পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিকম খাতের কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেড শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি তার শেয়ারহোল্ডারদের ১৬০ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে। অর্থাৎ ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ১৬ টাকা লভ্যাংশ পাওয়া যাবে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে পর্ষদ সদস্যরা চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল’২৪-জুন’২৪) অনিরীক্ষতি আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদন করেন। আর তার ভিত্তিতেই অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র অনুসারে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬ টাকা ৩৮ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে ৮ টাকা ৮৪ পয়সা আয় হয়েছিল।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে (জানুয়ারি’২৪-জুন’২৪) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৬ টাকা ২৯ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে যা ১৪ টাকা ৬২ পয়সা।
আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ ছিল ২ টাকা ৩৪ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ৩ টাকা ৫৪ পয়সা ছিল।
কোম্পানির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রামীণফোন লিমিটেড ৪,২২০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৬ শতাংশ বেশি। নতুন ২৩ লাখ গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকের শেষে গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৫৩ লাখে। গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকের ৫৮.৩ শতাংশ অথবা ৪ কোটি ৯৭ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছেন।
গ্রামীণফোনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নীতি, ক্রমাগত জ্বালানি সম্পদের দামের সমন্বয়, ভর্তুকি হ্রাস, সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি এবং ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে চাপ গত বছরের তুলনায় আরও বেড়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো সত্ত্বেও আমরা প্রবৃদ্ধির কৌশলে মনোযোগী ছিলাম এবং টপলাইন ও ইবিআইটিডিএ-এর ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে ব্যবসায় স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছি। আমাদের মাইজিপি অ্যাপটির বর্তমান সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি, যা অ্যাপটিকে দেশের বৃহত্তম সেল্ফ-সার্ভিস অ্যাপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।“
তিনি আরও বলেন, ”এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে আমরা বিভিন্ন স্মার্ট ও অভিযোজিত কৌশল অবলম্বন করেছি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এআই-চালিত ডায়নামিক নেটওয়ার্ক অপটিমাইজেশন সিস্টেম স্থাপন, যা রিয়েল টাইম মুভমেন্টের উপর ভিত্তি করে নির্বিঘ্ন সংযোগ প্রদান করছে। গ্রামীণফোনে আমরা গ্রাহকদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এবং টেকসই ভবিষ্যত গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা কৌশলগতভাবে এমন সব প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব করছি যারা আমাদের মূল্যবোধ এবং পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসন (ইএসজি) সম্পর্কিত উদ্যোগগুলোকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে। শীর্ষ টেলিকম অপারেটর হিসেবে আমরা আমাদের উপর অর্পিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্বের প্রতি সংবেদনশীল।
গ্রামীণফোনের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) অটো রিসব্যাক বলেন, “আমরা বছরের প্রথমার্ধ শেষ করলাম। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, প্রথম প্রান্তিক ভালোভাবে পার করার পর, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও সকল ক্ষেত্রে ও বিভাগগুলোতে আমরা আমাদের অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছি। দ্বিতীয় প্রান্তিকেও এআরপিইউ ও গ্রাহক উভয় দিকেই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ইতিবাচক। দ্বিতীয় প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাবস্ক্রিপশন ও ট্র্যাফিক রেভিনিউ ৬.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগের প্রান্তিকে ছিলো ৫.২ শতাংশ। দক্ষতা ও অটোমেশনের উপর ভিত্তি করে আমরা খরচের চাপ কমিয়েছি এবং ৬০.৪% এর একটি শক্তিশালী ইবিআইটিডিএ মার্জিন অর্জনে সক্ষম হয়েছি। এই নিয়ে টানা তেরো প্রান্তিকে লক্ষণীয় আর্থিক অগ্রগতি এবং ইবিআইটিডিএ-এর ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে গ্রামীণফোন। আমি বিশেষভাবে আনন্দিত যে, ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি এবং শক্তিশালী ব্যালেন্স শীটের ফলশ্রুতিতে বোর্ড এই প্রান্তিকের জন্য শেয়ার প্রতি ১৬ টাকার অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে।“