রাষ্ট্রায়াত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চলতি অর্থবছরের জন্য নতুন বিনিয়োগ নীতি ঘোষণা করেছে।
নতুন বিনিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ি, প্রতিষ্ঠানটি এখন থেকে ঋণ খেলাপির ‘জেড’ গ্রুপের শেয়ার না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে আর কোন শেয়ার বিক্রি না করবে না, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটির এই খবরে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারে বড় পতন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ‘ডেড’ ক্যাটাগরির ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ৪৪টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ৬টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টির এবং লেনদেন হয়নি ২টির।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২-৩ বছর যাবত আইসিবির বিনিয়োগ তলানিতে নেমে গেছে। এক সময়ের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি এখন ‘দন্তহীন বাঘ’-এ পরিণত হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে এখন আর প্রতিষ্ঠানটির কোন ভূমিকাও নেই।
বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি এখন কোন রকমে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। প্রতিবছরই প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগের বড় পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
কিন্তু বছরশেষে যার সিংহভাগ বাস্তবায়ন না হওয়ার পর্যায়ে থাকে। এছাড়া, বাজার কারসাজিকারীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ভালো ভালো সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়।
এছাড়া, গত দুই-তিন বছরে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোন শেয়ার কেনার ইতিহাসও আইসিবির নেই। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার কেবল বিক্রিই করেছে।
শুধু ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার কেন, প্রতিষ্ঠানটি এখন ভালো কোম্পানির শেয়ারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কিনতে পারে না। কারণ বছরজুড়েই প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটের মুখেই থাকে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইসিবি ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার কিনবে না-এমন খবরে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারের ঢালাও পতন হয়েছে। এর পেছনে কেবল বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্বিক কারণ নিহিত। এছাড়া, অন্য কোনো যৌক্তির কারণ নেই।
তথ্য বিশ্লেষেণে দেখা যায়, ‘জেড’ ক্যাটাগরিরর শেয়ারের মধ্যে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ২৬ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর টানা দাম বেড়ে মাত্র ১০ কর্মদিবসের মাথায় ০৫ ফেব্রুয়ারি শেয়ারটির দাম ১২৪ শতাংশ বেড়ে ওঠে যায় ৫৯ টাকা ৫০ পয়সায়।
এরপর থেকেই টানা পতন। বর্তমানে শেয়ারটির দাম ২১-২২ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। যা বৃদ্ধির দাম চেয়ে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১০ কর্মদিবসের মধ্যে শেয়ারটির দাম ২৬ টাকা থেকে ৫৯ টাকায় ওঠার যেমন কোন কারণ ছিল না, তেমনি ৫৯ টাকা থেকে ২১ টাকায় নেমে আসারও কোন কারণ নেই।
এদিকে বাজারে গুঞ্জন রয়েছে, খুলনা প্রিন্টিংয়ের মালিক সাউথবাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন। তিনি সাউথ বাংলা ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা অনিয়ম করে ঋণ দিয়ে গোপনে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন।
গত জানুয়ারি মাসে আমেরিকা থেকে গোপনে তিনি দেশে আসেন। দেশে অবস্থানকালে খুলনা কোম্পানিটি বিক্রি করার বিষয়ে দেশের দুটি শিল্প গ্রুপের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। তবে চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
একটি সূত্র বলছে, উভয় গ্রুপের সাথে এখনো আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যেকোন সময়ে বিক্রির চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যেতে পারে। যার ফলে বন্ধ কোম্পানিটি পুনরায় উৎপাদনে ফিরে আসতে পারে।