ছয় মিউচুয়াল ফান্ড থেকে সাবেক পদ্মা প্রিন্টার্সে বিনিয়োগে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবাল বিদ্যমান আইন ও কমিশন আরোপিত শর্ত লঙ্ঘন করেছে। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশন সভায় এমন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এর পরও পদ্মা প্রিন্টার্সসহ এ ধরনের কোম্পানি যাতে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে পারে, তার নতুন রাস্তা তৈরি করেছে বিএসইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ১৩ জুন অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়। উল্লিখিত বিনিয়োগে এলআর গ্লোবালসহ সংশ্লিষ্টরা কোন কোন আইনি বিধান ও শর্ত লঙ্ঘন করেছে, তা সুস্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়। ওটিসি থেকে কোনো কোম্পানি এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে কিউআইও প্রক্রিয়ায় যাতে মূলধন সংগ্রহ করে আসে– এমন শর্ত আরোপের সুপারিশ করেছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। কমিশন ডিএসইর সুপারিশটি শুধু গ্রহণ করেছে।
জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগই ভালো বলতে পারবে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, এ-সংক্রান্ত সব তথ্যই কমিশনের সামনে উপস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে ওটিসি থেকে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী কোয়েস্ট বিডিসি (সাবেক পদ্মা প্রিন্টার্স), রাঙামাটি ফুড, আল-আমীন কেমিক্যাল এবং পারফিউম কেমিক্যালকে কিউআইও প্রক্রিয়ায় নতুন শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অন্তত ৩৫ শতাংশ পাবলিক শেয়ার রেখে তালিকাভুক্ত হওয়ার শর্ত যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল। কমিশন এ সুপারিশ গ্রহণ করেছে।
জানা গেছে, পদ্মা প্রিন্টার্সে (বর্তমানে কোয়েস্ট বিডিসি) এলআর গ্লোবালের ছয় ফান্ড থেকে বিনিয়োগে যে অনিয়ম হয়েছে, তার সবটাই তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করার অনুমতি দিয়েছিল বিএসইসি। তবে শর্ত ছিল– বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার এবং এলআর গ্লোবাল পরিচালিত ছয় ফান্ডের কাছে অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করতে হবে। এ শর্ত লঙ্ঘন করে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের বাইরে এলআরজি ভেঞ্চার থেকে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা এবং আরও আট ব্যক্তির কাছ থেকে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছে। কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই ১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে কোম্পানিটি।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ আরও জানায়, কোয়েস্ট বিডিসির নামে থাইরোকেয়ার বাংলাদেশের ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ৯৪২টি শেয়ার ৪২ টাকা ২৫ পয়সা প্রিমিয়ামসহ ৫২ টাকা ২৫ পয়সা দরে মোট ২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে এলআরজি ভেঞ্চার। এ বিনিয়োগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারির দেওয়া চিঠিতে যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তাও লঙ্ঘিত হয়েছে। আবার থাইরোকেয়ারের শেয়ার বিক্রি থেকে পাওয়া ২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা থেকে কোয়েস্ট বিডিসির শেয়ার কিনতে এ কোম্পানির অ্যাকাউন্টে নগদে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা গত বছরের ২৫ জুন জমা দেয় এলআরজি ভেঞ্চার। নতুন মূলধন সংগ্রহে ব্যাংকের মাধ্যমে শেয়ার মানি ডিপোজিট গ্রহণে কমিশনের বিদ্যমান আবশ্যকীয় শর্তের লঙ্ঘন।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, অধুনালুপ্ত ওটিসি থেকে কোনো কোম্পানি এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টরস ওভার বা কিউআইও প্রক্রিয়ায় ফের প্রাথমিক শেয়ার বিক্রি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাবলিক শেয়ার অন্তত ৩৫ শতাংশ থাকতে হবে। কমিশন আরও শর্ত দিয়েছে, মালিকানা বদলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে হতে হবে।
কমিশনের অনুমোদন নিয়ে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় কোনো মূলধন সংগ্রহ হলেও তা কিউআইও প্রক্রিয়ায় মূলধন সংগ্রহের আগে তার ব্যবহার করা যাবে না। কিউআইও প্রক্রিয়ার বিদ্যমান সব নিয়মই এসব কোম্পানিকে মানতে হবে।