অনেকাংশে কমে এসেছে। সে জন্য ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে। ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল না হলেও অনেক বিনিয়োগকারী ফোন করে শেয়ারের ক্রয়াদেশ দেন।
বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ যে বেড়েছে, ডিএসইর পরিসংখ্যানে তার প্রতিফলন রয়েছে। ঢাকার বাজারে আজ প্রায় ১৪ কোটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়। গতকাল বুধবার হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩৫ লাখ। সেই হিসাবে আগের দিনের চেয়ে আজ হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের সংখ্যা সোয়া তিনগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ক্রয়াদেশের সংখ্যা। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ক্রয়াদেশের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজারে। বুধবার এই সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের ক্রয়াদেশের সংখ্যাও তিনগুণের বেশি বেড়েছে।
ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৯২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আগের চেয়ে ২৮৬টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৬৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪০টির। দিন শেষে ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৯৭ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৩৮ কোটি টাকা বেশি।
আজ ডিএসইতে মূল্যসূচক ও লেনদেন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো। ডিএসইতে সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা রাখে বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, রেনাটা, স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, উত্তরা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, নাভানা ফার্মা ও ওরিয়ন ফার্মার। এ ১০ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে প্রায় ২৮ পয়েন্ট। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মধ্যে ছিল যথাক্রমে স্কয়ার ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, লাভেলো, অগ্নি সিস্টেম ও সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।