রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী (আইজেএমইবি) আয়োজিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেস যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত থাকবে।
গহনায় হোক প্রযুক্তির ছোঁয়া এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে ৬ জুলাই (শনিবার)।
বাজুসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে বিশ্বের ১০টি দেশের ৩০টি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, ইতালি, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, চীন ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ।
শুক্রবার (৫ জুলাই) প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনে গিয়ে দেখা যায়, সারা দেশ থেকে জুয়ালারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা এসেছেন।
খুঁজছেন নতুন ও আধুনিক মেশিন। তাদের চাওয়া কিভাবে গহনা তৈরিতে সময় ও শ্রম কম ব্যয় করা যায়। তেমনই একজন পাবনার চাটমোহর থেকে আসা সুমিত কর্মকর। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সোনার ব্যবসার পুরো ধারাটাই পরিবর্তন করে দিতে পারে।
কাজের সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে, সময় কম লাগবে। কারিগরদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি কম হবে, পরিবেশ দূষণ কম হবে। যেমন আমাদের গহনা তৈরি করতে সোনার তারকে হাত দিয়ে টানতে হচ্ছে, বাঁকাতে হচ্ছে, ঢালাই করতে হচ্ছে। কিন্তু এখানে কিছু মেশিন আছে, যেগুলো অটোমেটিক হয়ে যাবে। যার ফলে বড় পরিসরে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
আর যখন উৎপাদন বেশি হবে, তখন খরচ কমে যাবে। সেক্ষেত্রে আবার দেশীয় কারিগররা কাজও হারাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কারিগরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে একটি গহনা বিক্রি করতে গেলে দোকানদাররা বিপদে পড়েন। সময়মতো গহনা বানিয়ে সরবরাহ করতে পারেন না। অন্যদিকে নতুন কারিগর এই খাতে আসছে না। এই যে শূন্যতা সেটা মেশিন পূরণ করতে পারবে। আমাদের এই খাতে এসিডের অনেক কাজ আছে, যেটা ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকের হাত পুড়ে যাচ্ছে। কারিগর অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে মেশিনের ব্যবহার থাকলে যা সহজেই করা যাবে।’
ভারত থেকে এসেছেন কোয়ান্টাম ইকুইপমেন্ট কম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের আঞ্চলিক প্রধান কমলেশ প্রসাদ। পোল্যান্ডের তৈরি করা বিভিন্ন মেশিন এশিয়া অঞ্চলে সরবরাহ করে তার প্রতিষ্ঠান। তিনি একটি মেশিন দেখিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মেশিনটি সোনা পরীক্ষা করে। গহনা, বার বা অন্য যেকোনো অবস্থারই সোনা হোক না কেন এই মেশিনের মধ্যে রাখলে, মেশিনটি দেখাবে কত ক্যারেটের সোনা ওটি। কতটুকু অন্য পদার্থ আছে। এখানে মনিটরে শতকরা দেখাবে। যেমন কত শতাংশ কপার, সোনা, সিলভার ও ব্রোঞ্জ আছে। যে-যে পদার্থ সোনার মধ্যে মেশানো থাকবে তা মনিটরে দেখা যাবে। যার ফলাফল কাগজে প্রিন্ট করেও বের করা যাবে।’
প্রদর্শনী সম্পর্কে বাজুসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশের কারিগররা বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ। কিন্তু এখানে একটু ঘাটতি আছে। বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের দেশে সেই সুযোগ ছিল না। এখান হাতে বানানো গহনায় মেশিনার ব্যবহার শুরু হবে তখন এটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে পৌঁছে যাব। গহনায় যদি মেশিনের ছোঁয়া না থাকে তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো না। হাতের তৈরি গহনায় যখন মেশিনের ছোঁয়া লাগবে, তখন আমাদের গহনাকে বিশ্বের মধ্যে ভিন্ন ডিজাইন ও বৈশিষ্ট্য তৈরি করবে।’
তিনি বলেন, ‘মেশিনের ব্যবহার বাড়লে আমাদের দেশীয় কারিগররা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। বর্তমানে বিয়ের একটি গহনা বানাতে দিলে আমরা ৭০-৭৫ শতাংশ কাজ আমরা মেশিনে বানিয়ে নিয়ে আসি। ডাইসগুলো মেশিনে পাঞ্চ করা। যেমন একটি চেইন যদি মেশিনে তৈরি করা হয়, তাহলে রিং, স্প্রিং হাত দিয়ে করতে হয়। সোনায় হাতের কাজ পৃথিবীতে কোনোদিনই বন্ধ হবে না। বরং মেশিনের সমন্বয়ে অনেক উন্নতমানের গহনা তৈরি করা সম্ভব হবে। কারিগরদের সুবিধা হবে, কষ্ট কমে যাবে। গহনার বুননের কাজ হাত দিয়েই করতে হবে, তারপর ফিনিশিংযের কাজ মেশিন দিয়ে করতে হবে। এতে গহনার মান ও উৎপাদন বাড়বে। খরচ কমবে। মেশিনে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সোনা নষ্ট হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখন ১২ শতাংশ সোনা নষ্ট হয়। যা অনেক বেশি। সুতরাং মেশিনের ব্যবহার করলে সোনার নষ্ট হওয়ার হার অর্ধেকেরও বেশি কমে যাবে। এতে গহনার দাম কমবে, গ্রাহকরাও কিছুটা কম দামে কিনতে পারবেন।’